১৯৪৭ সালে শুধু ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্র সৃষ্টির পরই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল তথা পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ সাত কোটি মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তখন থেকেই বাঙালির সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ওপর পাকিস্তানি জান্তাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার রক্ষার জন্য তিনি যে আন্দোলন শুরু করেন, সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে যান তিনি ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’ ঘোষণার পর। বছরের পর বছর ধরে, মাঠ-ঘাট-প্রান্তরে, সাধারণ মানুষদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করে পুরো জাতির মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলেন। যার ফলশ্রুতিতে শুরু হওয়া তীব্র গণআন্দোলন সফল পরিণতি পায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একচেটিয়াভাবে বিজয় লাভের মাধ্যমে। এই দীর্ঘ পথ অতিক্রমকালে বঙ্গবন্ধুকে যেমন জীবন বাজি ধরে সাহসী ভূমিকা রাখতে হয়েছে, তেমনি দূরদৃষ্টি দিয়ে ভবিষ্যত রাষ্ট্রের গঠন-প্রকৃতি সম্পর্কেও রূপরেখা দাঁড় করাতে হয়েছে।
পাকিস্তান আমলের প্রায় ২৪ বছর শোষণকালের অধিকাংশ সময়ই জেলে থাকতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। শোষণ-মুক্তির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে ১৯৫৬ সালে মন্ত্রিসভা থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি। জনগণকে প্রস্তুত করার একটা পর্যায়ে এসে ১৯৬৬ সালের শুরুতে ঘোষণা করেন বাঙালির মুক্তির সনদ বলে খ্যাত ‘ছয় দফা’। গ্রাম-গ্রামান্তর পর্যন্ত সোচ্চার হয়ে ওঠে ছয় দফার পক্ষে। এরকম পরিস্থিতিতে, ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর অসম সাহসী নেতৃত্বের প্রতি ভীত হয়ে, তাকে জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখার জন্য জেলে ঢোকায় পাকিস্তানের সামরিক সরকার। এরপর ১৯৬৮ সালের শুরুতে দায়ের করা হয় ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব এবং অন্যান্য’ নামের একটি মামলা (আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা)। এর কয়েকদিন পরেই, ১৯৬৬ সালের মে মাস থেকে জেলে থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি মুক্তি দিয়ে, আবারও ১৮ জানুয়ারি থেকে গ্রেফতার দেখানো হয় এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায়। অভিযোগে বলা হয়, ‘শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যরা পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন’। সোজা কথায় বলতে গেলে, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন এবং পরিচালনার জন্য বাঙালি সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু যে ধারাবাহিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছিলেন, সেটাকেই অপরাধ হিসেবে গণ্য করে বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জন ব্যক্তির নামে এই মামলা দায়ের করে সামরিক সরকার।
পরবর্তীতে প্রবল জনরোষের মুখে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার এবং সেদিনই কারাগার থেকে মুক্তি পান বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার বিমূর্ত প্রতীকে পরিণত হওয়া শেখ মুজিবুর রহমান। পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল জনসভায় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় তাকে। একটি স্বাধীন-স্ততন্ত্র বঙ্গভূমি তথা বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের জন্য সেদিনই বঙ্গবন্ধুকে সর্বোচ্চ নেতা মেনে গণরায় দেন সাত কোটি বাঙালি। পুরো জাতিকে জাতীয়তাবাদে দীক্ষিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু প্রায় দুই যুগ ধরে যে শ্রম দিয়েছেন, এই পর্যায়ে এসে জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত সেই জাতিকে দেখে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিলেন। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পদত্যাগ ও সাধারণ নির্বাচনের জন্য কঠোর অবস্থান নিলেন বঙ্গবন্ধু। তীব্র জাতীয়তাবোধে জাগ্রত বাঙালির তুমুল গণআন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের পতন হয়।
ঘটনার পরম্পরায় চূড়ান্তভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা লাভের জন্য সাত কোটি বাঙালির চরম স্পৃহা প্রকাশ পায়। এসময় একটি অবাধ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য দাবি জানান বঙ্গবন্ধু। তিনি জানতেন, একটি অবাধ নির্বাচন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেটই পারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ সুগম করতে। তাই তিনি কোনো বিচ্ছিন্নতার পথে না হেঁটে, দুই যুগ ধরে তৈরি করেছেন জনগণের মন ও মননকে। জনগণ চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত বুঝতে পেরে তিনি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের দিকে নজর দেন।
