1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কুমড়া বড়ি: অস্বচ্ছল পরিবারে ফিরেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৩

দেখতে যেমন সুন্দর, খেতে তার চেয়ে বেশি সুস্বাদু। শীতের খাবারে মুখরোচক স্বাদ আনতে মাছ-সবজিতে কুমড়া বড়ির প্রচলন দীর্ঘ দিনের। শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে অতিযত্ন সহকারে এই খাদ্যপণ্যটি তৈরি করে থাকেন সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীরা।

এদিকে কুমড়া বড়ি বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করেও ইতোমধ্যে অনেকে অস্বচ্ছল পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীত মৌসুমে বাজারে নানা ধরনের সবজির সমাহার দেখা যায়। এই সবজি আর মাছ রান্নাতে ভোজন রসিক খাবারে ব্যবহার হয় ঐতিহ্যবাহী কুমড়া বড়ি।

কুমড়া বড়ির কারিগররা জানান, দেশিয় উপাদানে তৈরি করা হয় কুমড়ার বড়ি। প্রথমে গাছপাকা সাদা বর্ণের চালকুমড়া কুচি কুচি করে কাটতে হয়। তারপরে কলাইয়ের ডাল ভিজিয়ে পাটায় বেটে নিতে হয়। পরে চালকুমড়া আর কলায়ের ডাল একসঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে ভালো করে মাখিয়ে বাঁশের চাটাইয়ের ওপরে ছোট ছোট করে বড়ি তৈরি করে বিছিয়ে দিতে হয়। দুই-তিন দিন ভালো করে রোদে শুকালেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে কুমড়ার বড়ি।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মসুর ডাল (চিকন) এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, যা ৫ মাস আগে ছিল ১১০ টাকা। মসুর ডাল (মোটা) এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। যা আগে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। মাষকলাই ডাল এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়, যা আগে ছিল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। অ্যাংকার ডাল এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। মুগের ডাল এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। একটি কুমড়ো ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, যা আগে ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা।

তাড়াশ উপজেলার বড়ি তৈরি চাতালের মালিক মুনছুর আলী বলেন, ‘বড়ি তৈরি করতে প্রথমে প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো। কিন্তু এখন মেশিনের মাধ্যমে ডাল গুঁড়ো করা হয়, শুধু হাতের মাধ্যমে বড়ি তৈরি করে রোদে শুকাতে হয়। প্রতিদিন আমার চাতালে ১২০ থেকে ১৩০ কেজি কুমড়ো বড়ি তৈরি হচ্ছে। প্রতি কেজি বড়ি চাতাল থেকে পাইকারি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। খুচরা বাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রয় করা যায়। সরকারের দেয়া কিছু সুবিধা পেলে বড় পরিসরে বড়ি তৈরি করে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।’

উপজেলার নওগাঁ গ্রামের কুমড়া বড়ি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে মাষকলাই ডালের কুমড়া বড়ি প্রতি কেজি ২০০ টাকা, মসুর ডালের কুমড়ো বড়ি ১৪০ টাকা কেজি। আর অ্যাংকার ডালের কুমড়ো বড়ি প্রতি কেজি ১০০ টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে খুচরা বিক্রিতে কেজিতে আরও ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হলেও আগের মতো ক্রেতা নেই। সম্প্রতি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের কেনাকাটা কমেছে।’

শাহজাদপুর উপজেলার তালগাছি গ্রামের কুমড়া বড়ি তৈরির কারিগর জাহানারা খাতুন বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর ধরে এই কুমড়া বড়ি তৈরি করছি। মাসকলাইয়ের ডাল আর চাল কুমড়ার মিশ্রণে রোদে শুকিয়ে তৈরি করতে হয় এই বড়ি। কুমড়া বড়ি দিয়ে কৈ, শিং বা শোল মাছের ঝোল ভোজন রসিকদের বেশ জনপ্রিয় খাবার। এই কুমড়া বড়ি তৈরির উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল। এ কারণে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে বড়ি তৈরিতে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আমার মত এখন এলাকার শত শত নারী কুমড়া বড়ি তৈরির
কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।’

মনোয়ারা খাতুন নামের অপর এক নারী বলেন, ‘শীত মৌসুমে কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রি করা হয়। শীতের সময় ব্যাপক চাহিদা থাকায় গ্রামাঞ্চলের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য বড়ি তৈরি করে থাকেন।’

তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের বড়ি তৈরির কারিগর আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমার বাপ-দাদা তৈরি করেছে, আমিও বড়ি তৈরি করছি। এখন আমার ছেলে আর নাতিপুতি তৈরি করছে। বর্তমানে এই গ্রামের ২০ থেকে ২৫টি পরিবার কুমড়া বড়ি তৈরি করে। সেই বড়িগুলো স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় হচ্ছে। শীতের সবজির সঙ্গে কুমড়ো বড়ির একটা যোগসূত্র খুঁজে পান অনেকেই। তাই চাহিদাও বেড়েছে এ সময়।’অপর কারিগর আল-আমিন বলেন, ‘একটা সময় কুমড়া বড়ি তৈরির জন্য শীল-পাটায় সারা রাত ধরে পরিবারের মেয়েরা ডাল বাটতেন। পরের দিন তা বড়ি বানিয়ে শুকাতে দেওয়া হতো। বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়ায় ছেলে মেয়েরা বেলেন্ডার মেশিনের সাহায্যে ঘণ্টার মধ্যেই অনেক ডাউল গুঁড়া করে বড়ি তৈরি করে ফেলে।’


সর্বশেষ - রাজনীতি