1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বঙ্গবন্ধু পরিবার এর মুক্তির দিনের কথা

আহমেদ রিয়াজ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২১

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল পাকিস্তানি সৈন্যরা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করার পর ভীষণ অসহায় ও অনিরাপদ হয়ে গেল বঙ্গবন্ধু পরিবার। পরিবারের বড় ছেলে শেখ কামাল ২৬ মার্চেই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৬ মার্চেও তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। গুলি করেছিল। সৌভাগ্যক্রমে তাদের কারো কোনো ক্ষতি হয়নি। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে থাকা আর নিরাপদ মনে করলেন না তারা। কিন্তু কোথায় যাবেন?

নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ১ এপ্রিল খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ার গোলচত্বরে ঢোকার প্রধান সড়কের কাছে একটি ভাড়াবাড়িতে গিয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু পরিবার। কিন্তু পাঁচ-ছয়দিন পর বাড়িওয়ালি বাড়ি ভাড়া ফেরত দিয়ে বেগম মুজিবকে বললেন, ‘‘আপনাদের পরিচয় জানাজানি হয়ে গেছে। আল্লাহর দোহাই, আপনারা দয়া করে এই বাড়ি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যান। তা না হলে পাকিস্তানি আর্মি আমাদের বাড়িটি ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করে দেবে।’’

(সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ- এম ওয়াজেদ মিয়া, পৃ. ৮৩)

এরপর মগবাজার চৌরাস্তার কাছে প্রধান সড়কে একটি বাড়ির নিচতলায় আশ্রয় নেন তারা। কিন্তু ওখানেও পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের আনাগোনা। আবারও বাসা বদল করে ওই বাড়ির আশপাশে আরেকটি বাসার দোতলায় এসে ওঠেন তারা। কিন্তু এখানেও বেশিদিন আত্মগোপনে থাকতে পারেনি বঙ্গবন্ধু পরিবার।

১২ মে তাদের ওই বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সশস্ত্র সৈন্যসহ জিপ ও আর্মিট্রাকে করে কড়া পাহারায় সন্ধ্যার সময় ধানমন্ডির ১৮ নম্বর (বর্তমানে ৯/এ) সড়কের ২৬ নম্বর বাড়িতে এনে বন্দি করে রাখা হয় সবাইকে। বন্দি থাকা অবস্থায় পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের তত্ত্বাবধানের কথা বলা হলেও বেগম মুজিব সরাসরি তাদের সহায়তা নিতে অস্বীকার করেন।

তাদেরকে যে বাড়িতে এনে বন্দি করা হয়, ওই বাড়িতে কোনো আসবাবপত্র ছিল না। ছিল না কোনো ফ্যান। ঘরের মেঝেতে ঘুমাতে হতো সবাইকে। এ সময়টাতেই মায়ের গর্ভে এসেছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। সন্তানসম্ভবা শেখ হাসিনার তখন প্রয়োজন ছিল মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি। কিন্তু এসবের কিছুই তিনি পাননি। ডক্টর ওয়াজেদ মিয়া তার বইতে জানিয়েছেন, ‘‘যখনই বাইরে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যেত, প্রহরারত সুবেদার মেজর স্টেনগান হাতে ডক্টর সাব, ডক্টর সাব বলতে বলতে আমার রুমে ঢুকতো। সে সময়ে তারা আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। বাড়ির ছাদে উঠে লাফালাফি করত এবং লাইট জ্বালিয়ে রেখে ঘুমোতে দিত না। রাইফেলের মাথায় বেয়নেট লাগিয়ে কক্ষের জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থাকত।’’

(সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ- এম এ ওয়াজেদ মিয়া, পৃ.৮৭)

এমনকি মাতৃত্বকালীন হাসপাতালে মেয়ের কাছে থাকতে চেয়েছিলেন মা ফজিলাতুন নেছা মুজিব। কিন্তু তাকে থাকার অনুমতি দেয়নি পাকিস্তানিরা। হাসপাতালে ভর্তি শেখ হাসিনাকেও স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। হাসপাতালে তার কক্ষের বাইরে মারদাঙ্গা চেহারারা পাকিস্তানিরা ঘোরাফেরা করত, কক্ষের ভিতরে ঢুকে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে আসা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে চরম দুর্বব্যবহার করত, যখন তখন তাদের রুম থেকে বের করে দিত।

