1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও ফেলে আসা ২০২১

নাজিম আজাদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১ জানুয়ারি, ২০২২

অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের, মাঝে ঘটেছিল ছন্দপতন; তারপর আবারও শুরুর ধারায় চলার পথে যখন সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন, তখন জন্মের লক্ষ্যকে কালিমালিপ্ত করে গেল দুর্গাপূজার মধ্যে সাম্প্রদায়িক হামলা।

তিন দশক আগে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের পর আর ২০০১ সালে নির্বাচনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার মাত্রা ছিল ব্যাপক। এরপর বিচ্ছিন্নভাবে নানা সময়ে হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ সম্প্রদায় আক্রমণের শিকার হলেও এই বছরের দুর্গাপূজার সময় হামলার ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতের অন্য সব ঘটনা ছাপিয়ে যায়। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী পালনের বছর ২০২১ সালে তাই আলোচিত ঘটনা হয়ে উঠেছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর এই হামলা।

বেসরকারি সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফোরামের (এমএসএফ) তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে দেশের ১৯টি জেলার পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতার ৫৩টি ঘটনা ঘটে।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দাবি, দুর্গাপূজার মধ্যে তিন দিনেই ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা-ভাংচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়।

১৩ থেকে ২০ অক্টোবরের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নয়জন নিহত ও কমপক্ষে দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। নিহত ৯ জনের মধ্যে ৬ জন মুসলমান ও ৩ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

শারদীয় দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় একটি মণ্ডপে প্রতিমার কোলে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরিফ পাওয়ার পর এই হামলার শুরু হয়।

ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, সেদিনই কুমিল্লায় ১৭টি মণ্ডপে হামলা হয়। একই দিনে হামলা হয় পাশের জেলা চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের আরও ১৪টি মণ্ডপে।

এরপর কয়েকদিনে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর বিভিন্ন জায়গায় মণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা হয়। তারপর ১৭ অক্টোবর রাতে রংপুরের পীরগঞ্জের জেলেপল্লীতে আগুন দেওয়া হয়, পুড়ে যায় ২৯টি বাড়ি।

পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লা এবং তার পরের কয়েকদিনের ঘটনায় ১১ নভেম্বর অবধি সারাদেশের ৩৫ জেলায় মোট ১৪২টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ১ হাজার ১৩৬ জন।

তবে কোনো মামলায়ই এখনও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি বলে জানান বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত।

তিনি বলেন, “প্রধান বিচারপতি বলেছেন এই যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা নিয়ে সেগুলো অভিযোগ দায়েরের ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। এ বিষয়ে আদেশও হয়েছে।

“কিন্তু কোনো মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে, এমনও দেখছি না। প্রায় দুই মাস হতে চলেছে। তার মানে মামলার এজাহার হয়েছে, আসামিও হয়ত কিছু ধরা হয়েছে। কিন্তু আসামিদের বিচার কবে হবে, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমরা কী কেবল কিছু আশ্বাস পেলাম?”

রানা দাশগুপ্ত বলেন, “সহিংস হামলাগুলোতে যে মন্দিরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বেশ কিছু জায়গায় এগুলোর পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মান হয়েছে। অনেকেই আহত হয়েছিলেন। তারাও সেরে উঠেছেন। কিন্তু মনের ক্ষতটা কী আর সারবে? আতঙ্ক, উদ্বেগ, নিরাপত্তাহীনতা…”

হামলার কারণ খুঁজতে গিয়ে মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, “আমার কাছে মনে হয়েছে, পাশের ত্রিপুরার মুসলিম জনগোষ্ঠৗর সঙ্গে যে বিষয়গুলো ঘটেছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।”

সম্প্রতি ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনায়ও শারদীয় দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশে সহিংসতার প্রসঙ্গটি আসে।

পরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, “দুর্গাপূজার পর যে সমস্যা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে আমাদের দেশে সংখ্যালঘু হিসাবে কাউকে ট্রিট করা হয় না। সকলের সমান অধিকার দেওয়া হয়।”

বাংলাদেশ চার মূলনীতির একটি ধর্মনিরপেক্ষতা পুরোপুরি বাস্তবায়নে আরও কিছুর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান।

হামলার দুই মাস পর কী অবস্থা এখন- জানতে চাইলে কুমিল্লার হারাধন চক্রবর্তী বলেন, “ওই হামলার পর অনেকের মধ্যে যে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল, সেটা কেটে গেছে তা বলা যাবে না।

“আসলে এগুলো নিয়ে কেউ আলোচনাও করছে না। অনেকে ভেতরে ভেতরে তুষের আগুনের মতো জ্বলছে। এই দেশে আসলে এটাই আমাদের জীবন।”


সর্বশেষ - রাজনীতি