করোনা শনাক্তের জন্য দেশে এতদিন শুধু রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (আরটি-পিসিআর) পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার অনুমতি ছিল। তবে এখন সরকার অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমতি দিচ্ছে। তবে সেটা শুধু সরকারি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্টিজেন টেস্ট ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এছাড়া অ্যান্টিজেন টেস্টে সময় প্রয়োজন হয় ১৫ মিনিট এবং খরচও অনেক কম।
অ্যান্টিজেন টেস্টের সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, অ্যান্টিজেন টেস্ট যেটা আছে, সেটা আমরা এখন সীমিত আকারে করার অনুমোদন দেবো। সেটা হবে আমাদের হাসপাতাল (সরকারি হাসপাতাল) এবং সরকারি ল্যাবগুলোতে। যেখানে আমাদের ল্যাব নাই, সরকারের তত্ত্বাবধানে ভবিষ্যতে আমরা সেখানে অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা করবো। কিন্তু আমরা এখন অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমোদন দেবো না।
অ্যান্টিজেন টেস্ট কী
মানব শরীর থেকে রক্ত নিয়ে তা থেকে প্লাজমা আলাদা করে একটি কিটের মাধ্যমে ভাইরাস শনাক্ত করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যান্টিজেন টেস্ট। আরটিপিসিআর টেস্টে শুধু সোয়াব দিয়ে করোনা শনাক্ত করা হতো এতদিন।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভিএএসইউ) প্যাথলজি এবং প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক, করোনার জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনকারী দলের সদস্য এবং সিভিএএসইউ করোনা টেস্টিং ল্যাবের ইনচার্জ প্রফেসর ড. জুনায়েদ সিদ্দিক বলেন, ‘ভাইরাস শরীরে থাকা মানেই শরীরে অ্যান্টিজেন থাকবে। ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, সেটাও শরীরে থাকে। রোগীর রক্ত পরীক্ষা করলে বোঝা যায় যে অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডিই দুটি আছে কিনা। সহজ করে বলতে গেলে অ্যান্টিজেনটা হচ্ছে ভাইরাস আর অ্যান্টিবডি হচ্ছে ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেওয়ার একটা উপাদান।
প্রফেসর জুনায়েদ জানান, কারও মধ্যে ভাইরাসটি অবস্থান করলে অ্যান্টিজেন টেস্ট পজিটিভ আসবে। অ্যান্টিজেন থাকা মানে সে ভাইরাসে আক্রান্ত।
টেস্টের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শরীর থেকে রক্ত নিয়ে অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়। রক্ত থেকে প্লাজমা আলাদা করা হয়, সেই রক্তরস দিয়ে মূলত পরীক্ষাটি করা হয়। আরটি পিসিআর পরীক্ষায় আমরা সোয়াব টেস্ট করতাম কিন্তু অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুধু রক্ত থেকেই হয়।’
অ্যান্টিজেন টেস্টের সুবিধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অ্যান্টিজেন টেস্টে ধরা যায় শরীরে করোনা ভাইরাস আছে কী নেই। পিসিআর পরীক্ষাতেও তাই জানা যায় কিন্তু তাতে একটু সময় বেশি লাগে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় কোনও মেশিনের প্রয়োজন নেই, শুধু কিট দিয়ে দ্রুত সময়ে নির্ণয় সম্ভব। আর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা মূল্য সাশ্রয়ী। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ফল পাওয়া সম্ভব।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাপক হারে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত এবং করোনার সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিজেন টেস্ট ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ‘অ্যান্টিজেন টেস্টের ফায়দা অনেক। উদাহরণস্বরূপ বলতে গেলে, যেকোনও কারণে জরুরি বিভাগে যদি রোগী আসে, সে সময় যদি আমরা অ্যান্টিজেন টেস্ট করে ফেলতে পারি, তিনি যদি করোনামুক্ত হন তাহলে আমরা তার স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবো। কিন্তু যদি করোনা পজিটিভ হন, তাহলে তাকে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা করতে পারি। এছাড়া আমাদের ট্রেসিং টেস্টিংয়ের জন্য অ্যান্টিজেন পরীক্ষা অবশ্যই প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যখন কোনও এলাকায় অনুসন্ধান করবো, তখন যদি কাউকে সন্দেহ হয়, আমরা তাকে টেস্ট করে যদি পজিটিভ পাই, তাহলে কিন্তু তাকে দ্রুত আইসোলেট করে ফেলা যাবে। তার থেকে রোগ আর অন্যদের ছড়াবে না। সুতরাং আমাদের অ্যান্টিজেন টেস্ট এখন খুব জরুরি। এই টেস্টের মূল্য অনেক কম এবং সময়ও অনেক কম লাগে। ১৫ মিনিটের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। এটি করার জন্য কোনও দামি যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই। একজন রোগীর বাড়িতে বসেই ১৫ মিনিটের মধ্যে বলে দেওয়া যাবে তিনি করোনা আক্রান্ত কিনা। অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করলে আমরা অনেক সুবিধা পাবো।