তাশরিহা আবদুল্লাহ
আমরা সবাই ডিপ্রেশন কিংবা অন্যান্য মেন্টাল হেলথ নিয়ে কথা বলি। কথাগুলো ইয়াংস্টারদের ডিপ্রেশন, তাদের মেন্টাল হেলথ পর্যন্তই রয়ে যায়। কেউ বয়োজ্যেষ্ঠদের মেন্টাল হেলথের কথা বলি না। তারা নিজেরাও এ বিষয়ে মাথা ঘামান না। অথচ তাদেরও বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন সিচুয়েশনের কারণে সাফার করতে হয়।
৩০+ এ বেশিরভাগ মানুষই ক্যারিয়ার, বিয়েশাদী, সংসার, রেসপনসিবিলিটিস, শশুরবাড়ি নিয়ে স্ট্রাগল করে। কলেজে আমাদের সাইকোলজি ম্যাম বলতেন, ৪০+ এ এসে মানুষ একেবারে টিনেজারদের মতো সেন্সিটিভ হয়ে যায়। আরলি মেনোপজসহ হরমোনাল চেঞ্জ আসে। মুখে বলিরেখা, মেছতা পরা, চুল পেকে কিংবা পড়ে যাওয়ায় ইত্যাদি কারণে ইন্সিকিউর ফিল করেন। ৫০+ এ এসে শারীরিক অসুস্থতা, একাকিত্ব, সন্তানদের সাথে দুরত্ব, এমনকি অনেক সময় নিজের সন্তানদের সাফারিংস দেখেও তারা মানসিক কষ্টে ভোগেন। এছাড়াও না বলা অনেক কষ্টও থেকেই যায়।কিন্তু এই বড়রাই মেন্টাল হেলথের বিষয়টাকে সিরিসলি নেন না। ছেলেখেলা মনে করেন।এর পেছনেও কারণ আছে। কারণ হলো তাদের জেনারেশনের মন মানসিকতা। বয়োজ্যেষ্ঠরা, মুরুব্বিরা মেন্টাল হেলথকে মনে করেন ওসব ভ্রান্ত ধারণা। কোনো এক অদ্ভুত ভীতি/লজ্জায় হেলাফেলা করেন (আল্লাহ জানেন কেন!)।
তবে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
• পুষ্টিকর খাবার খাওয়া নিয়ে এত চিন্তা সবার! আপনি কি জানেন এই পুষ্টি কখন গায়ে লাগবে? যখন আপনি দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকবেন। নিশ্চিন্তে ঘুমাবেন, খাবেন, চলবেন।
• সব অসুস্থতার জন্য আলাদা আলাদা ডাক্তার আছেন। কিডনির জন্য নেফ্রোলজিস্ট, হার্টের জন্য কার্ডিওলজিস্ট ও হাঁড়ের জন্য অর্থপেডিক ডক্টর ইত্যাদি। জ্বর হলে মেডিসিনের ডাক্তার দেখাবেন অথচ মেন্টাল হেলথের বেলায় কাউন্সিলারকে বলবেন পাগলের ডাক্তার? (সাইকিয়াট্রিস্টের কথা তো বাদই দিলাম)। একটা গেস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট একজন গ্যাস্ট্রিক/আলসার পেশেন্টকে ট্রিট করেন, আবার বহুত ক্যান্সার পেশেন্টও ট্রিট করেন। তাই বলে কি সে ক্যান্সারের ডাক্তার?
