এখানে মানবতার কথা না ভাবলেও মানবতার প্রতি অবিচার হবে না। খালেদা জিয়া মানবতার সুবিধা প্রাপ্তির যোগ্য কিনা এর পক্ষে বিপক্ষে বিরাট লম্বা তর্ক বিতর্কের কোন দরকার আছে বলে মনে হয় না, শুধু এটাই যথেষ্ঠ যে খালেদা জিয়া কখনো মানবিক ছিলেন না, তিনি কি “ধারের নুন” ফেরত দিবেন না? বেগম জিয়া কি মানবিক সুবিদা পাওয়ার যোগ্যতাই রাখেননা।
একজন অসভ্য ধরনের মানুষ অসুস্থ হলে নিষ্পাপ হয়ে যায় না, এমনকি মারা গেলেই সব বিতর্কের উর্ধ্বে উঠে যায় না। ধর্ম মতের হিসেবে মানুষের কৃতকর্ম যদি হয় পরকালে জান্নাত জাহান্নামে যাওয়ার মাফ কাঠি, তাহলে স্বাভাবিক নিয়মেই প্রশ্ন আসে, জীবিত কালে কোন অসভ্য লোক অসুস্থ হলেই কিভাবে নিষ্পাপ ফেরেস্তা হয়ে উঠে? যদি তাই না হয়, তাহলে খালেদা জিয়ার করে আসা কৃতকর্মের ফলে কিভাবে বেগম জিয়ার জন্য কিংবা স্বয়ং বেগম খালেদা জিয়া মানবতা আশা করতে পারে?
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে খালেদার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য ছাড়িয়ে গেছে সকল মুর্খতা,অজ্ঞতার রেকর্ড। চিকিৎসা বিজ্ঞানকে নয়া পল্টনের লাল বোতলে অচল করে রেখে বলা হচ্ছে বিষ প্রয়োগে খালেদার লিভার সিরোসিস হয়ে গেছে, এগুলো কি তাদের পাগলামি না গোড়ামী তা বোধহয় জানেন না বিএনপির নেতারা।
বিষ প্রয়োগে মানুষ মারা যাবে নিশ্চিত। সরকার যদি কারাগারে খালেদাকে বিষ প্রয়োগ করতো, তাহলে খালেদা জিয়া এখনো লিভার সিরোসিস নিয়ে বেচেঁ আছে কিভাবে? চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে নিয়মিত অনিয়ন্ত্রিত এলকোহল পানে লিভার সিরোসিস হয়। প্রশ্ন হচ্ছে জেল খানায় কারাবিধিতে কয়েদিকে মদ সরবরাহ কেমনে সম্ভব? সরকার একজন কয়েদির পিছনে প্রতিদিন ভাত মাছ মাংস খাইয়ে আবার বিদেশী মদ খাওয়াবে কেন?
শুধু তাই নয়, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে খালেদার কিছু হলে দেশ বিলুপ্ত হবে, গজব নেমে আসবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এটা কেমন গাজাখুরি গল্প? এটাও বিশ্বাস করতে হবে? তারপরেও বিশ্বাস করলাম, খালেদার কিছু হলে দেশ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে খালেদা জিয়া কি অমরত্ত্বের সুধা পান করেছিলো জাঞ্জুয়ার কাছ থেকে?
