একাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপি থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। ২০১৯ সালের ২৮ মে সংসদে যোগ দিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তে ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন তিনি।
গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একাদশ সংসদ শেষ হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে। অথচ এখনো এমপিদের জন্য বরাদ্দ বাসা-অফিসের দখল ছাড়েননি বিএনপির এ সরব নেত্রী। বারবার ছাড়ার নোটিস দিলেও নাখালপাড়ায় ন্যাম ভবনের ফ্ল্যাট ও শেরেবাংলা নগরে অফিস দখলে রেখেছেন তিনি। সংসদ সচিবালয় কর্তৃপক্ষ বারবার চিঠি দিলেও তোয়াক্কা করছেন না। ফ্ল্যাটের ভাড়া পরিশোধ করে ফ্ল্যাট ও অফিস কক্ষের চাবি বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও তাতে সাড়া দিচ্ছেন না তিনি। সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় সংসদের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, রুমিন ফারহানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সরকারি বাসা-অফিসের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। গত বছর তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলেও এক বছরের বেশি সময় ধরে নাখালপাড়ায় সংসদ সদস্যদের জন্য তৈরি ফ্ল্যাট ও অফিস দখলে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, ফ্ল্যাট ভাড়া ও মাসিক সাভির্স চার্জও তিনি পরিশোধ করছেন না। যোগাযোগ করলেও তোয়াক্কা করছেন না।
একাদশ সংসদ শেষ হয়ে দ্বাদশ সংসদ গঠন হয়ে গেছে। নতুন সংসদ সদস্যদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিতে হবে। অথচ তিনি বাসা ছাড়ছেন না। তার সঙ্গে পদত্যাগকারী অন্য সংসদ সদস্যরা আগেই সরকারি-বাসা অফিস ছেড়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বারবার তাকে ফোন এবং চিঠি দিলেও কোনো সাড়া দিচ্ছেন না। এ নিয়ে আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছি। ফ্ল্যাট-অফিস ছাড়ার জন্য সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সদস্য ভবন শাখা থেকে রুমিন ফারহানাকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে রুমিন ফারহানাকে উদ্দেশ করে বলা হয়, ‘আপনি গত ১১-১২-২০২২ তারিখে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আপনার নামে বরাদ্দকৃত নাখালপাড়ায় সংসদ সদস্য ভবনের ৩/৩০৩নং ফ্ল্যাট এবং শেরেবাংলা নগর সদস্য ভবনের ৫/১০৮নং অফিস কক্ষটি আজ পর্যন্ত বুঝিয়ে দেননি। অফিস কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করার জন্য আপনাকে পত্র দেওয়া হলেও আপনি অফিস কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করেননি কিংবা অফিস কক্ষটি ছেড়েও দেননি।’
এতে আরো বলা হয়, ‘২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত ফ্ল্যাট ভাড়ার বকেয়া পরিশোধ করেননি। ফ্ল্যাট ও অফিস কক্ষ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আপনার ব্যক্তিগত সহকারী জাকির হোসেনকে কমপক্ষে ১৫/২০ দিন মৌখিকভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি ফ্ল্যাট ও অফিস কক্ষটি বুঝিয়ে দেবেন বলে বারবার ওয়াদা করলেও তা বুঝিয়ে দেননি। এমনকি আপনার মোবাইল নম্বরে খুদেবার্তার মাধ্যমেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারপরও আপনার পক্ষ থেকে ফ্ল্যাট ও অফিস কক্ষ বুঝিয়ে দেওয়ার কোনো পদক্ষেপ নেননি।’
চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘এমতাবস্থায়, আপনার নামে বরাদ্দকৃত নাখালপাড়ার সংসদ সদস্য ভবনের ৩/৩০৩ নম্বর ফ্ল্যাট ও শেরেবাংলা নগর সদস্য ভবনের ৫/১০৮ নম্বর অফিস কক্ষের বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করে ফ্ল্যাট ও অফিস কক্ষটি জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অনুকূলে ৩০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখের মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে সবিনয় অনুরোধ করা হলো।’ এ চিঠির পর সরেজমিন ওই ফ্ল্যাট ও অফিসের দরজায় গিয়ে তা তালাবদ্ধ দেখা গেছে। রুমিন ফারহানার ব্যক্তিগত সহকারী জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হবে’ বলে আশ্বাস দেন। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সংসদ সচিবালয়ের চিঠির দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। রুমিনকে ভাড়া পরিশোধের জন্য দেওয়া চিঠি থেকে জানা গেছে, অফিস ভাড়া বাবদ ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকতা বলেন, আরো কিছু সার্ভিস চার্জসহ ৩০ হাজার ২০০ টাকা বকেয়া তার। সেটিও তিনি পরিশোধ করছেন না। তিনি আরো বলেন, এছাড়া তিনি সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগ করার পরও এক বছরের বেশি সময় ধরে বাসা-অফিস দখলে রেখেছেন। তিনি কোথাও ব্যক্তিগতভাবে বাসা-অফিস ভাড়া নিলেও এ এক বছরে তার ১০ লাখের বেশি খরচ হতো।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন বলেন, ‘শুনেছি সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাকে বারবার চিঠি দিলেও তিনি ফ্ল্যাট ও অফিস ছাড়ার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এখানে অবশ্যই নীতি-নৈতিকতার বিষয় জড়িত।’ এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এতদিন আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। বিষয়টি নিয়ে খেয়াল ছিল না। এরই মধ্যে আমার লোকজনকে বলেছি, খুব দ্রুত বাসা-অফিস ছেড়ে দেওয়ার জন্য।’