কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন বিশ্বের ৪৬টি দেশের কূটনীতিকগণ। পরিদর্শনকালে বিদেশী কূটনীতিকরা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নেতৃত্বে বিদেশী কূটনীতিকরা বুধবার সকালে বিমানে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসেন। সেখান থেকে সড়কপথে বেলা ১২টার দিকে উখিয়ায় পৌঁছান। বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা প্রথমে কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শন করে সেখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন। এই সময়ে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, শিশুরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার কারণ জানান।
বিদেশী কূটনীতিকরা বিশাল রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনেকটা স্থান ঘুরে দেখেন। এই সময়ে রোহিঙ্গারা বলেছেন- ‘রাখাইন রাজ্যে আমাদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। তারা আরো বলেন ‘বিদেশের মাটিতে এভাবে চরম কষ্টের মধ্যে আমরা থাকতে চাই না। আমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই।’ মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে বিদেশী দেশসমূহের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রোহিঙ্গারা।
বিদেশী কূটনীতিকরা বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট সত্যিই ভয়াবহ। তারা নিজ নিজ দেশের কাছে বিষয়টি তুলে ধরবেন।
নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত লিওনি কুয়িল্যানারি রোহিঙ্গা সমস্যাকে ‘মহাদুর্যোগ’ বলে অবহিত করে বলেছেন, তাঁর সরকার ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সাহায্য সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় নেদারল্যান্ড বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন সেদেশের রাষ্ট্রদূত।
থাইল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি চার্জ দ্যা মিশন ক্যারাইচুকি বলেছেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের শুধু আশ্রয় দেয়নি, তাদের জন্য যা করছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।’
অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জুলিয়া নিবল্যাট বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা হিসাবে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ও আইওএম এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার জন্য ইতোমধ্যে ৪০ কোটি ডলার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে অষ্ট্রেলিয়া। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় আমরা বাংলাদেশের পাশে রয়েছি।
মার্কিন দুতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স জুয়েল রিফম্যান বলেছেন, ‘এখানে পরিস্থিতি খুবই খারাপ। রোহিঙ্গারা মানবেতর অবস্থায় রয়েছে। আমি আমার সরকারকে বিষয়টি জানাব।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সমস্যাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছে বাংলাদেশ। আমরা এই সমস্যা সম্পর্কে বিশ্বের সকল দেশকে অবহিত করেছি। আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে বিশ্বের ৪৬ দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক প্রতিনিধিরা আজ উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি এই পরিদর্শনের পর কূটনীতিকরা রোহিঙ্গা সংকটকে ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন। তারা এই বিষয়টি নিয়ে তাদের নিজ দেশের সাথে আলোচনা করবেন, যাতে আজকের পর তারা আরো জোরালো ভাবে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন।’
বিদেশী কূটনীতিক প্রতিনিধিদলে ছিলেন- যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, নরওয়ে, ইইউ, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্পেন, নেপাল, কাতার, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই, সুইজারল্যান্ড, জাপান, সৌদি আরব, প্যালেস্টাইন, মিশর, ইটালী, ওমান, কানাডা, আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, ইরান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, মালদ্বীপ, চায়না, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস প্রতিনিধি।
প্রতিনিধিদলটি দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ও ঘুমধুম ক্যাম্প ঘুরে টেকনাফ সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। বিকালে কক্সবাজার হয়ে তাঁরা ঢাকায় ফিরে যান।