রোববার পৌষ মাসের শেষ দিন ‘পৌষ সংক্রান্তি’। এই দিনে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী উৎসব সাকরাইন পালন করা হয়। এই উৎসবকে ঘিরে পুরান ঢাকায় অলিগলিতে বইছে উৎসবের আমেজ। সাকরাইন উৎসব উদযাপনে শিশু-কিশোর-তরুণদের অন্যতম অনুষঙ্গ ‘ঘুড়ি’। সাকরাইনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে বাহারি ঘুড়ি ও নাটাই-সুতা বেচাকেনা।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর শাঁখারী বাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানে দোকানে রং-বেরঙের ঘুড়ি-নাটাই ও সুতার পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। গত এক সপ্তাহ থেকে এ বাজারে চলছে ঘুড়ি বেচাকেনা। তবে উৎসবের আগের দিন হওয়ায় আজ বেচাকেনা জমজমাট। পাওয়া যাচ্ছে বাজারে চশমাদার, ভোয়াদার, চক্ষুদার, দাবাদার, রুমালদার, চিলদার, রকেট, স্টার, টেক্কা, শিংদ্বার, রংধনু, গুরুদার, পান, লাভসহ নানার বাহারি নামের ঘুড়ি।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আকার ও মানভেদে ঘুড়ির দাম ভিন্ন। সবচেয়ে বেশি চাহিদা বিভিন্ন রঙের কাগজের ঘুড়ির। সাধারণ ঘুড়ি পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। বিভিন্ন নকশাদার ঘুড়ির দাম ৫০ টাকা শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। একটি চক্ষুদার ঘুড়ি ১৫০ টাকা, চিলদার ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, রকেট ঘুড়ি ২০০ টাকা।
ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য প্রয়োজন নাটাই-সুতা। মানভেদের এসবের দামেও রয়েছে ভিন্নতা। সাধারণ বাঁশের তৈরি নাটাই ছোট-বড় অনুসারে ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। চাবাডি নাটাই বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। সুতাও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের। ড্রাগন সুতা, ভুত সুতা, বিলাই সুতা। সুতাভেদে দাম ১০০ থেকে থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।
শাঁখারী বাজারের সুর এন্টারপ্রাইজের দোকানি সুমন সুর বলেন, ‘আগের মতো তো বিক্রি নেই। কাল উৎসব হিসেবে আজ মোটামুটি বেচাকেনা হচ্ছে। তরুণরা এখন মোবাইলে আসক্ত, আগের মতো সাকরাইনে তারা ঘুড়ি ওড়ায় না। গত ১০ বছর আগেও হাজার হাজার ঘুড়ি বিক্রি করতাম। সবাই এখন মোবাইল গেমে আসক্ত, রাত হলে ডিজে পার্টি করবে। মূল উৎসব ঘুড়ি ওড়ানো থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।’
বাজারের বুদ্ধ অ্যান্ড কোং এর স্বত্বাধিকারী সত্য নারায়ণ বলেন, ‘ঘুড়ির দাম কিছুটা বেড়েছে। গত কয়েক দিন টুকটাক বেচাকেনা হলেও আজ বেড়েছে। কাল দুপুর পর্যন্ত বেচাকেনা চলবে। সাকরাইন এলে শাঁখারী বাজারে একটা উৎসব বিরাজ করে। তরুণ থেকে বয়স্ক সবাই আমাদের কাস্টমার। সবাই তাদের বাচ্চাকে নিয়ে ঘুড়ি কিনতে আসেন। তবে সাকরাইন উপলক্ষে আগে প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা বেচাকেনা হলেও এখন আগের মতো হচ্ছে না।’
গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা অনিমেষ রায় বলেন, ‘প্রতি বছর এ সময়টা আমরা অনেক আনন্দ করি। অনেকেই ঘুড়ি ওড়নো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আমরা বন্ধুরা মিলে আমাদের বাসার ছাদে আয়োজন করছি। আমরা শুধু আনন্দ নয়, পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করি।’
রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরের পর থেকে শুরু হবে ঐতিহ্যবাহী এই সাকরাইন উৎসব। এদিন ৩টায় ধুপখোলা মাঠে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সাকরাইন/ঘুড়ি উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
জানা যায়, সাকরাইন মূলত পৌষ সংক্রান্তি ঘুড়ি উৎসব। বাংলাদেশে শীত মৌসুমের বাৎসরিক উদযাপনে ঘুড়ি উড়িয়ে পালন করা হয়। সংস্কৃত শব্দ ‘সংক্রান্তি’ ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইন রূপ নিয়েছে। পৌষ ও মাঘ মাসের সন্ধিক্ষণে পৌষ মাসের শেষদিন সারা ভারতবর্ষে সংক্রান্তি হিসেবে উদযাপিত হয়। তবে পুরান ঢাকায় পৌষ সংক্রান্তি বা সাকরাইন সর্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবের রূপ নিয়েছে।