উচ্চবিনিয়োগের ব্যয়বহুল একটি শিল্প ইস্পাত খাত। একটা দেশের উন্নয়ন বিবেচনা করা হয় সে দেশের মাথাপিছু ইস্পাত ব্যবহার কত সেটা গণনা করে। বাংলাদেশে বর্তমানে মাথাপিছু স্টিল ব্যবহারের গড় হিসাব করা হয় ৪৫ কেজি। অর্থনীতি বড় হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ করে সরকারিভাবে অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে আগামী দুই বছরে এ চাহিদা বেড়ে ৭০ কেজি ছাড়িয়ে যাবে। দেশে মূলত লৌহ শিল্পের প্রবৃদ্ধি ঘটছে ১৯৯০ সালের পর থেকে। নব্বই দশকে খাতটিতে একে একে বিনিয়োগে এগিয়ে আসেন উদ্যোক্তারা। তখন রডের কাঁচামাল সহজলভ্য করে জাহাজ ভাঙার পুরনো লোহা। শুরুর তিন দশক সনাতন পদ্ধতিতে থাকলেও পণ্যে বৈচিত্র্য আর উৎপাদনে রূপান্তর ঘটিয়ে মূলত ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের ওপর ভর করে বড় হচ্ছে দেশের ইস্পাত খাত।
দেশের শীর্ষ পর্যায়ের উদ্যোক্তারা বলছেন, ইস্পাতের ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে উৎপাদনক্ষমতা। উৎপাদনের তালিকায় একের পর এক যুক্ত হচ্ছে নতুন ও উচ্চশক্তির বিশেষায়িত রড। এজন্য অবশ্য নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও হতে হচ্ছে তাদের। মহামারীতে কারখানাগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় গুনতে হয়েছে বড় অংকের লোকসান। কর্মীদের বেতন পরিশোধে এমনকি ব্যবসা চালু রাখা নিয়েই দুশ্চিন্তা তৈরি হয় উদ্যোক্তাদের। আবার কারখানা চালু রাখলেও অতিমারীতে সম্প্রতি তাদের সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে বিশ্ববাজারে মেল্টিং স্ক্র্যাপের দুষ্প্রাপ্যতা। যদিও বিপর্যয় কাটিয়ে এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের ভারী এ শিল্প খাত।
ইস্পাতপণ্য প্রস্তুতকারক সমিতি ও উদ্যোক্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর আগেও দেশে বছরে সম্মিলিতভাবে এমএস রড উৎপাদন হতো ২৫ লাখ টন। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী বছরে গড়ে উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে প্রায় ৬০ লাখ টন। যদিও বর্তমানে জিপিএইচসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারখানা সম্প্রসারণ পদক্ষেপে ইস্পাতের (রড) সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা এখন ৯০ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। কারখানার সক্ষমতা যে গতিতে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে তাতে আগামী দুই বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালে এক কোটি টনে উন্নীত হবে। আর তখন এমএস রড উৎপাদন বছরে গড়ে ৭০ লাখ টন ছাড়াবে। এ খাতে উদ্যোক্তাদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে প্রায় তিন লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। গত কয়েক বছর সরকারি খাতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও প্রবাসী আয়ে গ্রামে পাকা ঘর নির্মাণ বাড়তে থাকাই ইস্পাত খাতের প্রবৃদ্ধির মূল কারণ। এরই পরেপ্রেক্ষিতে আধুনিক প্রযুক্তি আর কারখানা সম্প্রসারণ করে উৎপাদন বাড়ানোয় মনোযোগ উদ্যোক্তাদের।
