সাবেক ক্রিকেটার, জাতীয় ক্রিকেট কোচ, সংগঠক, সাংবাদিক, ক্রিকেট লিখিয়ে, জালাল আহমেদ চৌধুরীর পরিচয় অনেক। এখন তিনি সবকিছুর উর্ধ্বে। ঢাকার একটি হাসপাতালে মঙ্গলবার সকালে মারা গেছেন দেশের খ্যাতিমান এই ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব।
বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন জালাল আহমেদ চৌধুরী। কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে ছাড়াও পান। গত বুধবার অসুস্থতা বাড়লে আবার তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তিন দিন আগে তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে, শরীর ফুলে যায় অনেকটাই। অবশেষে শেষ হয়ে গেল তার জীবনের লড়াই।
একসময় তিনি ছিলেন ক্রিকেটার। পরে নাম লেখান ক্রিকেট কোচিং ও সাংবাদিকতায়। দুটোই তার চলেছে সমানতালে। ১৯৭৯ সালে দেশের প্রথম আইসিসি ট্রফি অভিযানে তিনি ও ওসমান খান ছিলেন দলের কোচ। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ী বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতিতে তিনি ছিলেন প্রধান কোচ গর্ডন গ্রিনিজের সহকারী। প্রাথমিক দল গড়েছিলেন তিনিই।
দেশের কয়েক প্রজন্মের অনেক শীর্ষ ক্রিকেটার তার হাতে গড়া। তার লেখনিতে ক্রিকেট কিংবা যে কোনো খেলা পেত ভিন্নমাত্রা।
জালাল আহমেদ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৭ সালে। বেড়ে উঠেছেন আজিমপুর কলোনিতে। ষাটের দশকে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু উদিতি ক্লাবের হয়ে। তিনি ছিলেন মূলত উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। পাশাপাশি কিপিং ও অফ স্পিন বোলিংও করতেন।
পরে প্রথম বিভাগে খেলেন ইয়াং পেগাসাস ক্লাবের হয়ে। পরবর্তীতে ধানমন্ডি ক্লাব, টাউন ক্লাবে খেলেন, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেন রেলওয়ের হয়ে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিসিএসে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করলেও থেকে যান তিনি ক্রিকেটেই। ১৯৭৯ সালে কোচিং কোর্স করে আসেন ভারতের পাতিয়ালা থেকে, যেখানে তিনি প্রথম।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কিছুদিন চাকরি করার পর তার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব দিয়ে। পরে সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোচিং করান আবাহনী, মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, ধানমণ্ডি, ইয়াং পেগাসাস, সাধারণ বীমা, কলাবাগানসহ বিভিন্ন ক্লাবে। কয়েক বছর আগে পর্যন্তও ঢাকার শীর্ষ ক্রিকেটে কাজ করেছেন কোচ হিসেবে।
জাতীয় দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন তিনি বিভিন্ন সময়। এছাড়াও বিসিবির হোম ডেভেলপমেন্ট, ক্রিকেট অপারেশন্স, আম্পায়ার্স কমিটিসহ নানা ভূমিকায় কাজ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে।
তার ক্রীড়া সাংবাদিকতা জীবনের শুরু আশির দশকের শুরুর দিকে নিউ নেশন পত্রিকার হয়ে। এরপর দীর্ঘদিন কাজ করেন টাইমস-এ। ইংরেজি পত্রিকায় কাজ করলেও দারুণ খ্যাতি অর্জন করেন তিনি বিভিন্ন বাংলা পত্রিকায় কলাম লিখে।
২০১১ সালে তার স্ত্রী মারা যান। এরপর থেকে আজিমপুরের ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন তিনি। তার দুই সন্তান থিতু যুক্তরাষ্ট্রে। একটা সময় তিনিও চলে গিয়েছিলেন সেখানে। তবে কিছুদিন পরই চলে আসেন দেশ ও দেশের ক্রিকেটের টানে। এবার চলে গেলেন সব বাঁধন ছিন্ন করে।