1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা: আমার গ্রাম আমার শহর

হীরেন পণ্ডিত : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২২

কাউকে পেছনে ফেলে না রেখে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নে অঙ্গীকার নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর ২০২২। একাধিক মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে এ বছর। দ্রুত গতিতে চলছে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক পদ্মা বহুমুখী সেতুসহ ১০ মেগা প্রকল্প ও ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজ। ভবিষ্যতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার ভিত্তি রচনার ক্ষেত্রে এই ১০ মেগা প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সরকারের ১০ মেগা প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকায় মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, পায়রা বন্দর নির্মাণ এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ। এ সব প্রকল্পের কাজ এ বছর শেষ হবে এবং উদ্বোধন করা হবে। আরও এক ধাপ এগোবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন।

আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচির মাধ্যমে শহরের সব সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরলসভাবে কাজ করছে। ‘আমার গ্রাাম আমার শহর’ শীর্ষক এ মেগা কর্মসূচির অধীনে সড়ক যোগাযোগ, ইন্টারনেট সংযোগসহ টেলি যোগাযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মতো অনেক লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

এছাড়া হাওর, উপকূলীয় এলাকা, পাহাড়ি এলকা, চর এলাকা, বরেন্দ্র অঞ্চল, বিল এলাকা এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশে একটি করে বাকি সাতটি গ্রামকে মডেল গ্রাম করা হচ্ছে। যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা, সুপেয় পানি, তথ্যপ্রযুক্তি-সুবিধা ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট-সুবিধা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি স্পেস ও বিনোদনের ব্যবস্থা, ব্যাংকিং-সুবিধা, গ্রামীণ কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কৃষি আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সব সুবিধা রাখার কথা বলা হয়েছে।

ইতোমধ্যে বহুকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট। পরবর্তী সময়ে মেট্রোরেল পরীক্ষামূলক যাত্রার পর গত বছর ১২ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলল। তবে যাত্রী নিয়ে চলবে চলতি বছরের বিজয় দিবস থেকে। ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরো মূল কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর।

চলতি বছরের ৩০ জুন (২০২২) স্বপ্নের পদ্মা সেতু জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা রয়েছে। অপরদিকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি ৭০ শতাংশের বেশি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের (২০২২ সাল) মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বনানী হয়ে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত অংশটি চালু করা হবে।

বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে বরাদ্দ বাতিল করলে আওয়ামী লীগ সরকার সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুতগতিতে শেষ হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার অবকাঠামো নির্মাণে ব্রতী হয়েছে। ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিশাল কর্মযজ্ঞ সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সেটা বাস্তবে রূপ পেয়েছে। শিক্ষা-যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস-বিদ্যুৎ, নারী শিক্ষা, চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি-স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে বই বিতরণ-খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়-বয়স্ক, বিধবা-প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, স্বামী পরিত্যক্তা-অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ ও বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নের সুফল জনগণ পাচ্ছে। একমাত্র বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সেই সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে। কোভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে এগিয়ে আামাদের প্রিয় বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই হয়ে উঠেছিলেন বাঙালি জাতিসত্তার এক মহান নির্মাতা। এ জন্যই বিদেশিরা বঙ্গবন্ধুকে অভিহিত করে থাকেন ‘ফাউন্ডিং ফাদার অব দ্যা নেশন’ হিসেবে। এই দেশের মানুষের স্বপ্নের স্বাধীনতা তিনি উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশের আজ নানা ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অর্জন! বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হিসেবে বিশ্বব্যাপী আমাদের যে অবাধ বিচরণ। পারিপার্শ্বিক নানা প্রতিকূলতা দূর করে উন্নয়নের মহাসড়কে আমাদের আজ যে দৃপ্ত পদচারণা তার সবই বঙ্গবন্ধুর অবদান। আমরা যদি একটি স্বাধীন দেশ না পেতাম তাহলে আজও পকিস্তানের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতো, নিষ্পেষিত হতে হতো।