দেশের ইস্পাত খাতের কথা বলতে গেলে প্রথমেই নামটি আসে বিএসআরএম গ্রুপের। ১৯৫২ সালে চট্টগ্রামের নাছিরাবাদ শিল্প এলাকায় গড়ে ওঠা ‘ইস্ট বেঙ্গল স্টিল রি-রোলিং মিলস’ স্বাধীনতার পরে নাম বদল করে রাখা হয় বাংলাদেশ স্টিল রিরোলিং মিলস বা বিএসআরএম। কোম্পানিটির প্রথম প্রজন্ম আকবরআলী আফ্রিকাওয়ালার হাত ধরে এ ব্যবসা গোড়াপত্তন। এরপর প্রতিষ্ঠাতা আকবরআলী আফ্রিকাওয়ালার সন্তান ও গ্রুপটির বর্তমান চেয়ারম্যান আলীহোসাইন আকবরআলী কোম্পানির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন প্রায় ৪০ বছর ধরে। উচ্চশক্তির রড তৈরিসহ ইস্পাতের মানোন্নয়নে পরিবর্তনগুলো এসেছে তার হাত ধরেই। তবে বর্তমানে আলীহোসাইন আকবরআলীর সঙ্গে ব্যবসার হাল ধরেছেন তার সন্তান ও গ্রুপের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহুসাইন। দেশের এমন কোনো বড় কিংবা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নেই যেখানে বিএসআরএমের রড ব্যবহার হচ্ছে না। বিএসআরএম গ্রুপের আট কারখানায় এখন বছরে রড উৎপাদনক্ষমতা ১৬ লাখ টন আর বিলেট উৎপাদনক্ষমতা ১৮ লাখ টন। তবে এ দুটোর ক্ষেত্রেই সম্মিলিত উৎপাদনক্ষমতা ৪০ লাখ টনে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বিএসআরএম। প্রায় ৬৮ বছর আগে যাত্রা করা প্রতিষ্ঠানটি শুধু ইস্পাত খাতেই নিজের দক্ষতা আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে। ১৯৮৩ সালেই যুক্তরাজ্য থেকে অটোমেটিক মেশিন এনে মানসম্পন্ন প্রডাক্ট তৈরি শুরু করে বিএসআরএম। পরের বছর উচ্চশক্তির ‘কোল্ড-টুইস্ট স্টিল রড’ দিয়ে এ খাতে পণ্যের বৈচিত্র্য নিয়ে আসে। এরপর ১৯৮৭ সালে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশক্তির ৬০ গ্রেড রড উৎপাদনের প্রথম পদক্ষেপটিও বিএসআরএমের নেয়া। পরবর্তী সময়ে ‘এক্সট্রিম ৫০০ ডব্লিউ’ বাজারে আনে ২০০৮ সালে। ৬০ গ্রেডের চেয়ে আরো বেশি শক্তির এই ৫০০ গ্রেড রড। সুউচ্চ স্থাপনা, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট, টানেল ও বড় ধরনের সেতু নির্মাণে ৮০ গ্রেডের বিএসআরএম ম্যাক্সিমা বাজারজাত শুরু হয় ২০১৫ সালে। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা ও উপকূলীয় এলাকার জন্য লবণাক্ততা ক্ষয়রোধী বিশেষ ধরনের রডও প্রস্তুত করছে বিএসআরএম। দেশের পর আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় কারখানা স্থাপন ও হংকংয়ে ব্যবসার বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে।
বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহুসাইন বলেন, ‘তিন প্রজন্মের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিএসআরএমের ব্যবসায়িক কার্যক্রম। ফলে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতে বাড়তি সুবিধা থাকছেই। পণ্যের মানোন্নয়নই আমাদের বড় লক্ষ্য। ফলে শুরু থেকেই ব্যবসার পরিকল্পনা ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে ইস্পাত খাতকে ঘিরেই। বিএসআরএমের রড অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রফতানিও করছি আমরা। বাড়তি শুল্ককরের বোঝা না থাকলে দ্রুতই অনেক দূর এগিয়ে যাবে দেশের ইস্পাত খাত।’
ইস্পাত খাতের বর্তমানে আরেক বড় জায়ান্ট চট্টগ্রামভিত্তিক আবুল খায়ের গ্রুপ। ১৯৯৩ সালে ঢেউটিন উৎপাদনের মাধ্যমে ফ্ল্যাট ইস্পাতের বাজারে এলেও রড উৎপাদন শুরু করে মূলত ২০০৯ সালে। একেএস ব্র্যান্ড নামেই রড বাজারজাত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির। ইস্পাতের বাজারে দেশে প্রথম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেসে ইস্পাত উৎপাদন শুরু হয় তাদের হাত ধরেই। বছরে আবুল খায়ের গ্রুপের ইস্পাত কারখানায় রড উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ১৪ লাখ টন। বাজার হিস্যা বিবেচনায় নিলে দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিএসআরএমের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অবস্থান পোক্ত করেছে আবুল খায়ের গ্রুপ। দেশে প্রথম টিএমটি (থার্মো মেকানিক্যালি ট্রিটেড) বার বা রড তারাই আনে বাজারে। বিলেট তৈরিতেও দৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় ১২ লাখ টন বিলেট তৈরি করে স্বয়ংসম্পন্ন আবুল খায়ের গ্রুপ।
