বাংলাদেশে চিংড়ির মত কাঁকড়া এক অমিত সম্ভাবনার নাম। উপকূলীয় অঞ্চলে রয়েছে এর এক বিশাল ভাণ্ডার। এ খাত থেকে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা বৈদাশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। যেনতেনভাবে এ সম্পদ থেকে বছরে শত কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। সম্ভাবনাময় জলজসম্পদ কাঁকড়ার আহরণে যদি আধুনিকায়নের ছোয়া দেয়া যায় তাহলে এটি হতে পারে দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ার। এ খাতকে সামনে রেখে বিরাট সাফল্য বয়ে আনা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
সুন্দরবনের শত শত নালা ও খালে এবং সমুদ্র জলসীমা ও মোহনায় প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কাঁকড়া আহরণ চলছে। তবে গত বছর জলদস্যুদের উৎপাতে অন্যান্য বছরের তুলনায় কম কাঁকড়া আহরিত হয়। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, আধুনিক পদ্ধতি ও আহরণকারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে সরকার প্রতি বছর এ খাত থেকে কয়েকশ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে প্রাকৃতিকভাবে কাঁকড়া আহরণের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঘেরে ও পুকুরে কাঁকড়া উৎপাদন করে অনেকেই সফলতা পেয়েছে। তেমনি বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করলে কাকড়া শিল্প থেকে দেশের একটি উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় হবে।
সূত্র জানায়, প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি দামও বাড়ছে। কিন্তু হ্রাস পাচ্ছে এর উৎপাদন। কাঁকড়া আরোহণ মৌসুমে উপকূলীয় এলাকায় সহস্রাধিক জেলে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্টেশন হতে পাস সংগ্রহ করে গভীর বনে যায় কাঁকড়া আহরণের জন্য। রাজস্ব দিতে হয় জনপ্রতি নৌকাসহ ৩/৫ টাকা। গভীর সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টসহ সমুদ্র পর্যন্ত তারা কাঁকড়া আহরণ করে।কাঁকড়া আহরণকারীরা জানান, জলদস্যুদের উৎপাতের কারণে এবার সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা জেলেদের আগমন কম। ৪/৫ বাহিনীকে চাঁদা দিতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়া জেলে অপহরণ মুক্তিপণ আর মারধরতো আছেই। জেলেরা তাদের আহরিত কাঁকড়া এক’শ থেকে দু’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকে স্থানীয় বাজারে। এর পরে মাছ কোম্পানির ডিপোতে কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানির জন্য চালান প্রস্তুত করা হয়।এছাড়া উপকূলীয় জেলা খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা চিংড়ি ঘেরগুলোতে প্রাকৃতিকভাবেই কাঁকড়া উৎপাদিত হচ্ছে।
সংশিষ্টদের মতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কাঁকড়া রপ্তানি করে আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।জানা গেছে, স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি কাঁকড়ার দাম গ্রেড ভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আশির দশকের শুরুতে প্রথম অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়। রপ্তানি ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে বিদেশে প্রথম কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়। এরপর রপ্তানি বন্ধ থাকে প্রায় তিন বছর।
১৯৮২-৮৩ অর্থ বছরে আবার বিদেশে রপ্তানি করা হয়। পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা বাড়তে থাকে। পাশাপাশি বাড়তে থাকে এখাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আয়। ১৯৯০-৯১ সালে কাঁকড়া রপ্তানি করে আয় হয় ২৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ১৯৯৫-৯৬ অর্থ বছরে রপ্তানি প্রায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ওই অর্থ বছরে ২৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার কাঁকড়া রপ্তানি করা হয় বিদেশে। ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে রপ্তানি হয় ১২৫ কোটি ২২ লাখ ৩৯ হাজার টাকার। ১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছরে কাঁকড়া রপ্তানি করা হয় ১৪১ কোটি ৬৬ লাখ ৬ হাজার টাকা। ২০০১-০২ অর্থ বছরের এ খাত থেকে আয় হয় প্রায় ৫৩ মিলিয়ন টাকা। ২০০২-২০০৩ অর্থ বছরে বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়েছে ৬৩০ মেট্রিক টন। বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় ২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে এই আয় গিয়ে দাঁড়ায় ২০০ মিলিয়ন টাকায়।