ওদিকে একরাতে এক পাকিস্তানি হাবিলদার স্টেনগান নিয়ে বেগম মুজিবের ঘরে ঢুকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, ‘‘আপনারা জয় বাংলা রেডিও শোনেন। ওটা বন্ধ না করলে জামালকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে ঘরের সিলিং-এ পা বেঁধে ঝুলিয়ে পিটিয়ে তার পিঠের চামড়া ওঠানো হবে।’’

হাসপাতাল থেকে সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরলেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ও সদ্যজাত শিশু জয় বেশ কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পড়লেও সে বন্দিবাড়ি থেকে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার অনুমতিও মিলত না। এমনকি বাইরে থেকে কোনো ডাক্তার আনতেও বাধা দিত। সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণাদায়ক ছিল পাকিস্তানি সৈন্যদের কটাক্ষ বা বুলিং। যখন তখন যাকে তাকে যা ইচ্ছে বুলিং করত পাকিস্তানি সৈন্যরা। মুক্তিযুদ্ধ চরম আকার ধারণ করলে সদ্য পিতা হওয়া জয়ের বাবা ড. ওয়াজেদ মিয়াকে প্রায়ই কটাক্ষ করত, ‘‘পশ্চিম পাকিস্তানমে এক নরুদকো পাকড়াও করকে রাখা হুয়া, লেকিন এধার এক কাফের পয়দা হুয়া’’।

একে তো খালি মেঝের ওপর ঘুমাতে হতো, তার ওপর পাকিস্তানি সৈন্যদের ভয়ে বাতি নিভিয়ে ঘুমাতেন না তারা। বাড়ি অন্ধকার পেলেই ঘরের ভিতর ঢুকে কখন কী অঘটন ঘটিয়ে ফেলে, বলা যায় না। এর মধ্যেই ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শেখ জামালকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বাড়ির সবাই ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। কারণ শেখ জামালকে নিয়ে নির্যাতন করার হুমকি এর আগে বেশ কয়েকবার দিয়েছিল পাকিস্তানিরা। কোথাও লুকিয়ে রেখে জামালকে নির্যাতন করছে না তো!

ওই বাড়িতে যে কী পরিমাণ মানসিক ও শারীরিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে তারা কাটিয়েছেন, তার কিছু বিবরণ এমএ ওয়াজেদ মিয়ার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ বইতে পাওয়া যায়। একদিন তো ড. ওয়াজেদ মিয়াকে গুলিই করেছিল এক পাকিস্তানি সৈন্য। আর শেখ জামাল নিখোঁজ হওয়ার কারণে ওই বাড়ির সৈন্যসংখ্যা এক কোম্পানি থেকে বাড়িয়ে দুই কোম্পানি করা হয়। শুধু তাই নয়, বাড়ির ছাদে বালির বস্তা দিয়ে বাঙ্কার বানিয়ে ভারী মেশিনগান ও গাড়ি গ্যারেজের ছাদে মাঝারি ক্ষমতাসম্পন্ন মেশিনগানও স্থাপন করা হয়েছিল।

বন্দি সময়টায় ওই বাড়ি থেকে সারাক্ষণ আর্মির জিপের শব্দ, আর্তচিৎকার, গুলির শব্দ, গ্রেনেড ফাটার শব্দ শুনতে পেতেন তারা। নানান রকম কষ্ট তো ছিলই। খাবারের কষ্ট, ঘুমানোর কষ্ট, প্রাইভেসি জনিত কষ্ট, শীতের কষ্ট। খুব হিসেব করে খেতে হতো সবাইকে। কোনো রকমে খাবারের ব্যবস্থা হতো। সামান্য কিছু চাল ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে রাখতেন বেগম মুজিব। আর সবাইকে বলে দিতেন পেট ভরে কিন্তু খাওয়া চলবে না। যার ক্ষুধা লাগবে সে খাবে। তাও একটা পরিমাপ বেঁধে দিতেন। এক মুঠোর বেশি খাওয়া যাবে না।

