1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বর্তমান তরুণসমাজে উজ্জীবিত হোক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ

ইকবাল হুসাইন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছে অনেকবার, অনেকভাবে। পাকিস্তানি জান্তা সরকার একাধিকবার তাঁর জন্য ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করেছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনি ও তাদের দোসররা তাঁকে হত্যা করেও নিশ্চিন্ত বোধ করেনি। তাঁর লাশ তারা টুঙ্গিপাড়া পাঠিয়ে দেয়, নিষিদ্ধ করে তাঁর ভাষণ, বিবৃতি, ছবি, এমনকি নাম।

তারা জীবিত বঙ্গবন্ধু অপেক্ষা প্রয়াত বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে আরো বেশি ভয় পেত। ফলে পাঠ্যপুস্তক, পত্রপত্রিকা ও সভা-সেমিনারেও বঙ্গবন্ধুকে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু যাঁর অবস্থান কোটি কোটি মানুষের অন্তরে তাঁকে ইতিহাস থেকে উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়। তিনি ইতিহাসের মহানায়ক, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা।

তাঁর প্রগাঢ় দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও অনুকরণীয় আদর্শ তাঁকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির অভিধায় ভূষিত করেছে।

সম্প্রতি আমরা মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি। এ সময় অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং অনিবার্যভাবে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম ও আদর্শ নিয়ে অনেক আলোচনা, লেখালেখি ও প্রচার-প্রচারণা হয়েছে। কিন্তু এই মহামানবের আদর্শ সম্পর্কে আমাদের তরুণসমাজ কতটা জানে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সহায়তায় একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

গবেষণায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট শহরের শীর্ষ ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৫৫ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। উত্তরদাতাদের ৬৮ শতাংশ ছাত্র, বাকি ৩২ শতাংশ ছিলেন ছাত্রী। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসে পরিচালিত সাক্ষাৎকার-জরিপের সব উত্তরদাতাই স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী।

গবেষণা থেকে জানা যায়, ৯০ শতাংশ তরুণ শিক্ষার্থী মনে করেন দেশের স্বার্থে বঙ্গবন্ধু কখনো আপস করেননি। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি তাঁকে স্পর্শ করেনি বলে মনে করেন ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী।

২০ শতাংশ শিক্ষার্থী এ বিষয়ে কোনো মতামত না দিলেও ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বলে জানিয়েছেন। ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশপ্রেম ছিল প্রশ্নাতীত। তবে ২৩ শতাংশ উত্তরদাতা এ বিষয়ে সহমত প্রকাশ করেননি। এ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। ৯৩ শতাংশ তরুণ শিক্ষার্থী এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে, তিনি দরিদ্র ও দুস্থ মানুষের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল ছিলেন। ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী এ বিষয়ে একমত যে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল এসব মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তবে বাকি ১৪ শতাংশের কেউ এ বিষয়ে নীরব ছিলেন, আবার কেউ কেউ ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে, তিনি ছিলেন উদার, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক। তিনি সর্বদা সব ধরনের বৈষম্য, বঞ্চনা ও অসমতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বলে মনে করেন ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা। ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে, তিনি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি নিরঙ্কুশভাবে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। যদিও বাকি ১৮ শতাংশের অনেকে এ বিষয়ে কোনো মতামত দেননি এবং কেউ কেউ এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তাঁর জীবনের ব্রত ছিল এ দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক তথা সার্বিক মুক্তি—এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত ব্যক্ত করেছেন ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।

সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ইতিহাসের নৃশংস ও ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড বলে মনে করেন ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধে আরোপিত ইনডেমনিটি (Indemnity) জঘন্য অপরাধ হিসেবে মতামত দিয়েছেন ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা। মন্তব্য প্রদানে বিরত ছিলেন ৮ শতাংশ এবং বিষয়টির সঙ্গে সহমত ছিলেন না ১ শতাংশ উত্তরদাতা। বঙ্গবন্ধু যদি আরো ১০ থেকে ২০ বছর বেঁচে থাকতেন, তবে বাংলাদেশ আরো অনেক উন্নতি ও সমৃদ্ধি অর্জন করত—এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন ৭৬ শতাংশ তরুণ শিক্ষার্থী। ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী মতামত প্রদানে বিরত ছিলেন এবং ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ওই বক্তব্যের সঙ্গে একমত ছিলেন না। ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, অনেক বছর পরে হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের মাধ্যমে জাতি কলঙ্কমুক্ত এবং দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী এ প্রশ্নের উত্তরদানে বিরত ছিলেন এবং ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ভিন্নমত প্রদান করেছেন। আত্মগোপনে থাকা বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন ৮২ শতাংশ উত্তরদাতা। মতামত প্রদানে নিরপেক্ষ ছিলেন ১৭ শতাংশ এবং এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন ১ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে আমাদের সর্বশেষ প্রশ্ন ছিল বর্বর এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দেশি-বিদেশি মদদদাতা ও ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন করা উচিত কি না? ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এই প্রশ্নের সঙ্গে সহমত ব্যক্ত করেছেন। ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো মতামত প্রদান করেননি এবং ১ শতাংশ শিক্ষার্থী ওই বিষয়ের সঙ্গে একমত নন।

বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি থেকে প্রণীত সাড়া-জাগানো তিনটি বই হচ্ছে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’। এই তিনটি বইয়ের নাম বলতে পেরেছেন ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী দুটি বইয়ের নাম বলতে পেরেছেন। একটি বইয়ের নাম বলেছেন ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু রচিত একটি বইয়েরও নাম বলতে পারেননি। উল্লিখিত তিনটি বইয়ের মধ্য থেকে কমপক্ষে একটি বই পড়েছেন ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু রচিত কোনো বই পড়েননি।

শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম ও আদর্শ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? ৯৮ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, জাতির জনকের দেশপ্রেম তরুণ প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা। বঙ্গবন্ধুর মানবতাবাদকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় বলে মনে করেন ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চিন্তা বর্তমান প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার একটি বড় ক্ষেত্র বলে মনে করেন ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর সততা ও কর্তব্যপরায়ণতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করলে যেকোনো মানুষের জীবন বদলে যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন বঞ্চনা, বৈষম্য ও অসমতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু চরিত্রের এই দিকটিকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় বলে মনে করেন। ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধু যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন তা থেকেও আজকের তরুণসমাজ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে বলে মনে করেন ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।

গবেষণার তথ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে শিক্ষিত ও সচেতন তরুণসমাজের বেশির ভাগই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে। তবে শুধু ধারণায় নয়, বাস্তব জীবনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করা, লালন করা ও চর্চা করা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত এর মাধ্যমেই আমরা নিজেদের যেমন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তেমনি দুর্নীতিমুক্ত, সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিকল্প নেই।

লেখক: ইকবাল হুসাইন – অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - রাজনীতি