1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

স্মার্ট বাংলাদেশের সূচনা হোক স্মার্ট ছাত্রলীগ থেকে 

সিয়াম মাহমুদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৩

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির আরাধ্য পুরুষ, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ঐতিহাসিক এই সংগঠনটির ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।

৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৬ সালে বাংলাকে মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায়, ৫৭ এর শিক্ষক ধর্মঘট, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর বাঙালির ম্যাগনাকার্টা খ্যাত ছয় দফা আন্দোলন, ৬৮ এর মিথ্যা আগরতলা মামলার প্রতিবাদ, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান ও ৭০ এর নির্বাচন এবং ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৭ হাজার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর জীবন দানসহ বাঙালির যা কিছু সোনালী অর্জন তার সবকিছুর গর্বিত অংশীদার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি ভিত্তির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য চারটি ভিত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- ১. স্মার্ট সিটিজেন; অর্থাৎ প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবেন। ২. স্মার্ট ইকোনোমি; অর্থাৎ অর্থনীতির সব কাজই প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা হবে। ৩. স্মার্ট গভর্নমেন্ট; এটা ইতোমধ্যে অনেকটা করা হয়েছে, বাকিটাও করে ফেলা হবে এবং স্মার্ট সোসাইটি; অর্থাৎ আমাদের সমাজটাই হবে স্মার্ট।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তাঁর সুযোগ্য কণ্যা, বৈশ্বিক উন্নয়নের রোল মডেল, বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার একমাত্র ঠিকানা উন্নত আধুনিক স্বনির্ভর স্বদেশ গড়ার কারিগর, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা “স্মার্ট বাংলাদেশ” গড়ার যে হাতে নিয়েছেন তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন, শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশের ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যেতে বদ্ধপরিকর।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বছর ব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ আইডিয়া কনটেস্ট, স্মার্ট ইয়ুথ ক্যাম্প, ডেভেলপমেন্ট কুইজ, সজীব ওয়াজেদ জয় প্রোগ্রামিং কনটেস্ট, অ্যাকাডেমিক কনফারেন্স, স্মার্ট বাংলাদেশ অলিম্পিয়াডসহ আরও যুগোপযোগী কর্মসূচি ছাত্রলীগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিটকেও উপযোগী সাংগঠনিক নির্দেশনা দিয়েছে।

আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সুফল আমরা পাইনি। তবে ২০০৯ সাল থেকে আমরা তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সুফল ধরতে পেরেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা যখন দিয়েছিলেন তখন অনেকেই বুঝতেও পারেনি এটা আসলে কী। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার পর বুঝতে পেরেছি, তিনিই আসলে সব পারেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ দৃশ্যমান, লক্ষ্য এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ।

ভবিষ্যতের এই অদম্য অগ্রযাত্রায় সবাইকে সামিল হতে হবে। ভবিষ্যতে যাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকবে, তারাই ভালো কাজ পাবে। যাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাকবে না, তারা কাজ হারাবে। তাই, এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হলো এদেশের ছাত্রসমাজকে মেধাবী, দক্ষ, যোগ্য ও সৃজনশীল ছাত্র হিসেবে গড়ে তোলা। অন্যথায়, আগামীর বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হয়ে উঠবে না। আমাদের জনসংখ্যার বিরাট অংশ তরুণ জনশক্তি। তাদের দক্ষ ও যোগ্য করতে পারলেই স্মার্ট বাংলাদেশ করতে পারবে। নতুন প্রজন্ম পাবে নতুন এক বাংলাদেশ। আর, এই তরুণ ছাত্র সমাজকে দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি বৃহৎ ছাত্র সংগঠন। সে হিসেবে দেশের বৃহৎ একটি শিক্ষার্থীদের অংশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, স্বপক্ষের শক্তি। যা আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয়। তাই সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলতে পারলে, তারা ছাত্ররাজনীতির পর ব্যবসা কিংবা চাকরী পর্যায়ে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে দেশের জন্য সহজেই কাজ করতে পারবে।

ইতোমধ্যে ছাত্রলীগ যেসকল কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সেগুলোর মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মের মেধাবীদের সৃজনশীল কর্মকান্ড বিকশিত হবে। ফলে, মেধাবীরা আগামীতে নিজেদের মেধাকে তুলে ধরতে নতুন নতুন প্লাটফর্ম খুঁজে পাবে। এতে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজ আরও তরান্বিত হবে।

তবে, আরও কিছু কাজ করতে পারে বলে মনে করছি। যাতে করে তরুন ছাত্রসমাজ নিজেদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। যেমন, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড টেকনোলজি শিক্ষা, ইংরেজি ভাষা শিক্ষা, সাহিত্য বিকাশ কার্যক্রম, একাডেমিক পড়াশোনায় নির্দেশনা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রোবোটিক্স, আন্তর্জাতিক জ্ঞান, সভা-সেমিনার, কনফারেন্স, বিশেষ কর্মশালা, অনলাইন এক্টিভিটিসহ নানা কর্মসূচি।

