ইসলামের ভিত্তি হলো কোরআন ও হাদিস। এ দুটিকে অস্বীকার করলে কি কেউ মুসলমান থাকে? কিন্তু জামায়াত-শিবিরের আদর্শিক গুরু সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী অস্বীকার করেছে। সে নবীগণকে চরিত্রহীন, গুনাহগার বলেছে।
হাদিস মোতাবেক,
“মুঠো পরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। কাটছাঁট করে এক মুঠোর কম রাখা হারাম।” (বুখারি শরীফ, পৃষ্ঠা-৭৫; মুসলিম শরীফ, পৃষ্ঠা-১২৯, আবুদাউদ শরীফ, পৃষ্ঠা-১২১)।
মওদুদীর মতে―
“দাড়ি কাটছাঁট করা জায়েয। কাটছাঁট করে এক মুঠোর কম হলেও অসুবিধা নেই। নবী যে পরিমাণ দাড়ি রেখেছেন সে পরিমাণ দাড়ি রাখাকে সুন্নত বলা এবং এর অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে মারাত্মক অন্যায়। (রাসায়েলে মাসায়েল : ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৪৭)।
হাদিস মোতাবেক,
“মুহাম্মদের (স.) স্বভাব-চরিত্র-অভ্যাস তার উম্মতদের অনুকরণের জন্য উত্তম নমুনা বা সুন্নত।’ (বুখারি শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১০৮৪)। অথচ মওদুদীর মতে―“নবীর আদত (অভ্যাস), আখলাককে (চরিত্র) সুন্নত বলা এবং তা অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে সাংঘাতিক ধরনের বিদায়াত (গর্হিত কাজ)।” (রাসায়েলে মাসায়েল, পৃষ্ঠা-২৪৮)।
হাদিস মতে,
“রমজান মাসের সেহরির শেষ সীমা সুবহে-সাদিক। সুবহে-সাদিক হওয়ার পর পানাহার করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।” (তিরমিযী শরীফ, পৃষ্ঠা-১২৫)। মওদুদীর মতে―“সাহরীর জন্য এমন কোন শেষ সীমা নির্দিষ্ট নেই, যার কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিট এদিক-ওদিক হলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।” (তাফহীমুল কুরআন, ১ম খন্ড, ১৪৬ পৃষ্ঠা)।
নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ―এই হলো ইসলামী আকিদা বা বিশ্বাস। কোরান হাদিস নবীদেরকে নিষ্পাপ বলেই ঘোষণা করেছে। কিন্তু মওদুদী এ কথা স্বীকার করতে নারাজ। ইসলামের বদ্ধমূল এ আকিদাকে অস্বীকার করে নবী মুসা সম্পর্কে মওদুদী বলেছে
―‘নবী হওয়ার পূর্বে মুছা (আ.) দ্বারা একটি বড় গুনাহ হয়েছিল। তিনি এক ব্যাক্তিকে কতল করেছিলেন।’ (রাসায়েল ও মাসায়েল, ১ম খ-, পৃষ্ঠা-৩১) । “মুছা (আ.) এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ অধৈর্য্যশীল বিজয়ীর মত যে তার শাসন ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত না করেই মার্চ করে সম্মুখে চলে যায় আর পিছনে ফেলে যাওয়া এলাকায় বিদ্রোহের দাবানল দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে।” (তরজমানুল কোরআন ২৯/৪-৫)। উল্লেখ্য, কোরআন মোতাবেক মুসার এই হত্যাকা-কে গুনাহ বলা হারাম। কিন্তু মওদুদী এটাকে গুনাহ বলেছে।
নবী ইব্রাহিম সম্পর্কে মওদুদী বলেছে
―“এখানে আর একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয় যে, হযরত ইব্রাহিম (আ.) যখন নক্ষত্র দেখে বলেছিলেন, এটা আমার প্রতিপালক এবং চন্দ্র-সূর্য দেখে এগুলোকেও নিজের প্রতিপালক হিসাবে অবহিত করেন, তখন সাময়িকভাবে হলেও কি তিনি শিরকে নিপতিত হননি?” (তাফহিমুল কোরআন ১ম খ-, পৃষ্ঠা-৫৫৮)।
নবী ঈসা সম্পর্কে মওদুদী বলেছে
