কালের আবর্তনে বছর ঘুরে আবার এসেছে ৩ নভেম্বর, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালনকারী জাতীয় চারনেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে নির্মমভাবে হত্যার এক ভয়াল স্মৃতিবিজড়িত দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করেছিল যে ঘাতক চক্র, সেই একই চক্রের হাতে নিহত হলেন বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চারনেতা তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামান।
‘জেলহত্যা দিবস’ নামে পরিচিত ৩ নভেম্বর দেশকে ইতিহাসের এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়ে দেয়, যেখানে আমাদের জাতিসত্তা এবং মুক্তিযুদ্ধের মহত্তম অর্জন সবচেয়ে কঠিন সংকটের মুখোমুখি হয়। সেদিনের সেই নৃশংস ঘটনা তথা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে হত্যার বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শুধু নয়, জাতীয় ইতিহাসেরও এক ভয়ংকর বাঁক ফেরানো অধ্যায়।
পাকিস্তানি শাসকদের চরম বৈষম্য আর সাম্প্রদায়িকতা, সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ তেইশ বছর জীবন-যৌবন বাজি রেখে লড়াই করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধু যে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে, সেই স্বাধীন সার্বভৌম মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকেই পাল্টে দিয়েছিল ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে আর ৩ নভেম্বরের জাতীয় চারনেতাকে হত্যাকারী ও তাদের দোসররা। জেল হত্যাকাণ্ড না ঘটলে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তারা হয়তো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশটাকে ধরে রাখতে পারতেন।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছিল তারা মূলত একাত্তরের পরাজিত শক্তিকেই পুনরুজ্জীবিত করেছিল। যে কারণে বঙ্গবন্ধু-হত্যার সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেল বাংলাদেশ। ফিরে এল মৃত পাকিস্তানের স্লোগান ‘জিন্দাবাদ’ আর শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধের পরম মিত্র ভারতবিদ্বেষ।
জুজুর ভয় দেখানো পুরোনো সেই ভারত-বিদ্বেষী পাকিস্তানি রাজনীতি। রেডিও পাকিস্তানের আদলে বাংলাদেশ বেতার ‘রেডিও বাংলাদেশ’, জয়বাংলা হয়ে গেল ‘জিন্দাবাদ’। যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি বাহান্নর ভাষা আন্দোলন আর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করল, সেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ মুছে দিয়ে সংবিধানে আমদানি করা হলো ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’।
১৫ আগস্ট আর জেলহত্যা দিবসের প্রভাব যে কত সুদূর প্রসারী, তা আজ বাংলাদেশের মানুষ মর্মে মর্মে টের পাচ্ছেন। সচেতন মানুষমাত্রই উপলব্ধি করবেন যে, ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পর জেনারেল জিয়ার উত্থান আর বিশ শতকের বাঙালি মীরজাফর খন্দকার মোশতাকের রাষ্ট্রপতি বনে গিয়ে বঙ্গভবনে চেয়ার দখল ছিল সাময়িক ব্যাপারমাত্র।
কেননা ৩ নভেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছিল, মুক্তিযুদ্ধের অনুরাগী কোটি কোটি মানুষ আবার নতুন আশায় জেগে উঠেছিল।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খণ্ড মিছিলও বেরিয়েছিল। খন্দকার মোশতাক যাদের নির্দেশনায় পুতুল রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী সেই খুনি মেজররাও আঁতকে উঠেছিল।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন ৩ নভেম্বর দিনের বেলায় ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান এবং দিনশেষে গভীর রাতে কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চারনেতাকে হত্যা একই সূত্রে গাঁথা। কারণ, খুনি মেজররা এবং তাদের নেপথ্যের পৃষ্ঠপোষকরাও জানত কারাগারে বন্দি জাতীয় চারনেতা সু্যোগ পেলেই আবার বঙ্গবন্ধুর বাস্তবায়ন ঘটাতে পারেন। যে কারণে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে- হত্যার এক সপ্তাহের মধ্যেই তার বিশ্বস্ত সহচর জাতীয় চারনেতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটকে রাখা হয়। খন্দকার মোশতাক গং জাতীয় চারনেতারও আনুগত্য এবং সমর্থন চেয়েছিল। কিন্তু