• জানি সবসময় ফুরফুরে মেজাজে থাকাটাও সম্ভব না। আবার সবকিছুই মানসিক সমস্যার অন্তর্ভুক্ত না। কিন্তু সমস্যা হলে সমাধান তো আর এমনি এমনি আসবে না। নিজেকে নিয়ে ভাবুন, আপনার মেন্টাল হেলথ ইস্যুস আইডেন্টিফাই করতে শিখুন। প্রয়োজনে প্রফেশনাল হেল্প নিন। একা বোকা, একা একা আর কি কি ডিল করবেন? কোর্টে মামলা খেলে উকিলের কাছে যাবেন নাকি মাদ্রাসার হুজুরের কাছে? বুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তা করেন।
• সব রোগে ঔষধ লাগে না। তেমনি অনেক মেন্টাল ইস্যুও অল্প কয়েকটা কাউন্সিলিং সেশনের মাধ্যমেই কন্ট্রলে আনা যায়। আপনাকে ঔষধ নির্ভর হতে হবে না।
• একটা সার্টেইন সময়ে এসে অতিরিক্ত নিঃস্বার্থ হওয়া বাদ দিন। ছেলেমেয়ে, স্বামী স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন, চৌদ্দগোষ্ঠির চিন্তা বাদ দিন। সবাই যার যার জীবন নিয়ে আছে। আপনার সুখ শান্তির দায়িত্ব আপনার উপর। নিজের/অন্যের কোনো ক্ষতি না করে যদি নিজের খুশির জন্য কিছু করেন, এটা খারাপ কিছু না। সামান্য স্বার্থপর হন, শুধু আপনার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত/বিপদগ্রস্ত/প্রতারিত না হলেই হলো।
• অনেস্ট থাকুন। ভালোকে এপ্রিশিয়েট করুন। কিছু খারাপ লাগলে/কেউ খারাপ করলে মুখের উপর বলে দিন। দেখবেন শান্তি লাগে। নেগেটিভ মানুষজন কাট-অফ করুন, যত আপনই হোক না কেন।
• বন্ধু বানান। সবসময় ঘরের মানুষ আপনার পাশে থাকবে না। আর সবার সবসময় আপনার পাশে থাকা এক্সপেক্ট করাটাও কিছুটা টক্সিক। যে যে যার যার জীবন যুদ্ধে আছে। আপনি এমন মানুষ হন যেন মানুষ মন খুলে আপনার সাথে কথা বলে বেটার ফিল করতে পারে। আপনি এমন বন্ধু বানান যেন আপনিও কথা শেয়ার করে হালকা ফিল করেন। (দয়া করে এই বন্ধুত্বের বিষয়টা একটু পরিষ্কার মনে চিন্তা করবেন।)
• ঘুরবেন, বেড়াতে যাবেন, মেডিটেশন করবেন, অন্যের হেল্প করবেন, ইবাদত করবেন (যার যার ধর্ম অনুসারে)। বয়স হলেও নিজের শখকে গুরুত্ব দিবেন।
• আবারও বলছি, প্রফেশনাল হেল্প লাগলে প্লিজ নিবেন। নাহলে কোনোটাই কাজে দিবে না।
এবার আসি আমাদের জেনারেশনের প্রসঙ্গে। অনেকেই বলেন আমাদের জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা পরিশ্রমী না, কমিটমেন্ট রাখতে পারে না, আদব কায়দা কম ইত্যাদি ইত্যাদি। ঠিক আছে, মানলাম। তবে আমাদের জেনারেশনের ছেলেমেয়েদের মেন্টাল হেলথ নিয়ে সচেতনতা অনেক! এবং এজন্যই আমি আমার জেনারেশনটাকে অসম্ভব পছন্দ করি। আমরা সোসাইটি, রিলিজিয়াস ইস্যু, টক্সিক মানুষ ইত্যাদি কোনো কিছু্ই আমাদের মেন্টাল পিসের ক্ষেত্রে বাধা আনতে দেই না। শুধু নিজেদের ক্ষেত্রে না, আমরা অন্যর মেন্টাল পিসের প্রতিও রেসপেক্টফুল। আমরা যতই জাতে মাতাল হই না কেন, এই ব্যাপারে আমরা তালে ঠিক। তবে আমাদেরও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবেঃ
• নিজের মেন্টাল পিসের নামে অন্যের জীবন কয়লা বানানো চলবে না।
• বাবা মাকে সময় দিন। অনেকেই বলেন আমার বাবা-মার সাথে আমার জমে না। কেন জমে না? ভেবে দেখুন। (অবশ্যই ভুল কিছুতে সাপোর্ট দিতে বলছি না। তবে আপনার নিজের কোনো ভুল হলো কি না সেটাও বিবেচনা করে দেখবেন।)
• উপরে যা যা বললাম দয়া করে নিজের বাবা মা, ভাই বোন, আপনজন দের উপলব্ধি করানোর চেষ্টা করুন। মর্মান্তিকভাবে যেন কারো কাউকে হারাতে না হয়।
আমার নিজেরও বাবা মা আছে। কোনো পয়েন্ট ভালো না লাগলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনার ভিন্নমতের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। আপনার কাছ থেকেও সেটাই আশা করি।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইইউবি