1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী হাজারি গুড়

মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩

শীত আসলেই ধুম পড়ে পিঠাপুলির উৎসবের। সেই সঙ্গে শুরু হয় খেজুরের রস ও গুড় সংগ্রহ। কারণ পিঠার সঙ্গে গুড়ের সম্পর্কটা যে অতি প্রাচীন। পিঠা বানাতে এ উপকরণের জুড়ি মেলা ভার। তবে এ গুড় সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানলেও, অনেকেই জানি না এটি তৈরি হয় কীভাবে! চলুন আজ সেটাই জানার চেষ্টা করি।

বছরের পর বছর ধরে খেজুরের রস ও গুড় খেয়ে আসছি; অথচ আমরা বেশির ভাগ মানুষই জানি না, কীভাবে এ রস সংগ্রহ করা হয়, কীভাবেই বা সেই রস থেকে তৈরি হয় গুড়!

আখ কিংবা খেজুরের রস থেকে তৈরি এক প্রকারের মিষ্টিজাতীয় দ্রব্য হচ্ছে গুড়। তালের রস থেকেও তৈরি হয় এ গুড়। আখ, খেজুর কিংবা তালের রস ঘন করে তৈরি করা এ গুড় প্রধানত ৩ প্রকার। ঝোলা গুড়, পাটালি গুড় ও চিটা বা দানা গুড়।

এ তিন প্রকার গুড়ের মধ্যে ঐতিহ্যগত দিক থেকে ঘ্রাণে ও স্বাদে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের ঝিটকা হাজারি গুড় দখল করে আছে উল্লেখযোগ্য একটি জায়গা। এ গুড়ের চাহিদা যেমন বেশি, তেমনি দামও আকাশচুম্বী।

প্রায় আড়াইশ’ বছর আগে হরিরামপুরের ঝিটকা এলাকার গুড়ের ঘ্রাণ ও স্বাদে মুগ্ধ হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের প্রথম রানি এলিজাবেথ। তারপর থেকেই এ গুড়ের নাম ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।

ঐতিহ্যবাহী বিশেষ এ গুড়ের দাম আঁতকে ওঠার মতো। কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৪০০ টাকা। তবে উপকরণের দাম বাড়া ছাড়াও দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এর সঙ্গে জড়িতরা।

হাজারি গুড় ঘ্রাণ ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা, সৌদি আরব, লন্ডন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। বিপুল পরিমাণ চাহিদার জন্য এ হাজারি গুড়ের গুণগতমান ধরে রাখতে ও নকল গুড় তৈরি বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করছেন জনপ্রতিনিধিরা।

তবে মূলত গাছ কাটার লোক সংকট, পরিশ্রম অনুযায়ী মূল্য না পাওয়া এবং খেজুরগাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজে ভাটা পড়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

যশোর জেলার মনিরামপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন আকাশ বলেন, দিন দিন এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। গাছের সংখ্যা যাচ্ছে কমে। তা ছাড়া নতুন করে এ পেশায় আসতে চায় না কেউ। উপকরণের দাম বৃদ্ধি ও খেজুরগাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গাছিরা।

কাকডাকা ভোর থেকেই শুরু হয় গাছিদের ব্যস্ততা। সূর্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারি সারি খেজুর গাছ থেকে শেষ সময়ে চলে রস সংগ্রহ। খেজুরগাছে বাঁধা হাঁড়িতে সংগৃহীত রস গাছিরা নিয়ে আসেন জ্বাল দেয়ার জন্য। তাফালে জ্বাল দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় এ গুড়। পরে সিল দিয়ে তা প্যাকেট করে বাজারজাত করা হয়।

যেভাবে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়

কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের দিকে যখন শীতের আগমন ঘটে তখন থেকে গাছিরা খেজুরের গাছ কাটা শুরু করে। খেজুরের রস থেকে শুরু করে গুড় তৈরি করার প্রক্রিয়াটা বেশ কঠিন।

দড়া (রশি), খুংগি, গাছি দা, তাড়া বাইয়ি নিয়ে একজন গাছি যায় গাছ কাটতে। বিষয়টা শুনতে অনেক সহজ ও সাধারণ মনে হলেও কাজটা মোটেই সাধারণ নয়। কঠিন কাজ।

