গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় চলতি মৌসুমে বিষমুক্ত নিরাপদ বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলন ও বাজারে ভালো দাম পেয়ে খুশি উপজেলার বেগুন চাষিরা।
এতে একদিকে যেমন কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে বেগুন চাষে আগ্রহ বাড়ছে অন্য কৃষকদের। বর্তমানে তারা বেগুন ক্ষেত পরিচর্যা ও বেগুন সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে ৫০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বেগুন চাষাবাদ করেছেন। গত মৌসুমের চেয়ে এবার ২০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষাবাদ বেশি হয়েছে। ভাঙর, বিটি বেগুন ও বারি বেগুন-৫ এই তিন জাতের বেগুনের চাষাবাদ করেছেন উপজেলার ৭৫ জন কৃষক। কৃষি দপ্তর থেকে চাষীদের বিনামূল্যে সার, বীজ, নেট সহ ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য ফেরোমন ফাঁদ দেওয়া হয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, মানব দেহের জন্য নিরাপদ ও বিষমুক্ত বেগুনের চাষ সম্প্রসারণে আমরা রবি মৌসুমের শুরুতে উদ্যোগ গ্রহণ করি। উপজেলার ৭৫ জন কৃষককে আমরা প্রশিক্ষণ দেই। তারপর তারা বিনামূল্যে সার ও বীজ পেয়ে বেগুন চাষাবাদ করেন। এরপর পোকা মাকড় দমনে ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করে দেই।
তিনি বলেন, বেগুন ক্ষেতে কৃষক আমাদের পরামর্শে প্রয়োজন অনুযায়ী সুষম হারে বালাইনাশক স্প্রে ও পরিচর্যা করেছে। এভাবেই তারা নিরাপদ বেগুন উৎপাদন করেছে। এপদ্ধতিতে ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে গাছে ফল ধারনের উপযোগী হয়। এছাড়া ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে বেগুন পূর্ণরূপ ধারণ করে। এরপর বাজারে বিক্রির উপযোগী হয়।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৩৫ মেট্রিক টন বেগুনের ফলন হয়েছে। সেই হিসাবে কৃষক ১ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন বেগুনের ফলন পাবেন। বাজারে কেজি প্রতি নিরাপদ বেগুন খুচরা মূল্য ৩০-৩৫ টাকা ও পাইকারি ২০-২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা গত মৌসুমের তুলনায় ৫-১০ টাকা বেশি। এ বছর বেশি দাম পেয়ে খুশি উপজেলার বেগুন চাষিরা।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের লেবুতলা গ্রামের কৃষক হানিফ ফকির বলেন, চলতি রবি মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে বিটি বেগুন চাষাবাদ করেছি। আগে বেগুনে পোকার আক্রমণ দমনে বেশি বেশি বালইনাশক প্রয়োগ করতাম । এতে বেগুন উৎপাদনে খরচ বেশি হত। এ বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা দমন করেছি। পরিমিত মাত্রায় বালাই নাশক ব্যবহার করেছি। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে বেগুনের বাম্পার ফলন পেয়েছি।
তিনি বলেন, বালাই নাশকের ক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ক্ষেত থেকে বেগুন সংগ্রহ করেছি। এ বেগুনে বিষ নেই। এটি নিরাপদ বেগুন। প্রথম দিকে প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এখন প্রতিকেজি বেগুন গড়ে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছি। বাজারে বেগুনের দাম ভালো থাকায় আমি খুবই খুশি। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে সার, বীজ, ফেরোমন ফাঁদ, নেট পেয়েছি। তাই বেগুন চাষাবাদে খরচ কম হয়েছে। এবার বেগুনে বেশ লাভবান হবো।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলি ইউনিয়নের দক্ষিণ বসুরিয়া মনির মোল্লা ও ফায়জুল মোল্লা বলেন, বেগুনে ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ বেশি হয়। তাই মাত্রাতিরিক্ত কীট নাশক প্রয়োগ করতে হয়। এইভাবে উৎপাদিত বেগুন মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আমরা দুইজন কৃষি বিভাগের পরামর্শে বেগুন চাষের আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগ করে ২ বিঘা জমিতে এ বছর ভাঙর জাতের বেগুনের চাষাবাদ করেছি। ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে ফল ও ডগাছিদ্রকারী পোকা দমন করেছি। এ বেগুনে কোন বিষ প্রয়োগ করতে হয়নি।
তিনি বলেন, কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে সুষম মাত্রায় অনুমোদিত বালই নাশক প্রয়োগ করেছি। তাই নিরাপদ বেগুন চাষে খরচ কম লেগেছে। বিষ প্রয়োগ ছাড়াই বেগুনের ভালো ফলন হয়েছে। এছাড়া বাজারে এই জাতের বেগুনের ভালো দাম রয়েছে। তাই আমরা খুব আনন্দিত। আমাদের দেখাদেখি আগামীতে প্রতিবেশি চাষিরা আগামী বছর বেগুন চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।