কম্পিউটার সাইন্স এন্ড টেকনোলজি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস), স্বনিয়ন্ত্রিত যানবাহন, থ্রিডি প্রিন্টার, ক্রিপটোকারেন্সি, ন্যানোটেকনোলজি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স এবং এনার্জি স্টোরেজের মত বিষয়গুলোর উপর ভর করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হচ্ছে।

তাছাড়া গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও সম্পাদনা, মোশন গ্রাফিক্স বা ডিজিটাল অ্যানিমেশন, অ্যাকাউন্টস ম্যানেজমেন্ট, অ্যাপ তৈরি, সাইবার সিকিউরিটিসহ সময়োপযোগী টেকনোলজি শিক্ষার উপর সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া জরুরি। কারণ, উপরিউক্ত বিষয়গুলোর উপর জ্ঞান ও দক্ষতা না থাকলে ভবিষ্যৎ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে কোনোরকম ভূমিকা রাখা যাবে না। তাই, নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিজেদের নেতাকর্মীকেই প্রথমে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে আলাদা আলাদা ইউনিট সমূহ বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট সমূহ নিজেদের নেতা-কর্মীদেরকে টেকনোলজি শিক্ষার ব্যবস্থার সুযোগ করে দিতে পারবে।

ইংরেজি শিক্ষা: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে বৈশ্বিক সম্পর্কের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই, শিক্ষার্থীদেরকে ইংরেজি শিক্ষার উপর ভালো দক্ষতা অর্জনের নির্দেশনা প্রয়োজন।

রোবোটিক্স: ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখাগুলোর নেতাকর্মীদের নিয়ে রোবোটিক্স নিয়ে গবেষণা ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে।

বিতর্ক প্রতিযোগিতা: সমসাময়িক বিষয়বস্তু নিয়ে প্রতিটি ইউনিটের বিভিন্ন শাখার নেতাকর্মীদের নিয়ে নিয়মিত বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। এতে, শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ পাবে।

একাডেমিক পড়াশোনায় নির্দেশনা: নিজেদের সংগঠনের নেতাকর্মীদের মেধাবী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীকে নিজ নিজ একাডেমিক পড়ীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করার ব্যাপারে নির্দেশনা ও মনিটরিং করার নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি, মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে ইউনিটের শীর্ষ পদে রাখা হলে, সকলে শিক্ষার প্রতি আরও আগ্রহী হবে।

সভা-সেমিনার: ছাত্ররাজনীতি কেবল মিটিং মিছিলে সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন বিষয়ের উপর সভা-সেমিনার করার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার নতুন নতুন পথ বেরিয়ে আসে। পাশাপাশি নতুন পরিকল্পনা ও চিন্তা ভাবনার পথ সুগম হয়। তাছাড়া, সভা-সেমিনার এর মাধ্যমে মেধা বিকাশের সুযোগ তৈরি হয়।

অনলাইন এক্টিভিটি: ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সকল নেতাকর্মীকে অনলাইন এক্টিভিটি বৃদ্ধির করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তারই পাশাপাশি অনুরোধ থাকবে বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলন এর সিভি যেন অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। প্রতিটি ইউনিটের নিজস্ব ফেইসবুক পেইজ, টুইটার একাউন্ট ও ইউটিউব চ্যানেল থাকা বাধ্যতামূলক করা হোক। এতে করে, দলীয় প্রচারণার কাজ ও মান বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এইসকল উদ্বুদ্ধ করার কারণ হলো, দেশের বৃহৎ একটি শিক্ষার্থীদের ভরসার স্থান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আর ছাত্রলীগের কার্যক্রম যদি অন্যান্য সংগঠনের চেয়ে ভিন্ন ও গঠনমূলক এবং সময়োপযোগী কার্যক্রম হয়ে থাকে, তাহলে ছাত্রলীগের প্রতি ছাত্র সমাজের বিশ্বাস ও ভরসা আরও বৃষ্টি পাবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পূর্বে আমাদেরকে হতে হবে স্মার্ট সিটিজেন। আর আগামীর স্মার্ট সিটিজেন হবে বর্তমান তরুণ স্মার্ট ছাত্রসমাজ। তাই, ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্রলীগকেই প্রথমে স্মার্ট ছাত্রলীগে রুপান্তরিত হতে হবে। তাহলেই, দ্রুত স্মার্ট সিটিজেন হয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

আশা রাখছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ জ্ঞাননির্ভর- মেধাভিত্তিক, উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।

লেখক : সিয়াম মাহমুদ – কর্মী, সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও সদস্য, খাড়েরা ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগ, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।


সর্বশেষ - রাজনীতি