গাছিকে কোমরের দিকে বস্তা দিয়ে মোড়ানো চামড়ার একটা বস্তা পরে দড়াটা গাছের সঙ্গে বেঁধে ঝুলে পড়তে হয়। পিঠে থাকে খুংগি। যার ভেতর দুই ধরনের গাছি দা। প্রথমে নরমাল দা দিয়ে কাটাকাটি করার পর কিঞ্চিৎ বাঁকা দা দিয়ে তা ছেঁচে মসৃণ করতে হয়। পায়ের কাছে গাছের সঙ্গে শরীরের সাপোর্টের জন্য দড়ি দিয়ে বাঁধা একটা লাঠি থাকে। তাতে ভর দিয়ে গাছ কাটা শুরু হয়। এক একটা গাছ কাটতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে। প্রথম গাছ কাটার ১৩ দিন পর আবার দ্বিতীয় দফায় গাছ কাটতে হয়। এবার গাছটাকে একটু গভীর করে কাটতে হয়। এ গাছ কাটার ৫ দিন পর নলি ও ভাঁড় (মাটির পাত্র) পাততে হয়।

পাতলা ভাইলকো বাঁশ কেটে নলি তৈরি করা হয়। নলির নিচে দেয়া হয় মাটির ভাঁড়, যাতে রসটা সংগ্রহ করা হয়। ভাঁড় পাতার আগে ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুমুক্ত করার জন্য ভাঁড়ের ভেতরে ধোঁয়া দিয়ে পোড়ানো হয়। যাতে রসটা জীবাণুমুক্ত ও সুরক্ষিত থাকে। যেদিন ভাঁড় পাতে তার পরের দিন ভোরেই রস সংগ্রহ করা হয়। মোট ৩ দিন পর্যন্ত সেই ভাঁড়ে রস সংগ্রহের কাজ চলে। এরপর ভাঁড় খুলে ফেলা হয়। ৬ থেকে ৭ দিন পর আবার সেই জায়গা নতুন করে কেটে ভাঁড় পাতা হয়। এভাবে ফাল্গুন-চৈত্র মাস পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা হয়।

রস থেকে গুড় তৈরির প্রক্রিয়া

তিন দিনব্যাপী রস সংগ্রহের প্রথম দিনের রসটাকে নিজেল বা জিরেন রস বলে। এ রসটাই সবচেয়ে ভালো ও পরিষ্কার থাকে। এমনকি এ রসেই তৈরি হয় পাটালিগুড়। পাটালিগুড়ের ক্ষেত্রে রসটাকে অনেক বেশি জ্বাল দিয়ে ঘন করতে হয় এবং নাহারি দিয়ে বীছ মারতে হয়। বীছ মারার পর মেঝেতে গামছা বা পরিষ্কার কাপড় পেতে তার পর আধা ঘণ্টার মতো গুড়টা শুকাতে হয়। তারপর তৈরি হয়ে যায় পাটালিগুড়।

দ্বিতীয় দিনের রসটা একটু ঘোলা ও হালকা টক টাইপের হয়ে থাকে। এই রসকে দোহাট রস বলে। আর তৃতীয় দিন যে রস হয় তার নাম তেহাট রস। এ রসের গুড় তেমনটা একটা ভালো হয় না।

এক একটা ভাঁড় সাধারণত ১০ কেজির হয়ে থাকে। এক-দেড় ঘণ্টা জ্বাল দেয়ার পর ১০ কেজি রসে ১ কেজি পাতলা বা ঝোলা গুড় হয়। জ্বাল দেয়ার সময় যখন ফুটে ওঠে তার ৪ থেকে ৫ মিনিট পর গুড়টা হয়ে যায়। এরপর গুড়টা ছেঁকে পাত্রে রাখা হয়। এটাকেই ঝোলা বা চিটা গুড় বলে।

খেজুরগাছের বয়স দুবছর হলেই শুরু হয় রস সংগ্রহ। প্রতি বছরই সে গাছ কাটা হয়। একবার একপাশ কাটা হলে পরের বছর গাছের অন্যপাশ কাটা হয়। এভাবে এক একটা খেজুরগাছ থেকে ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে রস সংগ্রহ করা হয়। সেই রস থেকেই তৈরি হয় গুড়।


সর্বশেষ - রাজনীতি