প্রতি বছরের মতো এবারও পহেলা জানুয়ারি উদযাপিত হতে যাচ্ছে বই উৎসব। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পাবে কোমলমতি শিশুরা। তবে দেশজুড়ে বই উৎসব উদযাপিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় এই উৎসবের উচ্ছ্বাস একটু বেশিই। এখানে সাধারণ পাঠ্যপুস্তকের বাহিরেও চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর কোমলশিশুরাও পাচ্ছে মায়ের ভাষার বই। ২০১৭ সাল থেকে সরকার প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাতৃভাষায় বই বিতরণ শুরুর পর তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত মায়ের ভাষায় বইতে পারছে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা শিশুরা। এ বছর রাঙ্গামাটির ১০ উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার শিশু পাবেন মায়ের ভাষার বই।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস (ডিপিইও) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে জেলার ১০ উপজেলায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা শিক্ষার্থীদের মাঝে মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিকে ১৫ হাজার ৮২০টি, প্রথম শ্রেণীতে ২২ হাজার ৪১৬টি, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ২২ হাজার ৬৩৫টি ও তৃতীয় শ্রেণীতে ৬৮৭৯টি বই বিতরণ কর হবে। তন্মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে দুইটি বই, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে তিনটি এবং তৃতীয় শ্রেণীতে একটি করে বই থাকবে। মোট ২৯ হাজার ৮০৬ শিক্ষার্থী ৬৭ হাজার ৭৫০টি মাতৃভাষার বই পাবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত চাকমা ভাষার বই দেওয়া হবে ৫৩ হাজার ২২৪টি, মারমা ভাষার বই দেওয়া হবে ১০ হাজার ৮২১ ও ত্রিপুরা ভাষার বই দেওয়া হবে ৪ হাজার ১০১টি। জনসংখ্যাগত দিক দিয়ে রাঙ্গামাটি জেলায় মারমা ও ত্রিপুরাদের চেয়ে চাকমাদের বসবাস বেশি হওয়ায় এ নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরাই বেশি বই পাচ্ছেন।
ডিপিইও সূত্র আরও জানিয়েছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সাধারণ শিক্ষায় জেলার ১০ উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৮৯ হাজার ১৫০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫২৯টি বই বিতরণ করা হবে। জেলায় বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭০৭টি। তবে এনজিও, কিন্ডারগার্ডেন, রেজিষ্ট্রেশন ব্যতিত ও পরীক্ষণ বিদ্যালয়সহ মোট প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৬৪টিতে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, বই বিতরণ কার্যক্রম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘২০২৩ শিক্ষাবর্ষে রাঙ্গামাটির দশ উপজেলার ৮৯ হাজার ১৫০জন শিশু বই উৎসবের মধ্যদিয়ে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫২৯টি নতুন বই পাবে।’
এ ছাড়া চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ২৯ হাজার ৮০৬ জন শিশু ৬৬ হাজার ২৫০টি মাতৃভাষার বই পাবে। মূলত সরকার ২০১৭ সাল থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক দিয়ে যাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে এখন তৃতীয় পর্যন্ত শিশুরা মাতৃভাষায় বই পাচ্ছেন। ৫টি মাতৃভাষায় বই দেওয়া হলেও পাহাড়ের চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা শিশুরা বই পাচ্ছে। অন্যান্য যে সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুরা রয়েছে, তাদের মাতৃভাষায় পাঠদানে সরকারের ইতিবাচক ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ডিপিইও সাজ্জাদ হোসেন জানান, এরইমধ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলায় বই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে বই উৎসব সম্পন্ন করতে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী পহেলা জানুয়ারি সারাদেশের সঙ্গে একযোগে রাঙ্গামাটিতে জেলাতেও বই উৎসব হবে। এদিন সকাল ১০টায় জেলা শহরের বনরূপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উৎসবের উদ্বোধন করবেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী ও বেলা ১২টায় রাণী দয়াময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য বই বিতরণ করে আসছে সরকার। সে বছর থেকে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, এবং সাদ্রি এই পাঁচটি ভাষায় বই বিতরণ শুরু হলেও তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষী শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক থেকে বই পাচ্ছে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণী, ২০১৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণী ও ২০২০ সালে তৃতীয় শ্রেণীতেও মাতৃভাষায় বই পেয়েছে তারা।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, কেবল তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্তই মাতৃভাষায় পড়তে পারবে দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা। তবে পাহাড়ে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ছাড়াও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী বসবাসরত করলেও তাদের সন্তানেরা মাতৃভাষায় পড়তে পারছেন না।