নীতির প্রশ্নে অটল এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল জাতীয় চারনেতাকে ক্ষমতা দখলকারীচক্র কিছুতেই টলাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার নেপথ্যের পরিকল্পক খুনি মোশতাকের ক্ষমতাকে তারা বৈধতা দেননি, মেনেও নেননি। সে কারণেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি হানাদার সেনারা গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পর যেভাবে এই চারনেতা তার আদর্শ ও নির্দেশনা শিরোধার্য করে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে কঠোর শ্রম, নিষ্ঠা আর দেশপ্রমে বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করেছিলেন, একইভাবে মীরজাফর চক্রও চিরবিদায় নিতে বাধ্য হতো যদি জীবিত থাকতেন তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। তাদের হত্য করা না হলে বাংলাদেশের সর্বনাশ আরও অনেক কম হতো।
জাতীয় চারনেতা বেঁচে থাকলে জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা দখল, সংবিধানের পাতা থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মুছে দিয়ে পাকিস্তানের আদলে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদ পরিবর্তনের কোনোকিছুই সম্ভব হতো না। যদি ৩ নভেম্বর সন্ধ্যার মধ্যেও খালেদ মোশাররফ জাতির উদ্দেশে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে একটি ভাষণ দিয়ে দেশবাসীকে তার অভ্যুত্থানের পুরো বিষয়টি অবহিত করতে পারতেন, তাহলে ইতিহাস হতে পারত অন্যরকম।
লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধা সেদিন ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেন মীরজাফর মোশতাক সরকারকে উৎখাতের জন্য। কিন্তু কেন যে সেদিন তিনি তা করলেন না! দুভার্গ্য, দেশবাসী তা জানার সুযোগ পেল না। বিনা বাধায় খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান সম্পর্কে অপপ্রচার চালিয়ে তাকে হত্যা করল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সামরিক প্রতিপক্ষ তথা ভারতবিদ্বেষী জেনারেল জিয়ার অনুসারীরা।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দ্রুত যে পট পরিবর্তন এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান, সে উত্থানকালে মুক্তবুদ্ধির মানুষ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন- বঙ্গবন্ধুর পর তার বিশ্বস্ত সহকর্মী জাতীয় চারনেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটিকেই (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) নেতৃত্বশূন্য করে ফেলা হলো।
খুনিচক্র এটা বুঝেছিল যে, জাতীয় চারনেতার যদি একজনও বেঁচে থাকেন, তাহলে যেকোনো ঘটনাই তারা ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। যে কারণে কিলিংমিশন শেষ করে জেলগেট থেকে আবার ফিরে গিয়ে গুলিবিদ্ধ তাজউদ্দীন আহমেদকে বেয়নেট চার্জ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে এসেছিল ঘাতকচক্র।
১৯৭১ সালে এই জাতীয় চার নেতাই নানা প্রতিকূলতা উজিয়ে মুক্তিযুদ্ধ এগিয়ে নিয়েছিলেন দক্ষতার সঙ্গে। আর সে কারণেই বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র তিন মাসের মধ্যে অকালে জাতীয় চারনেতার বিদায় সুস্থ রাজনৈতিক ধারাকে এমনই বিকলাঙ্গ করে দিয়েছে, যার ভোগান্তি আজও ভুগছে বাংলাদেশ।
উদার গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামরিক শাসন আর হত্যা ক্যু, পাল্টা ক্যুর মধ্য দিয়ে যে বিভক্তি সৃষ্টি হলো- মূলত তাই-ই মুক্তিযুদ্ধের রক্তফসল সেক্যুলার এই রাষ্ট্রটিকে একাত্তরের ঘাতকদের চারণভূমিতে পরিণত করে দিল।
সেজন্যই সৌভাগ্যক্রমে দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যাওয়া জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার পরও একুশটি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে তার আপন পথে পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে।
