ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন-বিএসসি। বিগত অর্থ বছরে (২০২১-২২) এই সংস্থা ২২৫.৮১ কোটি টাকা নীট মুনাফা অর্জন করেছে। আর শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ। আরো ছয়টি নতুন জাহাজ সংযোজনের মাধ্যমে বিএসসির মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজ বহর সমৃদ্ধ হয়েছে। তাতে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে জাতীয় পতাকাবাহী এই সরকারি সংস্থা।
আরো বেশ কয়েকটি জাহাজ কেনা এবং পায়রা বন্দর ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে আন্তর্জাতিক মানের দুটি শিপইয়ার্ড নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিএসসির বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে।
রোববার চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় বোট ক্লাবে বিএসসির শেয়ারহোল্ডারদের ৪৫তম (২০২১-২২ অর্থ বছরের) বার্ষিক সাধারণ সভায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী এবং বিএসসির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। সভায় শেয়ারহোল্ডারদের সামনে বিএসসির বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বিএসসির বহরে এক সময় ৩৮টি জাহাজ যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তিতে নতুন জাহাজ সংযোজন করা হয়নি। একপর্যায়ে প্রায় জাহাজশূন্য হয়ে যায় বিএসসি।
অবশেষে দীর্ঘ ২৭ বছর পর বিগত ২০১৮-১৯ সালে চীনের ঋণ সহায়তায় ওই ছয়টি জাহাজ যুক্ত হয়। সরকারের উন্নয়ন সহযোগী, এসডিজি এবং ব্লু-ইকোনমির ধারণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে মিশ্র বাণিজিক জাহাজ বহর সৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ণ রিফাইনারির ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতা দ্বিগুণ হচ্ছে। সমন্ত ক্রুড অয়েল বিএসসির নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে পরিবহনের জন্য একটি এক লাখ মেট্রিক টন এবং একটি সোয়া লাখ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার নতুন দুটি মাদার ট্যাংকার কেনার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসি প্রতিবছর ৩৫ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল এবং সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন জেট ফুয়েল আমদানি করে। এসব জ্বালানি তেল বিদেশি জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। এসব জ্বালানি পরিবহনের জন্য ৮০ হাজার মেট্রিক টন ক্ষমতার দুটি মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার ক্রয়ের লক্ষ্যে আারও একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
বিএসসির বহর যুক্ত হতে যাওয়া বড় আকারের মাদার ভেসেল বাধ্যতামূলক ডকিং, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেশে কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেই। এ অবস্থায় পায়রা বন্দরে একটি আন্তর্জাতিকমানের শিপইয়ার্ড এবং মাতারবাড়িতে বৃহৎ আকারের বিশ্বমানের জাহাজ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরমাত ক্ষমতাসম্পন্ন একটি আধুনিক শিপইয়ার্ড নির্মাণ করার লক্ষ্যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ শিপইয়ার্ড নির্মাণ হলে দেশে বৃহৎ আকারের আন্তর্জাতিকমানের জাহাজ নির্মাণ, ডকিং ও মেরামত করা সম্ভব হবে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সেইসাথে আন্তর্জাতিক শিপিং সেক্টরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করবে।
সভাপতির বক্তব্যে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বিএসসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু তাকে হত্যার পর বিএসসি একটি মৃতপ্রায় প্রতিষ্ঠানের রূপ লাভ করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ২৭ বছর পর বিএসসির বহরে নতুন ৬টি জাহাজ যুক্ত হয়েছে। আরও নতুন জাহাজ সংগ্রহের জন্য চীন, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফলে বিএসসি আবার তার হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার পথে।
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, বিএসসি ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২২৫.৮১ কোটি টাকা নীট মুনাফা অর্জন করেছে। সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা এবং সকলের সমি¥লিত প্রচেষ্টায় এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। বিএসসির প্রতি বর্তমান সরকারের সুদৃষ্টির কারণে ভবিষ্যতে জাতীয় পতাকাবাহী রাষ্ট্রীয় এ সংস্থা আরও অধিক মুনাফা অর্জনে সক্ষম হবে।
সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, বিএসসি পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক নৌ পরিবহন সচিব মো. মোস্তফা কামাল, স্বতন্ত্র পরিচালক প্রফেসর এম. শাহজাহান মিনা, ড. মো. আবদুর রহমান, বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) ড. পীযূষ দত্ত, নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি) মোহাম্মদ ইউসুফ উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন বিএসসির সচিব, মো. লাল হোসেন।