সারা দেশব্যাপী চলছে পরিবহন ধর্মঘট। এতে বিপর্যস্ত জনজীবন, ভোগান্তিতে নাগরিকেরা। ইতোমধ্যে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাত ব্যাঙ্কের সম্মিলিত চাকুরির পরীক্ষা সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক বহু ব্যক্তি। পেছানো হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষার সময়সূচীও।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে পরিবহন মালিকদের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে। কেননা, তাদের মূল যে দাবী, অর্থাৎ ভাড়া বাড়ানোর দাবী তা কতটা যৌক্তিক তা ইতোমধ্যে প্রশ্নের সম্মুখীন। বিশ্লেষক মোহাম্মদ এ আরাফাতের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে তেমনই কিছু তথ্য। নীচে হুবুহু তুলে ধরা হলো।
“ডিজেলের মূল্য ও যানবাহনের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত কিছু তথ্য: ডিজেল এর মূল্য প্রতি লিটারে বেড়েছে ১৫ টাকা। যদি প্রতি লিটার ডিজেলে একটি যানবাহন ৪ কিলোমিটার চলে, তাহলে যানবাহন চলাচলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ বেড়েছে টাকা ৩.৭৫ (তিন টাকা পঁচাত্তর পয়সা)। ৪০ জন যাত্রীর একটি বাসে একজন যাত্রীর ১০ কিলোমিটার চলাচল এর জন্য জনপ্রতি ভাড়া বাড়বে ০.৯৩ পয়সা (তিরানব্বই পয়সা)। একটি পণ্যবাহী ট্রাকে ৫ টন অথাৎ ৫০০০কেজি। এক কেজি পণ্য পরিবহনে ১০ কিলোমিটার এর জন্য ভাড়া বাড়বে ০.০০৭৫ পয়সা। (mileages 4 KM per liter)। একটি পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলাচলে ডিজেল খরচ বাড়বে ৯৩৭ টাকা, অথাৎ ৫০০০ কেজি পণ্য পরিবহনে খরচ বাড়বে ৯৩৭ টাকা, প্রতি কেজি পণ্য পরিবহনে বাড়বে ০.১৮৭৪ পয়সা (আঠারো পয়সা)।
একটি বাস ও ট্রাক দৈনিক ৫০০ কিলোমিটার চলাচল করলে ১৫ টাকা হিসাবে ১৮৭৫ টাকা এবং প্রতি কিলোমিটার এর জন্য খরচ বাড়বে ৩.৭৫ (তিন টাকা পঁচাত্তর পয়সা)। অথচ, যানবাহন মালিকগন যে ভাবে দাবি তুলেছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বর্তমানে পরিবহন মালিকগন যে পরিমান ভাড়া আদায় করছে, সেই হিসাব মিলালে আসল তথ্য উদঘাটন হবে।
উল্লেখিত তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করে এবং ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পর বর্তমান ডিজেলের দামের সাথে সঙ্গতি রেখে ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। অযৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া উচিৎ হবে না।”
এই বিশ্লেষণ বর্তমান বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই করা এবং তা পরিবহন মালিকদের দাবীর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন জাগায়।
বাংলাদেশে বরাবরই সরকারের বিশেষ মনোযোগ ও আনুকুল্য পাওয়া খাত এই পরিবহন খাত। অথচ তা সত্ত্বেও এই খাতের সেবার মান ও ব্যয় নিয়ে জনমনে প্রবল অসন্তুষ্টি বহু দিনের। এর মাঝেই পরিবহন মালিকদের নতুন করে নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া বৃদ্ধির এই দাবী কতটা যৌক্তিক তা যেমন ভাবার বিষয়, ঠিক তেমনি এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যও আজ প্রশ্নের মুখে।
সব কিছুর সুষ্ঠু সমাধান হোক, নাগরিক হয়রানি কমুক এটাই এই মুহুর্তের প্রত্যাশা।