লন্ডন সফরে কৌশলী সংলাপ
১৯৭০ সালের সেই ঐতিহাসিক নির্বাচনের আগে এক অগ্নিগর্ভ সময়ে কয়েকদিনের জন্য ব্রিটেন সফরে যান বঙ্গবন্ধু। লন্ডনে তার সাক্ষাৎকার নিতে উপস্থিত হন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি’র সাংবাদিক …। তিনি সফরের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু এক মুহূর্ত নীরব থেকে সংক্ষেপে বলেন, ‘বেড়াতে’ এসেছি। সেসময় আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দিয়ে বাঙালি জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার কথা স্পষ্টভাবে জানান তিনি। তবে কৌশলগত কারণে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি।
কিন্তু তিনি লন্ডনে প্রবাসী বাঙালি ও ব্রিটেন সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যস্ত থাকার মধ্যেই দেশের আপামর জনতার ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গুলি বর্ষণের খবর পান। এরপর সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশের ফ্লাইট ধরেন বঙ্গবন্ধু।
জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ জাতিকে নিয়ে নির্ভার ছিলেন বঙ্গবন্ধু
দেশে ফেরার আগে আরও একবার তার সাক্ষাৎকার নেয় বিবিসি। সেসময় তিনি একটি জাতিরাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তির স্বরেই কথা বলেন বিবিসির সঙ্গে। অনেক বছর ধরে জাতীয়তাবাদে দীক্ষিত করে তোলা বাঙালি জাতি যে নির্বাচনের মাধ্যমে একটা গণরায় দেবে, সেই আত্মবিশ্বাস ভেসে ওঠে তার কণ্ঠে। তিনি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই শাসনতন্ত্র রচনার কথা বলেন। দুর্লভ এই সাক্ষাৎকারে বিবিসির মাধ্যমে তিনি প্রায় এক লাখ প্রবাসী বাঙালির প্রতি শুভকামনা জানান এবং বিপদে-আপদে পরস্পরের পাশে থাকার কথা বলে দেশে ফিরে আসেন। আবেগঘন কন্ঠে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘নিঃস্ব আমি/ রিক্ত আমি/ দেবার কিছু নাই// আছে শুধু ভালোবাসা/ দিলাম শুধু তাই।’
বঙ্গবন্ধু লন্ডনে যাওয়ার পর বিবিসির সাংবাদিক সেরাজুর রহমান যখন জানতে চান, ‘মুজিব ভাই শুরুতেই আপনি আমাদের বলবেন কী, আপনি কী উদ্দেশ্যে এবার লন্ডনে এসেছেন?’ একটু থেমে সময় নিয়ে এর উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘লন্ডনে এসেছি.. বেড়াতে।’ এরপর বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘পাকিস্তানের জনসাধারণ এবং বিশেষ করে পূর্ব বাংলার লোকজন যারা এখানে আছেন, আমি যখন পাকিস্তানের কারাগারে ছিলাম এবং যখন আইয়ুব রেজিম দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিল, তখন তারা যে আন্দোলন করেছে। বিশেষ করে আমি যখন (আগরতলা) ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ছিলাম, তখন এখান থেকে তারা চেষ্টা করে টমাস উইলিয়াম, যিনি ছিলেন একজন ব্যারিস্টার, তাকে পাঠিয়েছিলেন আমাকে ডিফেন্ড করার জন্য। অনেকেই কষ্ট সহ্য করেছেন, অর্থ ব্যয় করেছেন। আমার কর্তব্য ছিল জেল থেকে বের হয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করা। সেই উদ্দেশ্যেই আমি আমার দেশবাসী ভাইরা, যারা এখানে আছেন, তাদের দেখার জন্য এসেছি।’
দেখাশোনার বাইরে আর কোনও উদ্দেশ্য আছি কিনা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিককে বলেন, ‘আর কোনো উদ্দেশ্যই নাই। আমার শরীর ভালো। দীর্ঘদিন জেলে রেখেও আমার শরীর খারাপ করতে পারে নাই আইয়ুব খান সরকার।’
এক বছরের মধ্যে নির্বাচনের (সত্তরের নির্বাচন) কথা চলছে, এমন পরিস্থিতে বঙ্গবন্ধুর দেশে থাকাটাই উচিত ছিল কিনা সেই প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন জেলে ছিলাম। আমার কাজ থেমে থাকে না।’
এই নির্বাচন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর মতামত তথা নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কিনা সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘নির্বাচন হলে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়াই প্রয়োজন। নির্বাচন আমরা চাই। ২২ বছর পাকিস্তান হয়েছে। কোনো সাধারণ নির্বাচন হয় নাই। এমন কোনো শাসনতন্ত্র হয় নাই, জনগণ যা গ্রহণ করতে পারে। সেজন্যই এখন নির্বাচন হওয়া দরকার। জনগণের প্রতিনিধিরা যাতে এই শাসনতন্ত্র তৈরি করতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই নির্বাচন হওয়া দরকার।’
কথা প্রসঙ্গে বিবিসির এই সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে মনে করিয়ে দেন যে, আগস্ট (১৯৬৯) মাসে ঢাকায় তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথা হয়েছিল। সেসময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে, ‘নির্বাচনের জন্য শাসনতন্ত্রর প্রয়োজন নাই, নির্বাচন হলে জনগণের প্রতিনিধিরাই শাসনতন্ত্র তৈরি করতে পারে।’ তবে এ বিষয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন দল বিভিন্ন মত দিয়েছে।