স্বাধীন দেশ পেয়েছি বলেই আমরা স্বাধীনভাবে সব কিছু চিন্তা করতে পারি। সমাজ ও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে আমাদের সাফল্য বিশ্ববাসীর বিস্ময়মুগ্ধ মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে তা বঙ্গবন্ধুর কল্যাাণেই সম্ভব হয়েছে। বলাবাহুল্য, এ সবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কল্যাণে। স্বাধীনতার মহান স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু যে সম্ভাবনার অসীম সেই দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তাই নয়, একই সঙ্গে হতাশাক্লিষ্ট জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন ভয়কে জয় করার জন্য, মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্রেও দিক্ষিত করেছেন পুরো জাতিকে।

জাতির পিতা জানতেন বাঙালির উন্নতির জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই তিনি নাগরিকদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক, সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করার বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে সরকারের ওপর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করেছিলেন।

বিক্ষুব্ধ উত্তাল সময় পাড়ি দিতে দিতে, আন্দোলন-সংগ্রাম ও জেল-জুলুম সহ্য করতে করতে সঞ্চারিত যে অভিজ্ঞতা, তার উত্তাপে দাঁড়িয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্মাণ করেছেন আমাদের সুন্দর এই মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশ।

যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশের সর্বত্র ছিল নানাবিধ সংকট। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের কাজে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করেন আপন মহিমায়। অভাব আর হাহাকারের ভারী বাতাসে মানুষ যখন হাঁসফাঁস করছিল, তখন জাতির পিতা দেশে ফিরে হাল ধরলেন দক্ষ নাবিকের মতো। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের কাজে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করেন আপন মহিমায়। চারদিকে বইয়ে দিলেন শান্তির সুবাতাস।

নিদারুণ সংকট থেকে মুক্তির জন্য ব্যাপকভিত্তিক প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের নেতা ছিলেন না, তিনি সমগ্র বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের নেতা ছিলেন। বিশ্বের বঞ্চিত জনগোষ্ঠী তাদের আজীবন প্রাণশক্তির জন্য যেকোনো সংকটে বঙ্গবন্ধুকে খুঁজবে।

বঙ্গবন্ধু সবসময় এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই সংগ্রাম করেছেন। কাজেই আমাদের একটি কথাই বার বার মনে হয় যা বাঙালি জাতির যখন যা কিছু অর্জন, অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে, অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমাদের অর্জন করতে হয়েছে। সেই অর্জনগুলো আমাদের ধরে রাখতে হবে। কোনো মতেই যেন এই অর্জন কেউ ভবিষ্যতে নস্যাৎ করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

আমাদের যতটুকু সম্পদ যেটা নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বার বার বলেছেন, সেই সম্পদটুকু কাজে লাগিয়েই আমরা বিশ্বসভায় নিজেদের আপন মহিমায় আমরা গৌরবান্বিত হবো, নিজেদের গড়ে তুলব এবং সারাবিশ্বের কাছে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। এটাই হবে এ দেশের মানুষের জন্য সবদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এভাবেই এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর ভাষায় সেই মন্ত্রটি ছিল ‘আমরা যখন মরতে শিখেছি কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ বঙ্গবন্ধুর এই মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ সামনে রেখেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার পথে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার দৃপ্ত অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চলছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করে ২০৪১ সালের মধ্যেই উন্নত দেশে পরিণত হবে. সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলেছে।

ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন এবং সহজেই নাগরিকসেবাপ্রাপ্তি-শিক্ষা, স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাপনা, কর্মপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনা করার লক্ষ্যে কাজ করছে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তি যেমন করে সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছেও প্রযুক্তিনির্ভর সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব নাগরিকসেবা ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে এক বিশ্বস্ত মাধ্যম।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে। একদেশ এক রেইট কর্মসূচির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে জনগণকে ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে ৫ হাজার ইউনিয়ন ৫ জি চালু হয়েছে তবে মার্চ ২০২২ থেকে বাণিজ্যিকভাবে কাজ করবে।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তরুণরা গড়ে তুলছে ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপ-ভিত্তিক সেবাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এখন স্বপ্ন নয়, এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা আমার গ্রাম আমার শহরের মাধ্যমে এগোবে আরও বহুদূর।

লেখক: হীরেন পণ্ডিত – প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো বিএনএনআরসি। 


সর্বশেষ - রাজনীতি