―“হযরত ইসা (আ.) মারা গেছেন একথাও বলা যাবে না, বরং বুঝতে হবে ব্যাপারটি অস্পষ্ট।” (তাফহিমুল কোরআন ১ম খ-, সুরা নিসা, পৃষ্ঠা-৪২১)।
নবী ইউসুফ সম্পর্কে মওদুদী বলেছে
―“হযরত ইউসুফ (আ.) ‘আমাকে মিসরের রাজকোষের পরিচালক নিয়োগ করুন’- এ কথাটি বলে শুধু অর্থমন্ত্রী হওয়ার জন্যই প্রার্থনা করেননি। কারো কারো ধারনা, বরং তিনি এ বলে ডিকটিটরিই চেয়েছিলেন মৌলিকভাবে। এরই ফলশ্রুতিতে বর্তমান ইতালির মুসোলিনির যে মর্যাদা তিনিও এর কাছাকাছি মর্যাদার অধিকারি হয়েছিলেন।” (তাফহীমাত : ২য় খ-, পৃষ্ঠা-১২২, ৫ম সংস্করণ এবং নির্বাচিত রচনাবলী (বাংলা) ২য় খ-, পৃষ্ঠা-১৫১, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করণ ১৯৯১)।
সকল নবী-রাসুল সম্পর্কে মওদুদী বলেছে
―“ইসমত বা নিষ্পাপ হওয়াটা মুলত নবীদের প্রকৃতিগত গুণ নয়। এখানে একটি সুক্ষ্ম বিষয় এই যে, আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করেই প্রত্যেক নবীর উপর থেকে কোন না কোন সময় তার হেফাজত উঠিয়ে নেন এবং তাদেরকে দু-একটি গুনাহে লিপ্ত হতে দেন। যাতে করে মানুষ যেন খোদা বলে ধারনা না করে এবং জেনে রাখে এরাও মানুষ।” (তাফহীমাত : ২য় খ-, ৪র্থ সংস্করণ, পৃষ্ঠা- ৫৬/৫৭ এবং নির্বাচিত রচনাবলী (বাংলা) ২য় খ-, পৃষ্ঠা-৭৪, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করণ অক্টোবর ১৯৯১)।
মওদুদীর মতে,
“বস্তুত নবীগণ মানুষ হয়ে থাকেন এবং কোন মানুষই মুমিনের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ মাপকাঠিতে সর্বদা অটল থাকতে সক্ষম হতে পারে না। প্রায়শই মানবীয় নাজুক মুহূর্তে নবীর ন্যায় শ্রেষ্ঠ মানুষও কিছুক্ষণের জন্য মানবিক দুর্বলতার সামনে পরাভূত হয়ে যান।” (তাফহিমুল কোরআন ২য় খ-, পৃষ্ঠা-৩৪৩-৩৪৪, সংস্করণ ১৯৯০ইং)। তার মানে নবীগণও মাঝেমধ্যে চরিত্রহীন হয়ে পড়েন। সে আরো বলেছে―“কোন কোন নবী দ্বীনের চাহিদার উপর স্থির থাকতে পারেননি। বরং তারা আপন মানবীয় দুর্বলতার কাছে হার মেনেছেন।” তার মানে চরিত্রহীন, গুনাহগার ইত্যাদি হয়েছেন। (তরজমানুল কোরআন, ৩৫ তম সংখ্যা, পৃষ্ঠা-৩২৭)। মওদুদী আরো বলেছে―“অন্যদের কথা তো স্বতন্ত্র, প্রায়শই পয়গম্বরগণও তাদের কুপ্রবৃত্তির মারাত্মক আক্রমণের সম্মুখিন হয়েছেন।” [তাফহীমাত : ২য় খ-, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-১৯৫, এবং নির্বাচিত রচনাবলী (বাংলা) ২য় খ-, পৃষ্ঠা-২৮, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করণ ১৯৯১)। তার মানে নবীগণও মাঝেমধ্যে চরিত্রহীন হয়েছেন।
মওদুদী নবীদের চরিত্র নিয়ে এসব কথা লিখেছে। তার মানে মওদুদী বললে দোষের কিছু নয়, ব্লগাররা বললে দোষ! যে মওদুদী হাদিসের বাণীকে অস্বীকার করেছে, নবীদেরকে চরিত্রহীন বলেছে, তাদের দুর্নাম করেছে সে কি আর মুসলমান? সে কি ইমানদার? তারা অনুসারীরাও কি মুসলামান? ইমানদার? মোটেই না। মওদুদীর অনুসারী জামায়াত-শিবিরকে কোনোভাবেই মুসলমান বলা যায় না। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অবশ্যকর্তব্য এই জামায়াত শিবিরকে সর্বাত্মকভাবে পরিত্যাগ করা। ইসলামের স্বার্থে। সময় এসেছে এদেরকে ঠেকানোর।
কোরআন , হাদিস, নবী রাসুলের অবমাননাকারী যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে ইসলামের স্বার্থেই পরিত্যাগ করতে হবে।