এরকম একটা অবস্থায় নির্বাচন হলে সেটি কেমন হতে পারে সেই বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এখানে অনেক কথার আলোচনা করতে হয়, এখন অতোকিছু আলোচনা করতে পারছি না। ইউ নো মাই ভিউ পয়েন্ট; আমি কী চাই, কী চাই না। কোনো ব্যক্তির ক্ষমতা নাই শাসনতন্ত্র দেওয়ার। জনসাধারণের প্রতিনিধিরই এই ক্ষমতা রয়েছে, তারাই শাসনতন্ত্র দিতে পারে। এবং জনসাধারণের ইলেকশন হওয়ার পরে, যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, জনসাধারণের প্রতিনিধিরাই একটা শাসনতন্ত্র তৈরি করতে পারে এবং সেই শাসনতন্ত্র জনগণ গ্রহণ করবে। আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। মেজরিটির অপিনিয়ন যেটা হবে সেটা মেনে নিতে রাজি আছি। আমার কোনো ব্যক্তিগত ক্ষমতা নাই। আমি কাকে রেপ্রিজেন্ট করি? আমি তো নিজেকে লিডার বলতে পারি না, যে পর্যন্ত না আই হ্যাভ লিগ্যাল অ্যান্ড মরাল রাইট টু সে: আই অ্যাম রিপ্রেজেন্টেটিভ অব দ্যা পিপল। ইলেকশন যখন হবে, ইলেকশনের পরে বোঝা যাবে কোন পার্টি মেজরিটি পেয়েছে, তারাই একমাত্র শাসনতন্ত্র দিতে পারে। কারণ আমরা ২২ বছর ধরে এক্সপেরিমেন্ট করেছি, ভবিষ্যতে আর যেনো কোনো এক্সপেরিমেন্ট না হয় সেদিকে আমাদের নজর দেওয়া দরকার। এতে আমাদের অনেক রক্ত দিতে হয়েছে, অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, আমাদের হাজার হাজার ছেলেকে কারাবরণ করতে হয়েছে। এভাবে বারবার ১২ কোটি লোকের দেশকে নিয়ে খেলতে দিতে পারি না।’
এরপর নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে অবতারণা করলে সাংবাদিকের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি ক্লেইম করছি, নির্বাচন যতো তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল।’
এরপর সাংবাদিক আবারও কথা বলার চেষ্টা করলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশ্বাস করি, যখন ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট (ভারতবর্ষ ছেড়ে) চলে আসে, তখন ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট ইন্দো-পাকিস্তান সাব-কন্টিনেন্টে ইলেকশন দিয়েছিল। আমার মনে হয়, ইচ্ছা করলে ছয় মাসের মধ্যে যে কোনো সরকার নির্বাচন দিতে পারে।’ জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।’
নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে কোনো অসহযোগিতা বা সমস্যা বোধ করছেন কিনা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ডোন্ট আস্ক মি দিস কোশ্চেন নাউ।’ এরপর নির্বাচনের পূর্ববর্তী আরও কিছু প্রস্তুতি ও বিভিন্ন প্রস্তাবনার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে হার্দিক কণ্ঠে সেসব বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান বঙ্গবন্ধু।
এই সফরে বেশ কয়েকদিন লন্ডনের থাকার পরিকল্পনা ছিল বঙ্গবন্ধুর। এছাড়াও ম্যানচেস্টার সিটিসহ আরও কয়েকটি শহরে জনসভাও করার কথা ছিল তার। কিন্তু দেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠায় সফর সংক্ষিপ্ত করেন বঙ্গবন্ধু। দেশে ফেরার আগে বিবিসির সাংবাদিক আবারও উপস্থির হন বঙ্গবন্ধুর কাছে।
সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশে ফেরার কারণ জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি খবর পেলাম, দেশে বিশেষ করে ঢাকাতে গোলমাল হয়েছে। সেখানে কার্ফ্যু ইম্পোজ করা হয়েছে। গভর্নমেন্টে রিপোর্ট যেটা বের হয়েছে, সেই অনুযায়ী সাত জন লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে। অ্যাবাউট হান্ড্রেড ইনজিউরড। কতো লোক যে গ্রেফতার হয়েছে, জানি না। আমি কিছুই ঠিকমতো জানতে পারছি না বলেই আমার প্রোগ্রাম সংক্ষিপ্ত করেছি। কিছুদিন এখানে থাকার ইচ্ছা ছিল। বিশেষ করে ম্যানচেস্টারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে জনসভা করার কথা ছিল। এখন সেগুলো ক্যান্সেল করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঢাকা ফিরতে হচ্ছে। কারণ যখন দেশের মধ্যে গোলমাল হচ্ছে, তখন বিদেশে আমি বেড়াতে পারি না। দেশের জনসাধারণের জন্য আমার কর্তব্য আছে।’
ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগের আগে দেশবাসীকে শান্ত থাকার বার্তা দিয়েছেন বলেও বিবিসিকে জানান বঙ্গবন্ধু। বিবিসির মাধ্যমে দেশবাসীকে কিছু বলার আহ্বান জানালে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি বলে দিয়েছি তো। শান্তি বজায় রাখতে। একথা বলেছি।’
যেনো কথা বলছেন কোনো স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান…