প্রচণ্ড শীতে তাদের পুরো পরিবারের জন্য মাত্র একটি কম্বল দিয়েছিল পাকিস্তানিরা। এতসব কষ্টের মধ্যেও মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাগুলির শব্দ তাদের মনে বেশ আনন্দ দিত। আর সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছিল যেদিন তারা জানতে পারলেন পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। বাড়ির ভেতরে বন্দি থেকেও মানুষের খুশি টের পাচ্ছিলেন সবাই। ঢাকা মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির সামনে দিয়ে গাড়ি যাতায়াত শুরু হয়ে গেছে।

রেডিওতে আত্মসমর্পণের খবর প্রচার হয়েই চলেছে। বেগম মুজিব এক হাবিলদারকে ডেকে বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের নিয়াজী সারেন্ডার করেছে, তোমরাও কর।’’ কিন্তু তখন ওরা সারেন্ডার করতে রাজি হয়নি। তখনও তারা এক ব্যাটালিয়ন সৈন্যকে বাধা দেয়ার ক্ষমতার কথা জানায়। আর সেই রাস্তা দিয়ে কোনো গাড়ি ঢুকলেই গুলি করে গাড়ির ভিতরে থাকা আরোহীদের হত্যা করতে থাকে। ওরা রাস্তা বন্ধ করেনি।

অথচ কেউ গাড়ি নিয়ে ঢুকলেই গুলি চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীই মনে করেছিলেন, যেহেতু বাংলাদেশ মুক্ত, কাজেই ওই বাড়িতে বন্দি থাকা বঙ্গবন্ধু পরিবারও মুক্ত। তাই অনেকেই বন্দি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কাছে ছুটে আসতে চাইছিলেন। কিন্তু এলেই যে তাদের উপর গুলি চলবে এটা তারা ভাবতেই পারেনি। আর এই না জানার কারণে প্রাণও দিতে হয়েছিল বেশ কয়েকজনকে।

বাড়ির ভেতরে থেকে তারা পাকিস্তানিদের বদ মতলব বুঝতে পারছিলেন। কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না। ৩২ নম্বর সড়কের এক প্রতিবেশী ও আত্মীয় ইঞ্জিনিয়ার হাতেম আলী এবং তার পরিবার ছুটে এসেছিলেন তাদের খবর নিতে। কিন্তু গেটের কাছে আসতেই মেশিনগান চলতে শুরু করল। মুষলধারে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ঝরল তাদের গাড়ির উপর। সাথে সাথেই ড্রাইভার শহীদ হলো। আহত হলেন হাতেম আলীর স্ত্রী ও পুত্রবধূ।

বাড়ির ভেতর থেকে তারা তখন ওদের পানি পানি বলে আর্তচিৎকার শুনেছিলেন। আর্তনাদ শুনে তারা কেউ আর থাকতে পারছিলেন না। ছুটে এসেছিলেন বারান্দায়। কিন্তু রাইফেল তাক করে ধমক দিয়ে আবার তাদেরকে ভেতরে পাঠিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি সেনারা। জানালা দিয়ে এসব অত্যাচার দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তাদের।

রেডিওতে তখনও প্রচার চলছে- ‘আত্মসমর্পণের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ। মিত্রবাহিনী ভারত ও মুক্তিবাহিনীর পক্ষে জেনারেল অরোরা উপস্থিত থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জেনারেল নিয়াজীকে আত্মসমর্পণ করালেন।’ অথচ তারা তখনও স্বাধীনতার স্বাদ পাননি। তখনও তাদের মাথার উপর পাকিস্তানের পতাকা উড়ছিল।

কাদেরিয়া বাহিনী বাড়ির সামনে দিয়ে খোলা জিপ চালিয়ে স্লোগান দিতে দিতে যাচ্ছিল। তখনও মেশিনগান চলতে শুরু করল। রাস্তা থেকেও পাল্টা গুলি এসেছিল। এটা দেখে তারা সবাই হঠাৎ সাহসী হয়ে উঠেছিলেন। সেদিন শেখ হাসিনার ছোট বোন রেহানা খুশিতে মুক্তিবাহিনী, মুক্তিবাহিনী বলে চিৎকার করছিলেন আর হাততালি দিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছিলেন।

