দেশের ‘সবচেয়ে দীর্ঘ’ সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে রাঙামাটির দুর্গম জুরাছড়ি উপজেলায়।
বুধবার জুরাছড়ি ইউনিয়নের সুবলং বনবিহারে এই বুদ্ধমূর্তি উদ্বোধন করার পর সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয় বলে বিহার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
কোনো সরকারি সহায়তা ছাড়া প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে ১২৬ ফুট দীর্ঘ এই মূর্তি নির্মাণ করা হয় বলেও তারা জানান।
বিহার কর্তৃপক্ষ জানায়, সাড়ে ১২ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত জুরাছড়ি উপজেলার সুবলং শাখা বনবিহার। পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পরমপূজ্য বনভন্তের স্মৃতি-স্মারক হিসেবে জুরাছড়ি উপজেলার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ ও এ উপজেলা থেকে হওয়া ভিক্ষুগণ (বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু) দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ও দীর্ঘতম সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের উদ্যোগ নেন ২০১২ সালে।
২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ শুরু হয় এবং ২০২১ সালের শেষ দিকে নির্মাণকাজ শেয় হয়।
বিহার সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বুদ্ধমূর্তির স্থপতি ছিলেন বিশ্বজিৎ বড়ুয়া, প্রতিপদ দেওয়ান ও দয়াল চন্দ্র চাকমা। প্রকৌশলী ছিলেন তৃপ্তি শংকর চাকমা এবং অঙ্কনের দায়িত্বে ছিলেন বিমলানন্দ স্থবির।
বিহারে নির্মিত বুদ্ধমূর্তির নিরাপত্তায় বিহারের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ও বিহারের আশপাশের এলাকায় ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা হয়েছে।
সুবলং শাখা বনবিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ধল কুমার চাকমা বলেন, বনভন্তের স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে একটি বড় বুদ্ধমূর্তি করা হয়। স্থানীয় লোকজন এর নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করেছেন। এই নির্মাণ কাজে কোনো সরকারি সহায়তা ছিল না।
“বুদ্ধমূর্তিটি বিহারে নির্মিত হলেও জনসাধারণের জন্য এটি পরিদর্শন উন্মুক্ত থাকবে।”
জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা জানিয়েছেন, জুরাছড়ির সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তিটি দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি। এখানকার বাসিন্দা এবং বিভিন্ন জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ বিশিষ্টজনেরা এতে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।
রাঙামাটির জেলা পরিষদ সদস্য প্রবর্তক চাকমা বলেন, জুরাছড়ির মানুষ শ্রদ্ধেয় বনভন্তের স্মৃতি স্মরণে এই বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ করেছেন।
“দেশের সবচেয়ে বড় ১২৬ ফুট দীর্ঘ এই সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি দেখতে দুর্গম জুরাছড়িতে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেক লোক আসবে। প্রচুর পর্যটক আসবে; যার ফলে স্থানীয়ভাবে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।”
জুরাছড়ির বাসিন্দা ত্রিনয়ন চাকমা জানান, জুরাছড়ির হাজার হাজার মানুষ দূর-দূরান্তের ঝিরি থেকে পাথর এনে শ্রম দিয়েছেন। এরপর স্থানীয়ভাবে অর্থ উত্তোলন শুরু হয়। ধর্মপ্রাণ মানুষের দেওয়া অর্থেই এই কাজটি করা হয়েছে। জুরাছড়ির মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত উপাসক-উপাসিকা, দায়ক-দায়িকাগণ বুদ্ধমূর্তি নির্মাণে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।