জেল থেকে বের হয়ে আবারও কর্মব্যস্ত রাজনৈতিক জীবনের মধ্যে লন্ডন সফরটি ভালো লেগেছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যারা আমার দেশের লোক এখানে (লন্ডনে) আছে, বিশেষ করে পূর্ব বাংলারই এক লক্ষ লোক রয়েছে, পাকিস্তানেরও যথেষ্ট লোক রয়েছে। বিশেষ করে আমি যখন জেলে ছিলাম, লন্ডনের প্রবাসী ভাইরা অনেক অর্থ তুলেছেন, আমাকে সাহায্য করেছেন। এমনকি এখান থেকে তারা আমার সাহায্যের জন্য একজন আইনজীবী পাঠিয়েছেন, তিনি একজন পার্লামেন্টারি মেম্বার, যাকে আমি জানি ও চিনি, বড় ভালো লোক মনে হলো, টমাস উইলিয়াম এমপি অ্যান্ড কিউসি, তাকে তারা এখান থেকে পাঠিয়েছিলেন। সেজন্য আমার কর্তব্য ছিল তাদের একবার দেখা। তাদের সঙ্গে দেখা করলাম। আলাপ আলোচনা করলাম। তাদের সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে আমারও কিছু কর্তব্য আছে, সেটাও আমি জানার চেষ্টা করলাম। তারা যেসব বিষয়ে অসুবিধা বোধ করছেন, সেসব বিষয়ে চেষ্টা করলাম ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। এবং তাদের (ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট) কাছ থেকে আমি ভরসা পেয়েছি যে, আমার লোকেরা যারা এখানে আছে তারা অন্তত জাস্টিস পাবে।’
প্রবাসীদের সঙ্গে দেখা করার পর তাদের অবস্থা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘দেখুন, পেটের দায়ে মানুষ বিদেশে আছে। বিশেষ করে, আমার দেশের যে অবস্থা সেকারণেই তারা বিদেশে এসেছে, তারা কাজ করে খায়, তারা উপার্জন করে। দেশ ত্যাগ করে বিদেশে আসতে কেউ সহজে চায় না। তারা এখানে আছে অর্থ উপার্জন করে ছেলে-মেয়ে-সংসার ভালো করার জন্য। তবুও… তারা যতটুকু আছে, তারা অখুশি নয়। তবে কিছু কিছু যে নির্যাতন হয় না, তা নয়। সে সম্পর্কে আমি বলেছি। বার্মংহামের মিটিংয়ে একথা উঠেছিল। সেখানে আমি বলেছি, আমি আশা করি ব্রিটিশ পিপলের যে সিভিলাইজড ট্রেডিশান আছে, তারা যেনো আমার লোকেদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। এবং তারা তা নিশ্চই তা করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’
ব্রিটেনে অবস্থানরত সব পাকিস্তানি (তৎকালীন অখণ্ড পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের) নাগরিকের ব্রিটিশ নিয়ম ও সংষ্কৃতি মেনে চলার উচিত কিনা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তারা এখানে এদেশের নাগরিকের মতোই আছেন। তারা এদেশের আইনকানুন মেনে চলবেন এবং চলেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এ সম্বন্ধে আমার কোনো সন্দেহ নাই।’
লন্ডনে অবস্থানরত বাঙালিদের সঙ্গে দেখা হওয়া কারণে সফরটা সফল হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বঙ্গবন্ধু। যাদের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি, তাদের উদ্দেশে প্রীতি ও ভালোবাসা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি এটুকুই বলতে পারি। তারা যেমন দেশের জনসাধারণের দুর্দিনে কাঁদে, তাদের যদি দুঃসময় আসে দেশের জনগণও কাঁদবে এবং কাধে কাধ মিলিয়ে দেশের জন্য কাজ করবে।’
অন্তঃহীন দূরদর্শিতা …
নির্বাচনের ফলাফল কী হবে এবং এরপর পাকিস্তানি শোষকরা কী করতে পারে; দূরদৃষ্টি দিয়ে সেই ব্যাপারটি আঁচ করতে পেরে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়ে নিজে ব্রিটেনে গিয়ে প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে এক সম্প্রীতির বাঁধন গড়ে তুলে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। পরবর্তীতে তার বিশ্বাস যেমন সত্য হয়েছে, জনগণ তাকে একচেটিয়াভাবে ম্যান্ডেট দিয়ে নেতা ঘোষণা করেছেন। তেমনি তার আশঙ্কাও মিলে গেছে, অবাধ ভোটে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় লাভের পরও পাকিস্তানি সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালিদের ওপর নাশকতা চালানো শুরু করে। এরপর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে ঘরে ঘরে দুর্গ তোলার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু, এরপর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে হানাদার বাহিনী আগ্রসনের পরিকল্পনা বুঝতে পেরে সরাসরি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তিনি। এরপর পাকিস্তানি বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলেও তার নামেই জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে সক্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় হয়ে ওঠেন প্রবাসীরা। বিশ্ববাসীর সজাগ দৃষ্টি পড়ে বাংলাদেশের দিকে। বাকিটা আমরা সবাই জানি, আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর একজীবনের সাধনা ও তার প্রতি বাঙালি জাতির অগাধ বিশ্বাস ও আস্থার ফল।