সবাই অস্থির হয়ে উঠেছিলেন কখন বাইরে যাবেন, মিছিল করবেন, বিজয়োল্লাসে মেতে উঠবেন। কিন্তু তারা কেউ উল্লাস তো করতে পারছিলেনই না বরং যত সময় যাচ্ছিল গোলাগুলি তত বেড়েই যাচ্ছিল। সন্ধ্যার দিকে গোলাগুলি আরও বেড়ে গিয়েছিল। সে রাতে তারা সারারাত গোলাগুলির আওয়াজ শুনেছেন। একসময় গোলাগুলি থেমে যায়। যখন গোলাগুলি থামে তখন ১৭ ডিসেম্বর ভোর। হাবিলদার ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল বলেই গোলাগুলি থেমেছিল। ১৭ ডিসেম্বর তাদের উদ্ধার করতে চলে আসে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী।

ভারতীয় সেনারা তখন পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেছিল। আর পাকিস্তানিদের চাপ দিয়েছিল সারেন্ডার করার জন্য। তবুও কিছুতেই পাকিস্তানি সেনারা সারেন্ডার করতে রাজি হচ্ছিল না। অনেক বাকবিতণ্ডার পর পাকিস্তানি সেনারা সারেন্ডার করতে রাজি হয়েছিল ঠিকই কিন্তু দুঘণ্টা সময় চেয়েছিল। তখনই বাড়ির ভেতর থেকে তারা সবাই মিলে ভারতীয় সেনাদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন ওদেরকে যাতে সময় দেয়া না হয়। কারণ এরই মধ্যে বাড়ির ভেতরের বন্দিরা বুঝে গিয়েছিলেন, ওরা এই সময়টা পেলেই সবাইকে মেরে ফেলবে। তখন ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন মেজর অশোক। তাদের অনুরোধ শুনে তিনিও সবকিছু বুঝে গিয়েছিলেন। তাই আর পাকিস্তানিদের সময় দেননি। ভারতীয় সেনারা নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করে পাকিস্তানিদের মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যে সারেন্ডার করতে বাধ্য করেছিলেন। সেই সময় আবারও তারা সবাই সাহসী হয়ে উঠেছিলেন।

সবাই মিলে ছুটে চলে এসেছিলেন বারান্দায়। আর তখনই দেখতে পেলেন, একে একে পাকিস্তানিরা অস্ত্র ফেলে সারেন্ডার করছে। সঙ্গে সঙ্গেই বেগম মুজিবের নির্দেশে নামিয়ে ফেলা হলেঅ পাকিস্তানের পতাকা। তারপর সেই পতাকা পায়ের নিচে ফেলে মাড়িয়ে মাড়িয়ে রাগ মিটাতে চাইলেন বঙ্গবন্ধুপত্নী। তবু তার যেন রাগ মিটতেই চাইছিল না। শেষে ওই পাকিস্তানি পতাকা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললেন। তবুও রাগ কমল না। তারপর সেই পতাকায় ধরিয়ে দিলেন আগুন। এর মধ্যেই চারপাশ থেকে জনতার ঢল নেমে এসেছিল। ছুটে এসেছিলেন সাংবাদিকরাও। মুক্ত হবার আনন্দে তখন তাঁরা সবাই আনন্দের কান্না জুড়ে দিয়েছিলেন। চোখে পানি আর মুখে হাসি নিয়ে স্লোগান দিয়েছিলেন-‘জয় বাংলা।’

স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য আজীবন লড়াই করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর বঙ্গবন্ধুর পরিবার ছিল সে লড়াইয়ের অংশীদার। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা তারা যে কষ্ট করেছিলেন, যে বন্দি জীবন-যাপন করেছিলেন, সেটাও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অংশ হয়ে থাকবে চিরদিন।

সহায়ক:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ -এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া। দি ইউনাইটেড প্রেস লিমিটেড, দ্বিতীয় মুদ্রণ মার্চ, ১৯৯৩

লেখক: আহমেদ রিয়াজ, শিশুসাহিত্যিক, কলাম লেখক।


সর্বশেষ - রাজনীতি