1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

টাকা ছিটিয়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে সৌদি

খেলাধুলা ডেস্ক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

নতুন বছর বরণের তোড়জোড় চলছিল বিশ্বজুড়ে। আর তখনই বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে হইচই ফেলে দেয় সৌদি আরব। গুঞ্জন সত্যি করে গেল ৩০ ডিসেম্বর সৌদি ফুটবল ক্লাব আল নাসর রেকর্ড পারিশ্রমিকে দলে ভেড়ায় বিশ্বসেরা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। পর্তুগিজ তারকাকে বরণে ক্লাবটির জমকালো আয়োজন নিয়েও শোনা যাচ্ছিল নানা মত। যেমন এক স্প্যানিশ সাংবাদিক দাবি করেছেন, বিশ্বকাপ ফাইনালের চেয়েও আল নাসরের রোনালদো বরণের আয়োজন দেখেছে বেশি মানুষ। সংখ্যায় যা ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি। অন্যদিকে বিশ্বকাপের ফাইনাল পুরো বিশ্বে দেখেছিল ২০০ কোটি দর্শক।

স্প্যানিশ সাংবাদিকের দাবি সত্যি হোক কিংবা মিথ্যা-সৌদি আরব বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনকে যে নাড়িয়ে দিতে পেরেছে এ নিয়ে সন্দেহ নেই। এদিকে, রোনালদো যখন নতুন ক্লাবের হয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায়, তার মধ্যেই গুঞ্জন উঠেছে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ উপহার দেয়া আরেক মহাতারকা লিওনেল মেসিকে দলে টানতে চাচ্ছে আল নাসরের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব আল হিলাল। এছাড়া স্পেনের সার্জিও রামোস কিংবা ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচের দিকেও নজর সৌদির ক্লাবগুলোর।

বড় বড় তারকাকে মোটা পারিশ্রমিকে কেন কিনতে চাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটির ক্লাব? শোনা যাচ্ছে, ২০৩০ সালের বিশ্বকাপ আয়োজক হতে চায় সৌদি আরব। প্রথমবারের মতো নিজ দেশে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে নানামুখী পদক্ষেপও নিচ্ছে তেলসমৃদ্ধ দেশটি। আর ধারণা করা হচ্ছে, এসব পরিকল্পনার নেপথ্যে কাজ করছে দেশটির বিনিয়োগ তহবিল পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা পিআইএফ। বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে প্রভাবশালী সার্বভৌম অর্থ তহবিল পিআইএফ। যার চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি প্রো লিগের শীর্ষ দুই ক্লাব আল নাসর এবং আল হিলালের মালিকানার সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট পিআইএফ।

তেলবহির্ভূত খাত শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে চৌদ্দ বছর মেয়াদী ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছিল সৌদি আরব। দশকের পর দশক পেট্রোডলার-নির্ভর অর্থনীতিটির এ উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা শুরুতে বিশ্লেষকদের তেমন আস্থা অর্জন করতে না পারলেও পিআইএফের কারণে অগ্রগতি ঈর্ষণীয় বলে দাবি আরব নিউজসহ মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যমগুলোর। জানা যাচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত পিআইএফ ৫০টির বেশি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে। এর নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদের মূল্য প্রায় ৬২ হাজার কোটি ডলার।

ক্রীড়াঙ্গনে পিআইএফের সাাম্রাজ্য

সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা পিআইএফ গত কয়েক বছর ধরেই বিনিয়োগ করছে ইউরোপ ও আমেরিকার খেলাধুলার সেক্টরে। ২০২১ সালে তারা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসেলের ৮০ শতাংশ কিনে নেয়। শুধু তাই নয়, নিউক্যাসেল কেনার পর পিআইএফ আরও বেশকিছু ক্লাব কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করে। সেগুলোর মধ্যে ছিল ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান এবং ফ্রান্সের ক্লাব অলিম্পিক মার্সেই। যদিও শেষ পর্যন্ত ক্লাবগুলোর কেনার ব্যাপারে কথা আর এগোয়নি খুব একটা। তবে এবার পিআইএফ নজর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। এরই মধ্যে জানা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় রেসলিং শো ‘ডব্লিউডব্লিউই’ কিনে নিয়েছে তারা। সৌদি কোম্পানির টাকা এখন বিনিয়োগ হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রীড়াঙ্গনে। যার ফলে পিআইএফ ক্রীড়াঙ্গনে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করছে।