পরিশেষে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় অর্জনের পর বিশ্বনেতাদের চাপের মুখে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে ছাড়া পান বঙ্গবন্ধু। সদ্য স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দেশে ফেরার পথে তিনি যখন লন্ডনে অবতরণ করেন; তখন নিজের অবকাশ বাতিল করে, সব রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভেঙে সরাসরি হোটেলে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথ। এরপর ১০ জানুয়ারি ভারত হয়ে দেশে স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে ভারতে যাত্রাবিরতি করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে যত দ্রুত সম্ভব মিত্রবাহিনীর ভারতীয় সেনাদের বাংলাদেশ ত্যাগ করার প্রতিশ্রুতি নেন। এরপর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে দেশের মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু।
পাকিস্তান আমলের প্রায় ২৪ বছর শোষণকালের অধিকাংশ সময়ই জেলে থাকতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। শোষণ-মুক্তির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে ১৯৫৬ সালে মন্ত্রিসভা থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি। জনগণকে প্রস্তুত করার একটা পর্যায়ে এসে ১৯৬৬ সালের শুরুতে ঘোষণা করেন বাঙালির মুক্তির সনদ বলে খ্যাত ‘ছয় দফা’। গ্রাম-গ্রামান্তর পর্যন্ত সোচ্চার হয়ে ওঠে ছয় দফার পক্ষে। এরকম পরিস্থিতিতে, ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর অসম সাহসী নেতৃত্বের প্রতি ভীত হয়ে, তাকে জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখার জন্য জেলে ঢোকায় পাকিস্তানের সামরিক সরকার। এরপর ১৯৬৮ সালের শুরুতে দায়ের করা হয় ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব এবং অন্যান্য’ নামের একটি মামলা (আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা)। এর কয়েকদিন পরেই, ১৯৬৬ সালের মে মাস থেকে জেলে থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি মুক্তি দিয়ে, আবারও ১৮ জানুয়ারি থেকে গ্রেফতার দেখানো হয় এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায়। অভিযোগে বলা হয়, ‘শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যরা পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন’। সোজা কথায় বলতে গেলে, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন এবং পরিচালনার জন্য বাঙালি সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু যে ধারাবাহিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছিলেন, সেটাকেই অপরাধ হিসেবে গণ্য করে বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জন ব্যক্তির নামে এই মামলা দায়ের করে সামরিক সরকার।
পরবর্তীতে প্রবল জনরোষের মুখে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার এবং সেদিনই কারাগার থেকে মুক্তি পান বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার বিমূর্ত প্রতীকে পরিণত হওয়া শেখ মুজিবুর রহমান। পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল জনসভায় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় তাকে। একটি স্বাধীন-স্ততন্ত্র বঙ্গভূমি তথা বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের জন্য সেদিনই বঙ্গবন্ধুকে সর্বোচ্চ নেতা মেনে গণরায় দেন সাত কোটি বাঙালি। পুরো জাতিকে জাতীয়তাবাদে দীক্ষিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু প্রায় দুই যুগ ধরে যে শ্রম দিয়েছেন, এই পর্যায়ে এসে জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত সেই জাতিকে দেখে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিলেন। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পদত্যাগ ও সাধারণ নির্বাচনের জন্য কঠোর অবস্থান নিলেন বঙ্গবন্ধু। তীব্র জাতীয়তাবোধে জাগ্রত বাঙালির তুমুল গণআন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের পতন হয়।
ঘটনার পরম্পরায় চূড়ান্তভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা লাভের জন্য সাত কোটি বাঙালির চরম স্পৃহা প্রকাশ পায়। এসময় একটি অবাধ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য দাবি জানান বঙ্গবন্ধু। তিনি জানতেন, একটি অবাধ নির্বাচন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেটই পারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ সুগম করতে। তাই তিনি কোনো বিচ্ছিন্নতার পথে না হেঁটে, দুই যুগ ধরে তৈরি করেছেন জনগণের মন ও মননকে। জনগণ চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত বুঝতে পেরে তিনি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের দিকে নজর দেন।
লন্ডন সফরে কৌশলী সংলাপ
১৯৭০ সালের সেই ঐতিহাসিক নির্বাচনের আগে এক অগ্নিগর্ভ সময়ে কয়েকদিনের জন্য ব্রিটেন সফরে যান বঙ্গবন্ধু। লন্ডনে তার সাক্ষাৎকার নিতে উপস্থিত হন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি’র সাংবাদিক …। তিনি সফরের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু এক মুহূর্ত নীরব থেকে সংক্ষেপে বলেন, ‘বেড়াতে’ এসেছি। সেসময় আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দিয়ে বাঙালি জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার কথা স্পষ্টভাবে জানান তিনি। তবে কৌশলগত কারণে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি।
