1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

২০২৩ সালের নির্বাচন এবং বাংলাদেশের রাজনীতি

ড. প্রণব কুমার পান্ডে : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

২০২০-২০২১ সালে করোনা অতিমারির তাণ্ডবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ রাষ্ট্র অর্থনৈতিক, সামাজিক, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সূচকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন দেশের সরকার যখন সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ পৃথিবীকে আবার অশান্ত করে তোলে।

এই যুদ্ধের ফলে করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। এই যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে।

অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোজ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সরকারের পক্ষে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ায় এ খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। একই সাথে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবার কারণে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি হওয়ায় দেশে ডলার সংকট এবং এক ধরনের অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। পরবর্তীতে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু শক্ত পদক্ষেপের কারণে সে অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হলেও টাকার অবমূল্যায়ন করতে হয়েছে অনেকবার। অর্থনীতির ডামাডোলের মধ্যে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে একধরনের অস্থিরতা প্রতীয়মান হয়েছে বেশ কয়েক মাস হলো।

দেশে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে সার্চ কমিটির মাধ্যমে, কিন্তু বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা হয়নি। এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলাকালে নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানালেও তারা সাড়া না দিয়ে অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে। এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশন এগিয়ে চলেছে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে থেকে দেশে অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে।  ঠিক একই সাথে সরকারের তরফ থেকে সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। এই অবস্থায় আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহল থেকে ধারণা করা হচ্ছে।

এরইমধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর করেছেন। ভারত সফরে বাংলাদেশের কী প্রত্যাশা ছিল কিংবা কী প্রাপ্তি হয়েছে সে ব্যাপারে বিরোধীদলের পক্ষ থেকে নেতিবাচক তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এই সফরকে সফল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি অগ্রাধিকারের শীর্ষে ছিল। যদিও ধারণা করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে এই চুক্তি সম্পাদিত হবে না। এই চুক্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নেতিবাচক মনোভাবের কারণেই এই চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি গত ১০ বছরের ওপর।

তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক না-থাকাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেছেন।

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে তাহলে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী? এই সফরে বাংলাদেশ এবং ভারত সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন সমঝোতা স্মারক। এছাড়া বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। মূলত দুই দেশের বাণিজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাদের দেশের মধ্য দিয়ে অন্য দেশে পণ্য আমদানি-রফতানির সুযোগ প্রদানের। তবে সেটি এখন পর্যন্ত প্রস্তাব আকারে রয়েছে।

দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতি মাধ্যমে যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে তা হলো, এই সফরটিতে মূলত করোনা পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠে কীভাবে আঞ্চলিক এবং উপ-আঞ্চলিক অঞ্চলগুলোর অর্থনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনা যায় সেই বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। তবে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর সফর ছিল আগামী নির্বাচনে ভারত কীভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে সে বিষয়ে আলোচনা করা।

যেকোনও দেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ক্ষমতাসীন হলে তুলনামূলক ছোট রাষ্ট্রগুলোর রাজনীতিতে অনেক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ তৈরি হতে পারে।  তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কীভাবে ভারত সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে এ বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে এটি সম্পূর্ণভাবে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে বিএনপি শক্ত অবস্থানে থাকলেও তাদের জোটভুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবস্থান এখনও অতটা শক্ত আছে বলে আমার মনে হয় না। ইতোমধ্যে জামায়াতের আমির বিএনপির জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনার শীর্ষে ছিলেন। যদিও তার ঘোষণার পরপরই জামায়াতের অন্য নেতারা মিডিয়ায় জানিয়েছেন, জামায়াত এখনও বিএনপির জোটে রয়েছে।

এতে জামায়াতের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এছাড়া ১০০ আসনে জামায়াতের প্রার্থীর নাম ঘোষণার মাধ্যমে জামায়াত একাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে মর্মে এক ধরনের বার্তা প্রদান করেছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় বিএনপি জোটের সাথে জামায়াতের টানাপোড়েন চলছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে অনাদিকাল থেকে। এটি শুরু হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে। ৯০-এর দশকে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব কিছুটা হলেও কমেছে। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ভারত-বিরোধিতা অস্ত্রটি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবহার করার চেষ্টা শুরু করে। এবারও তার ব্যত্যয় হবে না।  বিএনপির পক্ষ থেকে ভারত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর নীলনকশায় ব্যস্ত রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েক বছর ধরে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করা হলেও বিএনপি আমলের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও ভারতের স্বাধীনতাকামী উলফা গোষ্ঠীর হাতে অস্ত্র প্রদানের সেই অভিজ্ঞতা ভারতকে বিএনপির কাছে আসার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে। এটিও রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারত বিরোধিতার সাথে সাথে বাংলাদেশের রাজনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সাম্প্রদায়িকতা। বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পরিবর্তনের কথা মুখে বললেও এই রাজনৈতিক দলগুলোর মূলে রয়েছে ভারত বিরোধিতা এবং সাম্প্রদায়িকতা। এই গোষ্ঠী ক্ষমতায় থাকাকালে আমরা বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা দেখেছি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশে যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তবে এটাও ঠিক এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও কখনও কখনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব এতে অংশগ্রহণ করছে, যা কখনই কাম্য নয়। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখবার জন্য বদ্ধপরিকর, যা তাদের কাজের মাধ্যমে ফুটে ওঠে।

আওয়ামী লীগ সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানের মূল স্তম্ভ হিসেবে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। যদিও বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে আওয়ামী লীগ ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটতে ব্যস্ত রয়েছে। তবে এই বিষয়টি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

ফলে আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন হতে চলেছে। গত সাড়ে ১৩ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, সেই উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে চলমান রাখতে হলে দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নির্বাচন সরকার পরিবর্তনের একমাত্র হাতিয়ার।

নির্বাচিত সরকার যেমন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করতে পারে, তেমনি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রাতিষ্ঠানিক আকার প্রদান করতে সাহায্য করতে পারে। ফলে জনগণের প্রত্যাশা, ২০২৩ সালে সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যার মাধ্যমে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে। এর জন্য সরকারি এবং বিরোধী দলকে সমঝোতায় আসতে হবে। নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। জনগণের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দূরত্ব ভুলে দেশের এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে এক হয়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সহায়তা করবে।

লেখক: ড. প্রণব কুমার পান্ডে – অধ্যাপক, লোক-প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - রাজনীতি