ইংলিশ ফুটবলে অনেকদিন আগে থেকেই বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ)। তবে নানা বাঁধার কারণে তা করতে পারেনি কোম্পানিটি। অবশেষে সব বাধা পেরিয়ে ২০২১ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের জনপ্রিয় ক্লাব নিউক্যাসেল ইউনাইটেড কিনে নেয় পিআইএফের চেয়ারম্যান সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। নিউক্যাসেল কেনার পরই ক্লাবটি ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ক্লাবে পরিণত হয়। নিউক্যাসেল কিনতে সালমানের খরচ করতে হয়েছে ৩০০ মিলিয়ন পাউন্ড, যা ইংলিশ লিগের দ্বিতীয় ধনী ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ১১ গুণ বেশি।

নিউক্যাসেল কেনার পরই ইউরোপে তাদের বিনিয়োগের দরজা খুলে যায়। নিউক্যাসেল কেনার পর তারা হাত বাড়ায় ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানের দিকে। তাদের নজরে ছিল ফরাসি ক্লাব অলিম্পিক মার্সেই’র দিকেও। তবে শেষ পর্যন্ত সেই ক্লাবগুলো কেনা সম্ভব হয়নি নানা বাঁধার কারণে। পিআইএফ-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বিন সালমান ইন্টার মিলান কেনার জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবও দিয়েছিল। এদিকে একটি ব্রাজিলের লিগের ক্লাবও কেনার ঘোষণা দিয়েছিল পিআইএফ। যা কেনার ব্যাপারে এখনও কথা চালিয়ে যাচ্ছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তবে এখনও জানা যায়নি কোন ক্লাব কিনতে চাচ্ছেন তিনি।

এসব কানাঘুষার মধ্যেই খবর আসে, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় রেসলিং কোম্পানি ডব্লিউডব্লিউই (ওয়ার্ড রেসলিং ইন্টারটেইনমেন্ট) কিনে নিয়েছেন পিআইএফ। সৌদি আরবের সঙ্গে ২০২০ সালে একটি চুক্তি করে ওয়ার্ড রেসলিং ইন্টারটেইনমেন্ট (ডব্লিউডব্লিউই) এর চেয়ারম্যান ভিন্স ম্যাকমেহম। সেই চুক্তি মোতাবেক আগামী ১০ বছর একটি করে পে-পার-ভিউ আয়োজন করতে হবে সৌদি আরবের জেদ্দায়। সে চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে একটি করে পে-পার-ভিউ আয়োজন করে আসছে ডব্লিউডব্লিউই। সেই চুক্তির জের ধরেই ডব্লিউডব্লিউই-এর চেয়ারম্যান ভিন্স ম্যাকমেহনের সঙ্গে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি করেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

এদিকে ভিন্স ম্যাকমেহন ডব্লিউডব্লিউই-এর চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলে পিআইএফ ডব্লিউডব্লিউই কেনার আগ্রহ দেখায়। আর সে আগ্রহে সাড়া দিয়ে ভিন্স ম্যাকমেহম বিক্রি করে দেন ডব্লিউডব্লিউইকে পিআইএফ-এর কাছে। তবে ডব্লিউডব্লিউইর পুরোটাই বিক্রি করে দিয়েছেন নাকি কিছু অংশ বিক্রি করেছেন ম্যাকমেহম তা এখনও জানা যায়নি।

এদিকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় গলফ টুর্নামেন্ট পিজিএ ট্যুরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) তাদের একটি আলাদা গলফ টুর্নামেন্ট শুরু করে ২০২১ সালে। যার নাম দেয়া হয় ‘লিভ গলফ’। জয়ীদের পুরস্কার পিজিএ থেকে অনেক বেশি হওয়ায় অনেক নামীদামী খেলোয়াড়রা লিভ গলফ টুর্নামেন্টে যোগ দেন। শুধু গলফ কিংবা ফুটবলেই সীমাবদ্ধ থাকেনি পিআইএফ। মোটরস্পোর্টসেও বিনিয়োগ করেছে এই বিলিয়নেয়ার কোম্পানিটি।

মোটরস্পোর্টসের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা ফর্মুলা ওয়ানে বিনিয়োগ করেছে সৌদির কোম্পানিটি। প্রতিযোগিতাটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শেয়ারহোল্ডারের মালিক এখন পিআইএফ। মালিকানা পেয়েই ২০২৩ সালে একটি রেসিং টুর্নামেন্টের আয়োজন করে তারা।

সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপ ও আমেরিকার পাশাপাশি বিশ্বের সকল জনপ্রিয় খেলাধুলার সেক্টরে বিনিয়োগ করে নিজেদের স্থান আরও শক্ত করছে পিআইএফ। ২০২৯ সালে এশিয়ান উইন্টার গেমস আয়োজন করবে সৌদি আরব এবং ২০৩৪ সালে এশিয়ান গেমসের হোস্টও তারা। এ দুই গেমসের জন্যও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে দেশটির বিনিয়োগ এ তহবিল।


সর্বশেষ - রাজনীতি