কিন্তু তিনি লন্ডনে প্রবাসী বাঙালি ও ব্রিটেন সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যস্ত থাকার মধ্যেই দেশের আপামর জনতার ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গুলি বর্ষণের খবর পান। এরপর সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশের ফ্লাইট ধরেন বঙ্গবন্ধু।
জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ জাতিকে নিয়ে নির্ভার ছিলেন বঙ্গবন্ধু
দেশে ফেরার আগে আরও একবার তার সাক্ষাৎকার নেয় বিবিসি। সেসময় তিনি একটি জাতিরাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তির স্বরেই কথা বলেন বিবিসির সঙ্গে। অনেক বছর ধরে জাতীয়তাবাদে দীক্ষিত করে তোলা বাঙালি জাতি যে নির্বাচনের মাধ্যমে একটা গণরায় দেবে, সেই আত্মবিশ্বাস ভেসে ওঠে তার কণ্ঠে। তিনি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই শাসনতন্ত্র রচনার কথা বলেন। দুর্লভ এই সাক্ষাৎকারে বিবিসির মাধ্যমে তিনি প্রায় এক লাখ প্রবাসী বাঙালির প্রতি শুভকামনা জানান এবং বিপদে-আপদে পরস্পরের পাশে থাকার কথা বলে দেশে ফিরে আসেন। আবেগঘন কন্ঠে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘নিঃস্ব আমি/ রিক্ত আমি/ দেবার কিছু নাই// আছে শুধু ভালোবাসা/ দিলাম শুধু তাই।’
বঙ্গবন্ধু লন্ডনে যাওয়ার পর বিবিসির সাংবাদিক সেরাজুর রহমান যখন জানতে চান, ‘মুজিব ভাই শুরুতেই আপনি আমাদের বলবেন কী, আপনি কী উদ্দেশ্যে এবার লন্ডনে এসেছেন?’ একটু থেমে সময় নিয়ে এর উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘লন্ডনে এসেছি.. বেড়াতে।’ এরপর বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘পাকিস্তানের জনসাধারণ এবং বিশেষ করে পূর্ব বাংলার লোকজন যারা এখানে আছেন, আমি যখন পাকিস্তানের কারাগারে ছিলাম এবং যখন আইয়ুব রেজিম দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিল, তখন তারা যে আন্দোলন করেছে। বিশেষ করে আমি যখন (আগরতলা) ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ছিলাম, তখন এখান থেকে তারা চেষ্টা করে টমাস উইলিয়াম, যিনি ছিলেন একজন ব্যারিস্টার, তাকে পাঠিয়েছিলেন আমাকে ডিফেন্ড করার জন্য। অনেকেই কষ্ট সহ্য করেছেন, অর্থ ব্যয় করেছেন। আমার কর্তব্য ছিল জেল থেকে বের হয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করা। সেই উদ্দেশ্যেই আমি আমার দেশবাসী ভাইরা, যারা এখানে আছেন, তাদের দেখার জন্য এসেছি।’
দেখাশোনার বাইরে আর কোনও উদ্দেশ্য আছি কিনা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিককে বলেন, ‘আর কোনো উদ্দেশ্যই নাই। আমার শরীর ভালো। দীর্ঘদিন জেলে রেখেও আমার শরীর খারাপ করতে পারে নাই আইয়ুব খান সরকার।’
এক বছরের মধ্যে নির্বাচনের (সত্তরের নির্বাচন) কথা চলছে, এমন পরিস্থিতে বঙ্গবন্ধুর দেশে থাকাটাই উচিত ছিল কিনা সেই প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন জেলে ছিলাম। আমার কাজ থেমে থাকে না।’
এই নির্বাচন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর মতামত তথা নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কিনা সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘নির্বাচন হলে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়াই প্রয়োজন। নির্বাচন আমরা চাই। ২২ বছর পাকিস্তান হয়েছে। কোনো সাধারণ নির্বাচন হয় নাই। এমন কোনো শাসনতন্ত্র হয় নাই, জনগণ যা গ্রহণ করতে পারে। সেজন্যই এখন নির্বাচন হওয়া দরকার। জনগণের প্রতিনিধিরা যাতে এই শাসনতন্ত্র তৈরি করতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই নির্বাচন হওয়া দরকার।’
কথা প্রসঙ্গে বিবিসির এই সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে মনে করিয়ে দেন যে, আগস্ট (১৯৬৯) মাসে ঢাকায় তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথা হয়েছিল। সেসময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে, ‘নির্বাচনের জন্য শাসনতন্ত্রর প্রয়োজন নাই, নির্বাচন হলে জনগণের প্রতিনিধিরাই শাসনতন্ত্র তৈরি করতে পারে।’ তবে এ বিষয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন দল বিভিন্ন মত দিয়েছে।