১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর পাকিস্তানি ভাবধারার বাংলাদেশকে আবার তার মুক্তিযুদ্ধের পথে ফিরিয়ে আনার মতো দুঃসাধ্য-প্রায় কাজটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন অনেকটা গুছিয়ে আনতে সক্ষম হলেন, ঠিক তখনই আর এক ষড়যন্ত্রের জাল বুনল মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাবিরোধী চক্রটি।
দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে এমন এক প্রহসনের নির্বাচন করল ২০০১ সালে, যা দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকেই অসার প্রমাণ করে ফেলে। ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে বাংলাদেশ আবার চলে যায় স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে।
একাত্তরেরর রাজাকার-আলবদর নেতাদের গাড়িতে উঠল জাতীয় পতাকা! একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধীরাও পবিত্র জাতীয় সংসদ আর মন্ত্রিসভাকে করল কলঙ্কিত। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সেই দুঃস্বপ্নের মতো পাঁচটি বছরের গ্লানি কোনোদিন মুছে ফেলা সম্ভব হবে না।
মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে তার আপন পথে ফিরিয়ে আনার সুযোগ আবার সৃষ্টি হয় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে। গত একযুগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির যে স্বর্ণসোপানে আরোহন করেছে বাংলাদেশ, তা আজ বিশ্ববাসীর কাছেও পরম বিস্ময়।
উন্নয়নের নানা মানদণ্ডে অর্জনের মহিমায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বময় উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আজ বিশ্বের বরেণ্য নেতা। কিন্তু এই গৌরবের বাংলাদেশ যারা চায় না, সাম্প্রদায়িকতায় তাদের আস্থা, তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। দেশ-বিদেশে তারা এখনও সক্রিয়। এখনও তারা আরও একটি একুশে আগস্ট সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই এবারের ৩ নভেম্বর তথা জেলহত্যা দিবসের তাৎপর্য অন্যরকম।
এবারের জেলহত্যা দিবস আমাদের সতর্ক হবার প্রেরণা জোগাবে। ১৯৭৫ সালে ইতিহাসের ভয়ংকর বাঁক বদলের মতো সর্বনাশের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। কারাগারের মতো নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে যখন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাকের টেলিফোন-নির্দেশে জেলে জাতীয় চারনেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, তখন বুঝতে বাকি থাকে না স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের নৃশংসতার মাত্রা কী!
খন্দকার মোশতাক আওয়ামী লীগে ছিলেন একথা ঠিক, কিন্তু ছিলেন পাকিস্তানের এজেন্ট হয়ে, যেমন ছিলেন জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হয়েও, সময়মতো বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি তথা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ মুছে দিয়েছেন এবং পঁচাত্তরের খুনিদের বিচারের পথ আইন করে বন্ধ করেছিলেন।
আজ ৩ নভেম্বর ইতিহাসের সেই কালো অধ্যায় স্মরণ করার দিন। আজ বাঙালির প্রগতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনাশ করতে চায় যারা তাদের নতুন করে প্রজন্মের কাছে চিনিয়ে দেবার দিন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি যারা করতে চান সেই তরুণ প্রজন্মকে জানিয়ে দিতে হবে- আদর্শের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের মূল দর্শনের প্রতি কতখানি অবিচল আস্থা থাকা উচিত।
নিজের জীবনও যে আদর্শের কাছে তুচ্ছ তার স্বাক্ষরতো রেখেই গেছেন জাতীয় চারনেতা। গভীর শ্রদ্ধায় আজ তাদের স্মরণ করি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করেন, তাদের জন্য নিজের স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থ যে অনেক বড় সেই প্রেরণা হোক বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চারনেতার মহত্তম আত্মত্যাগ।
লেখক: নাসির আহমেদ, কবি ও সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক পরিচালক (বার্তা) বাংলাদেশ টেলিভিশন। উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক দেশের কণ্ঠ।