ইস্পাত খাতের বাজারে তৃতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রামভিত্তিক কেএসআরএম (কবির স্টিল রি-রোলিং মিল) ১৯৮৪ সাল থেকে ইস্পাতপণ্য রড উৎপাদন করে আসছে। কেএসআরএমের মূল উদ্যোক্তা মোহাম্মদ শাহজাহান। প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে সেমি রি-রোলিং মিল দিয়ে ১ লাখ ৫০ টন উৎপাদনক্ষমতা ছিল। ইউরোপের পমিনি প্রযুক্তিতে নিজেদের কারখানার রড উৎপাদনক্ষমতা পরে আট লাখ টনে উন্নীত করেছে। রডের মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেট উৎপাদনও ছয় লাখ থেকে আট লাখ টনে উন্নীত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। কেএসআরএম কারখানা একটি ‘কম্পোজিট স্টিল ফ্যাক্টরি’। এ ধরনের কারখানায় সরাসরি প্রাথমিক কাঁচামাল (স্ক্র্যাপ) থেকে রড উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে গুণগত মান বজায় রেখে আন্তর্জাতিক মানের রড উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে ৩৬৯ মেগা ফিঙেলে ৫৫ লাখ সাইক্লিক লোড সহনশীল রড উৎপাদন করে কেএসআরএম। এছাড়া ইস্পাতের কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করতে পুরনো জাহাজ আমদানিতেও এগিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘পণ্য ক্রয়ে গ্রাহকদের সচেতনতা বেড়েছে। ফলে গুণগত মানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই ইস্পাত উৎপাদন করতে হচ্ছে। বর্তমানে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, ফ্লাইওভারসহ অনেকগুলো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে, যেগুলোর গর্বিত অংশীদার কেএসআরএম স্টিল। ইস্পাতপণ্য আমদানি হওয়া ভারী কাঁচামাল পরিবহনে বন্দর দিয়ে আরো ভালো সেবা প্রত্যাশা করি আমরা। বন্দরে জাহাজজটের মতো আমাদের বেশকিছু সমস্যাও রয়েছে, যেগুলো অ্যাড্রেস করে স্থায়ী সমাধানে যাওয়া জরুরি। এজন্য নতুন জেটি ও টার্মিনাল দ্রুত তৈরিসহ আরো বেশি আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা জরুরি।’
ইস্পাত খাতে বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস নিয়ে এসেছে জিপিএইচ ইস্পাত। এ প্রযুক্তির ব্যবহারে দ্রুত সময়ে সর্বোচ্চ পরিশোধিত রড তৈরি হয়। শিল্পের ধরন, অবকাঠামোর মান, ব্যবহূত প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা দক্ষতার ওপর দূষণের মাত্রা নির্ভর করলেও জিপিএইচ ইস্পাতের কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তিতে এ ক্ষতির মাত্রা খুবই কম। পানির দক্ষ ব্যবহারেও এগিয়ে আছে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের নতুন কারখানা। এখানে বর্জ্য পানি পরিশোধনে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সর্বোন্নত প্রযুক্তি। এ ব্যবস্থায় কোনো বর্জ্য বা দূষিত পানি বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বরং সব বর্জ্য পানি পরিশোধন করে পুনরায় ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য সহায়ক। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরায় নতুন কারখানায় এখন উৎপাদন চলছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালে সীতাকুণ্ডে স্বয়ংক্রিয় কারখানায় ইস্পাত উৎপাদন শুরু করে। তবে স্থানীয় বাজারে নিজের অবস্থান শক্ত হতে থাকলে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি নতুন কারখানাটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। পুরোদমে চালু হলে নতুন, পুরনো কারখানাসহ কোম্পানির বার্ষিক রড উৎপাদনক্ষমতা দাঁড়াবে প্রায় ১০ লাখ টনে। এছাড়া জিপিএইচের পুরনো কারখানায় বার্ষিক বিলেট উৎপাদনক্ষমতা ১ লাখ ৬৮ হাজার টন হলেও সম্প্রসারিত নতুন কারখানায় উৎপাদন হবে ৮ লাখ ৪০ হাজার টন বিলেট। নতুন কারখানায় ৫০০ ডব্লিউ টিমটিবার ও বিভিন্ন গ্রেডের রডের পাশাপাশি সেকশন, অ্যাঙ্গেল, চ্যানেল, এইচ বিম, আই বিমসহ প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড বিল্ডিং নির্মাণের নানা উপকরণ তৈরি হবে। জিপিএইচের পণ্য শীলংকা, চীনসহ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে রফতানি হয়েছে। গত বছর চীনের বাজারে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো বিলেট রফতানির কৃতিত্বও জিপিএইচ ইস্পাতের।
জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘রফতানিকে একটি ভালো জায়গায় নেয়ার একটি বড় পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছি আমরা। নতুন প্রযুক্তিতে অক্সিজেন ব্যবহারের মাধ্যমে স্ন্যাগ ফেলে দিয়ে নিখাদ স্টিল তৈরি করছি। বায়ুদূষণ কমাতে এ প্রযুক্তি খুবই কার্যকর। এছাড়া সাধারণ কারখানায় এক টন ইস্পাতপণ্য তৈরিতে যে বিদ্যুৎ খরচ হয় কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেস পদ্ধতির কারখানায় একই পরিমাণ ইস্পাত বা ইস্পাতপণ্য তৈরিতে খরচ হবে তার অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ। একইভাবে প্রচলিত প্রযুক্তির বিভিন্ন কারখানার তুলনায় জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানায় প্রাকৃতিক গ্যাসের সাশ্রয় হবে। জ্বালানির অপচয় রোধ হলে ব্যবসার ব্যয় কমবে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত, গ্যাসও কম। তাই সবকিছুই বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে। আমদের পদক্ষেপগুলো এমন হওয়া উচিত যেন ২০৪১-এর আগে আমরা উন্নত দেশে রূপান্তর হতে পারি।’
ইস্পাত খাতের ব্যবসা অভ্যন্তরীণ চাহিদা হিসাব করে ধাপে ধাপে কারখানা সম্প্রসারণ করছে আনোয়ার গ্রুপ। খালেদ আয়রন অ্যান্ড স্টিল মিলস লিমিটেড ২০০০ সালে পরিবর্তিত হয়ে যাত্রা করে আনোয়ার ইস্পাত লিমিটেড নামে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে এমএস রড উৎপাদনক্ষমতা বছরে তিন লাখ টন। পাশাপাশি বিলেট উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে আরো ১ লাখ ৯০ হাজার টন। বিদ্যমান সক্ষমতা বাড়ানো লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) বর্তমান সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মানোয়ার হোসেন বলেন, ‘উচ্চব্যয়বহুল একটি শিল্প ইস্পাত খাত। যেখানে বিক্রি বেশি দৃশ্যমান হলেও মুনাফা কম। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ব্যবহারের উপযুক্ত বিশ্বমানের স্টিল উৎপাদন হচ্ছে দেশে। বড় প্রকল্পগুলোতে প্রচুর ইস্পাতপণ্য দরকার হচ্ছে। আগামী ১০ বছর ইস্পাতপণ্যের এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। চাহিদার চেয়ে এখন উৎপাদন সক্ষমতা বেশি আছে। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত উৎপাদনক্ষমতা এখন বার্ষিক ৫৫ লাখ টন ছাড়িয়েছে। কারখানা স্থাপন কিংবা সম্প্রসারণে জ্বালানি, রাসায়নিক ও পানি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছেন উদ্যোক্তারা। স্বাভাবিক সময়ে জাহাজ অপেক্ষমাণ থেকে বাড়তি ক্ষতিপূরণ গুনতে হয় উদ্যোক্তাদের। এতে খরচ বেড়ে অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ছে। করোনার ধাক্কায় ইস্পাতপণ্যের বাজারের ধীরগতি কাটিয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধিতে ফিরবে দেশের ইস্পাত খাত।’