এরকম একটা অবস্থায় নির্বাচন হলে সেটি কেমন হতে পারে সেই বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এখানে অনেক কথার আলোচনা করতে হয়, এখন অতোকিছু আলোচনা করতে পারছি না। ইউ নো মাই ভিউ পয়েন্ট; আমি কী চাই, কী চাই না। কোনো ব্যক্তির ক্ষমতা নাই শাসনতন্ত্র দেওয়ার। জনসাধারণের প্রতিনিধিরই এই ক্ষমতা রয়েছে, তারাই শাসনতন্ত্র দিতে পারে। এবং জনসাধারণের ইলেকশন হওয়ার পরে, যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, জনসাধারণের প্রতিনিধিরাই একটা শাসনতন্ত্র তৈরি করতে পারে এবং সেই শাসনতন্ত্র জনগণ গ্রহণ করবে। আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। মেজরিটির অপিনিয়ন যেটা হবে সেটা মেনে নিতে রাজি আছি। আমার কোনো ব্যক্তিগত ক্ষমতা নাই। আমি কাকে রেপ্রিজেন্ট করি? আমি তো নিজেকে লিডার বলতে পারি না, যে পর্যন্ত না আই হ্যাভ লিগ্যাল অ্যান্ড মরাল রাইট টু সে: আই অ্যাম রিপ্রেজেন্টেটিভ অব দ্যা পিপল। ইলেকশন যখন হবে, ইলেকশনের পরে বোঝা যাবে কোন পার্টি মেজরিটি পেয়েছে, তারাই একমাত্র শাসনতন্ত্র দিতে পারে। কারণ আমরা ২২ বছর ধরে এক্সপেরিমেন্ট করেছি, ভবিষ্যতে আর যেনো কোনো এক্সপেরিমেন্ট না হয় সেদিকে আমাদের নজর দেওয়া দরকার। এতে আমাদের অনেক রক্ত দিতে হয়েছে, অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, আমাদের হাজার হাজার ছেলেকে কারাবরণ করতে হয়েছে। এভাবে বারবার ১২ কোটি লোকের দেশকে নিয়ে খেলতে দিতে পারি না।’
এরপর নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে অবতারণা করলে সাংবাদিকের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি ক্লেইম করছি, নির্বাচন যতো তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল।’
এরপর সাংবাদিক আবারও কথা বলার চেষ্টা করলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশ্বাস করি, যখন ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট (ভারতবর্ষ ছেড়ে) চলে আসে, তখন ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট ইন্দো-পাকিস্তান সাব-কন্টিনেন্টে ইলেকশন দিয়েছিল। আমার মনে হয়, ইচ্ছা করলে ছয় মাসের মধ্যে যে কোনো সরকার নির্বাচন দিতে পারে।’ জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।’
নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে কোনো অসহযোগিতা বা সমস্যা বোধ করছেন কিনা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ডোন্ট আস্ক মি দিস কোশ্চেন নাউ।’ এরপর নির্বাচনের পূর্ববর্তী আরও কিছু প্রস্তুতি ও বিভিন্ন প্রস্তাবনার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে হার্দিক কণ্ঠে সেসব বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান বঙ্গবন্ধু।
এই সফরে বেশ কয়েকদিন লন্ডনের থাকার পরিকল্পনা ছিল বঙ্গবন্ধুর। এছাড়াও ম্যানচেস্টার সিটিসহ আরও কয়েকটি শহরে জনসভাও করার কথা ছিল তার। কিন্তু দেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠায় সফর সংক্ষিপ্ত করেন বঙ্গবন্ধু। দেশে ফেরার আগে বিবিসির সাংবাদিক আবারও উপস্থির হন বঙ্গবন্ধুর কাছে।
সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশে ফেরার কারণ জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি খবর পেলাম, দেশে বিশেষ করে ঢাকাতে গোলমাল হয়েছে। সেখানে কার্ফ্যু ইম্পোজ করা হয়েছে। গভর্নমেন্টে রিপোর্ট যেটা বের হয়েছে, সেই অনুযায়ী সাত জন লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে। অ্যাবাউট হান্ড্রেড ইনজিউরড। কতো লোক যে গ্রেফতার হয়েছে, জানি না। আমি কিছুই ঠিকমতো জানতে পারছি না বলেই আমার প্রোগ্রাম সংক্ষিপ্ত করেছি। কিছুদিন এখানে থাকার ইচ্ছা ছিল। বিশেষ করে ম্যানচেস্টারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে জনসভা করার কথা ছিল। এখন সেগুলো ক্যান্সেল করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঢাকা ফিরতে হচ্ছে। কারণ যখন দেশের মধ্যে গোলমাল হচ্ছে, তখন বিদেশে আমি বেড়াতে পারি না। দেশের জনসাধারণের জন্য আমার কর্তব্য আছে।’
ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগের আগে দেশবাসীকে শান্ত থাকার বার্তা দিয়েছেন বলেও বিবিসিকে জানান বঙ্গবন্ধু। বিবিসির মাধ্যমে দেশবাসীকে কিছু বলার আহ্বান জানালে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি বলে দিয়েছি তো। শান্তি বজায় রাখতে। একথা বলেছি।’
যেনো কথা বলছেন কোনো স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান…
জেল থেকে বের হয়ে আবারও কর্মব্যস্ত রাজনৈতিক জীবনের মধ্যে লন্ডন সফরটি ভালো লেগেছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যারা আমার দেশের লোক এখানে (লন্ডনে) আছে, বিশেষ করে পূর্ব বাংলারই এক লক্ষ লোক রয়েছে, পাকিস্তানেরও যথেষ্ট লোক রয়েছে। বিশেষ করে আমি যখন জেলে ছিলাম, লন্ডনের প্রবাসী ভাইরা অনেক অর্থ তুলেছেন, আমাকে সাহায্য করেছেন। এমনকি এখান থেকে তারা আমার সাহায্যের জন্য একজন আইনজীবী পাঠিয়েছেন, তিনি একজন পার্লামেন্টারি মেম্বার, যাকে আমি জানি ও চিনি, বড় ভালো লোক মনে হলো, টমাস উইলিয়াম এমপি অ্যান্ড কিউসি, তাকে তারা এখান থেকে পাঠিয়েছিলেন। সেজন্য আমার কর্তব্য ছিল তাদের একবার দেখা। তাদের সঙ্গে দেখা করলাম। আলাপ আলোচনা করলাম। তাদের সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে আমারও কিছু কর্তব্য আছে, সেটাও আমি জানার চেষ্টা করলাম। তারা যেসব বিষয়ে অসুবিধা বোধ করছেন, সেসব বিষয়ে চেষ্টা করলাম ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। এবং তাদের (ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট) কাছ থেকে আমি ভরসা পেয়েছি যে, আমার লোকেরা যারা এখানে আছে তারা অন্তত জাস্টিস পাবে।’
