সমুদ্র হক ॥ জাতীয় মাছ রূপালী ইলিশ এখন সকলের পাতে পড়ছে। ইলিশ শিকার ২২ দিন বন্ধ রেখে প্রজনন ও ডিম দেয়ার ক্ষেত্র তৈরি করা হয়। প্রজনন মৌসুমে সাগরের লোনা পানি ছেড়ে মা ইলিশের ঝাঁক নদীর মিঠা পানিতে ছুটে আসে। এখন ফিশ স্কুল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ চলে আসছে সাগরের মোহনা মেঘনায়। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে ব্রহ্মপুত্র যমুনা পদ্মা মেঘনাসহ নদ-নদীগুলোতে। জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। যাচ্ছে দেশের সকল বাজারে। চাহিদা মিটছে। দামও সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। মাসখানিক আগে যে ইলিশের দাম ছিল প্রতিটি ৯শ’ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা (সাইজ ও ওজনভেদে) বর্তমানে তা অর্ধেকের কমে নেমে এসেছে। মানুষ ইলিশের স্বাদ নিয়ে রসনা মেটাতে পারছে। গ্রামের মানুষ ইলিশ কিনতে পারছে। অনেকে শুভক্ষণে এক জোড়া করে ইলিশ কিনছে।
প্রজনন মৌসুমে ইলিশ যে ডিম ছেড়েছে তা থেকে পোনা বা জাটকা (ছোট ইলিশ) তৈরি হওয়ার সময় আসছে সামনে। এজন্য ১ নবেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা (১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের নিচে) শিকার প্রচলিত আইনে আইনত দ-নীয় অপরাধ। মৎস্য ভবনের উপ-পরিচালক এ এস এম রাশেদুল হক জানান, উপকূলীয় ইকোসিস্টেম ও ইলিশ সংরক্ষণে অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠাসহ সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়ায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। গত এক যুগে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল সামুদ্রিক জলাশয়ে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮শ’৩৭ মেট্রিক টন ও অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে ৭১ হাজার মে.টন। মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮শ’ ৩৯ মে.টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে সামুদ্রিক জলাশয়ে ২ লাখ ৫৪ হাজার ১শ’ ৯৫ মে.টন ও অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার ৭শ’ ৫৬ মে.টনে পৌঁছে মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৯শ’ ৫১ মে.টনে। ইলিশের এই উৎপাদন দেশে জিডিপির হার বাড়াতে সহায়ক হয়েছে।
মৎস্য ভবনের সূত্র জানান, ইলিশ ঝাঁক বেঁধে চলাচল করে। প্রতিটি ঝাঁকে ৫০ থেকে ২ হাজার পর্যন্ত ইলিশ থাকে। ইলিশের এই ঝাঁক বেঁধে চলাকে মৎস্য বিজ্ঞানে বলা হয় ‘ফিশ স্কুল’। এবার ফিশ স্কুল থেকে নদ নদীগুলোতে ইলিশের ঝাঁক বেশি যাচ্ছে। জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। তিনি জানান বেশি ওজনের বা বড় ইলিশের সংখ্যা এবার বেশি। গেল বছর জাটকা শিকার রোধে কম্বিং অপারেশনের পর ইলিশ বড় হয়েছে। এবারও কঠোরভাবে জাটকা শিকার বন্ধ করা হবে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ইলিশ আরহিত এলাকাগুলোতে কম্বিং অপরারেশন করা হবে। এ ছাড়াও মৎস্য বিভাগ জাটকা শিকার রোধে সকল ব্যবস্থা নেবে। যাতে আগামী বছরও ইলিশের উৎপাদন বেড়ে যায়। উল্লেখ্য ¯্রর্্েরাতের বিপরীতে চলাচল করা ইলিশ বিশ্বে যত উৎপাদন হয় বাংলাদেশের উৎপাদন তার অন্তত ৭০ শতাংশ। ইলিশে রয়েছে মানব শরীরের জন্য উপকারী ওমেগা ফ্যাটি এসিড। চলতি বছর ইলিশ মাছ ভৌগলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেটর বা জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
এবার সামুদ্রিক জলাশয় ছাড়াও অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে ইলিশ আরোহন বেড়ে গেছে। ইলিশের খাদ্যগ্রহণ অনুযায়ী একেক নদীর ইলিশের স্বাদে তারতম্য ঘটে। পদ্মার ইলিশের স্বাদ সবচেয়ে বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো : পদ্মার শ্যাওলা অন্যান্য নদীর শ্যাওলার চেয়ে ভাল। এই শ্যাওলা ইলিশের বড় খাদ্য। এ ছাড়াও ইলিশের খাবার প্ল্যাংকটন বেশি মেলে চাঁদপুরে মেঘনায়। ব্রহ্মপুত্র নদ, যমুনা ও তিস্তা নদীতে যে ইলিশ ধরা পড়ছে তার স্বাদ পদ্মা ও মেঘনার ইলিশের স্বাদের মতো নয়। বগুড়ার বাজারে মেঘনার ইলিশ বেশি আসে। পদ্মার ইলিশ মেলে কালে ভদ্রে। এবার যমুনার ইলিশও মিলছে। এর স্বাদ পদ্মা মেঘনা ইলিশের মতো নয়। বগুড়ার সুধীজন আবদুস সালাম বাবু বললেন, তিনি যমুনার তীর থেকে ইলিশ কিনে এনেছেন। ইলিশের যে বিশেষায়িত গন্ধ ও স্বাদ আছে তা মেলেনি।