তৃতীয় যে বিষয় তা না বললেই নয়, মুর্খতা যদি থাকে কারো বড় অস্ত্র, তাকে ইশারা তো আজাইরা, ধাক্কা দিয়েও আপনি বুঝাতে পারবেন না। দেখুন আপনি একটা ভুখন্ডে থাকলে, ঐ ভুখন্ডের নিদৃষ্ট কিছু নিয়ম নীতি আপনাকে মান্য করতেই হবে। বাহিরে নয় খালেদা জিয়া যেহেতু এই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, কাজেই উনি বা উনার ক্ষেত্রে ভুখন্ডের নিয়ম নীতি পালন অন্য যেকোন সাধারন মানুষের চেয়েও বাধ্যতামুলক। এই ভুখন্ডে আইন আছে, কোন অপরাধী বিচারাধীন বা সাজাপ্রাপ্ত কি কি করতে পারবে বা কি কি করতে হবে তার একটা লিখিত রুপ আছে।
আজকে বিএনপি বলছে এই সরকার অবৈধ, কাজেই খালেদা জিয়ার সাজাও অবৈধ। মানলাম সরকার ও বিচার এবং সাজা অবৈধ, প্রশ্ন হচ্ছে, এই অবৈধ সরকারের অধীনের বিচারে খালেদা জিয়ার বিচারের সময় আদালতে খালেদার পক্ষে খালেদাকে নির্দোষ প্রমানের জন্য খালেদার দল বিএনপি কয়েক ডজন আইনিজীবি যে দাঁড় করিয়েছিলো, তারা কেন খালেদার পক্ষে ওকালতি করেছিলো? তারা কেন নিন্ম আদালত, উচ্চ আদালতে খালেদার জন্য লড়াই করেছিলো? যেখানে বিএনপির দাবী মতে সরকার অবৈধ, আদালত অবৈধ। সেখানে সেই অবৈধ সরকারের অবৈধ আদালতে বিএনপি কেন আইনজীবি পাঠিয়ে খালেদার জন্য ওকালতি করিয়েছিলো? এর মানে কি? বিএনপি নিন্ম আদালত মেনেছে, উচ্চ আদালত মেনেছে, এখন সরকারের ইশারা দেখিয়ে দেওয়া পথ রাষ্টপতির কাছে সকল অভিযোগ মেনে নিয়ে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়াটাতে সমস্যা কোথায়? আর এই ক্ষমা ভিক্ষাতে যদি সমস্যা থাকে তাহলে নিন্ম আদালত উচ্চ আদালতে আর্জি নিয়ে গিয়েছিলো কেন বিএনপির মুর্খরা?
চতুর্থতো হচ্ছে জাঞ্জুয়ার সুধা পান করা অমরত্ত্ব খালেদার চিকিৎসার সমাধান তো আছে, যেখানে নিয়ম মেনে বিএনপি খালেদার হয়ে রাষ্টপতির কাছে সকল দ্বায় স্বীকার করে ক্ষমা ভিক্ষার আবেদন করলে, আমার বিশ্বাস ২৪ ঘন্টার কম সময়ের মধ্যে খালেদা বিদেশে বা মজ্ঞলগ্রহেও চলে যেতে পারে চিকিৎসার জন্য, সেখানে বিএনপি এটা না করে, কেন রাস্তায় রাস্তায় নিজেদের মুর্খতা ছড়াচ্ছে।
বিএনপি আবার রাস্তায় কালেমা পড়তে পড়তে রাজনীতি করছে, ধর্মীয় বিধানমনে খালেদা জিয়ার জন্য যা কিছু চায় করতেই পারে, তবে রাস্তায় কেন। খালেদার প্রতি মায়া থাকলে কালেমা-দোয়া মাহফিল এগুলো তো যার যার বাসায় করার কথা। এটা পরিষ্কার যে খালেদা জিয়ার মৃত্যু নিয়েও বিএনপি রাজনীতি করছে, যেমনটা করাচ্ছে তারেক রহমান।
শেষ কথা হলো, মানুষ যখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে থাকে তখন আহত ব্যাক্তি বা তার আত্মীয় স্বজন পরিবার পরিজনের আচার আচরনে চরম নমনীয়তা বাধ্যতামূলক হয়ে উঠে। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে থাকা খালেদার নমনীয়তা এখন কেমন তা বলতে পারবো না, তবে বিএনপি নেতাদের যা আচার আচরন বা মারমুখী ভঙ্গিমা তাতে করে এটা স্পষ্ট খালেদা জিয়া বা বিএনপি মানবতা পাওয়ার যোগ্য নয়, তারা মানবিকতা ডিজার্ভ করে না। তাদের নেত্রীর মৃত্যু এভাবেই হওয়া উচিত ঠিক যেভাবে চাচ্ছে খালেদা তারেক ও বিএনপি।