প্রবাসীদের সঙ্গে দেখা করার পর তাদের অবস্থা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘দেখুন, পেটের দায়ে মানুষ বিদেশে আছে। বিশেষ করে, আমার দেশের যে অবস্থা সেকারণেই তারা বিদেশে এসেছে, তারা কাজ করে খায়, তারা উপার্জন করে। দেশ ত্যাগ করে বিদেশে আসতে কেউ সহজে চায় না। তারা এখানে আছে অর্থ উপার্জন করে ছেলে-মেয়ে-সংসার ভালো করার জন্য। তবুও… তারা যতটুকু আছে, তারা অখুশি নয়। তবে কিছু কিছু যে নির্যাতন হয় না, তা নয়। সে সম্পর্কে আমি বলেছি। বার্মংহামের মিটিংয়ে একথা উঠেছিল। সেখানে আমি বলেছি, আমি আশা করি ব্রিটিশ পিপলের যে সিভিলাইজড ট্রেডিশান আছে, তারা যেনো আমার লোকেদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। এবং তারা তা নিশ্চই তা করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’
ব্রিটেনে অবস্থানরত সব পাকিস্তানি (তৎকালীন অখণ্ড পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের) নাগরিকের ব্রিটিশ নিয়ম ও সংষ্কৃতি মেনে চলার উচিত কিনা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তারা এখানে এদেশের নাগরিকের মতোই আছেন। তারা এদেশের আইনকানুন মেনে চলবেন এবং চলেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এ সম্বন্ধে আমার কোনো সন্দেহ নাই।’
লন্ডনে অবস্থানরত বাঙালিদের সঙ্গে দেখা হওয়া কারণে সফরটা সফল হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বঙ্গবন্ধু। যাদের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি, তাদের উদ্দেশে প্রীতি ও ভালোবাসা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি এটুকুই বলতে পারি। তারা যেমন দেশের জনসাধারণের দুর্দিনে কাঁদে, তাদের যদি দুঃসময় আসে দেশের জনগণও কাঁদবে এবং কাধে কাধ মিলিয়ে দেশের জন্য কাজ করবে।’
অন্তঃহীন দূরদর্শিতা …
নির্বাচনের ফলাফল কী হবে এবং এরপর পাকিস্তানি শোষকরা কী করতে পারে; দূরদৃষ্টি দিয়ে সেই ব্যাপারটি আঁচ করতে পেরে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়ে নিজে ব্রিটেনে গিয়ে প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে এক সম্প্রীতির বাঁধন গড়ে তুলে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। পরবর্তীতে তার বিশ্বাস যেমন সত্য হয়েছে, জনগণ তাকে একচেটিয়াভাবে ম্যান্ডেট দিয়ে নেতা ঘোষণা করেছেন। তেমনি তার আশঙ্কাও মিলে গেছে, অবাধ ভোটে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় লাভের পরও পাকিস্তানি সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালিদের ওপর নাশকতা চালানো শুরু করে। এরপর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে ঘরে ঘরে দুর্গ তোলার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু, এরপর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে হানাদার বাহিনী আগ্রসনের পরিকল্পনা বুঝতে পেরে সরাসরি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তিনি। এরপর পাকিস্তানি বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলেও তার নামেই জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে সক্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় হয়ে ওঠেন প্রবাসীরা। বিশ্ববাসীর সজাগ দৃষ্টি পড়ে বাংলাদেশের দিকে। বাকিটা আমরা সবাই জানি, আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর একজীবনের সাধনা ও তার প্রতি বাঙালি জাতির অগাধ বিশ্বাস ও আস্থার ফল।
পরিশেষে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় অর্জনের পর বিশ্বনেতাদের চাপের মুখে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে ছাড়া পান বঙ্গবন্ধু। সদ্য স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দেশে ফেরার পথে তিনি যখন লন্ডনে অবতরণ করেন; তখন নিজের অবকাশ বাতিল করে, সব রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভেঙে সরাসরি হোটেলে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথ। এরপর ১০ জানুয়ারি ভারত হয়ে দেশে স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে ভারতে যাত্রাবিরতি করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে যত দ্রুত সম্ভব মিত্রবাহিনীর ভারতীয় সেনাদের বাংলাদেশ ত্যাগ করার প্রতিশ্রুতি নেন। এরপর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে দেশের মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু।
সুত্র – https://albd.org/bn/articles/news/35666/