আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল: “বাসা থেকে বেরিয়ে নির্ধারিত সময়ে কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে যাচ্ছেন, শহরজুড়ে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল ও উঁচু অট্টালিকাগুলোর সাথে পরিকল্পিতভাবে রোপন করা বৃক্ষে প্রকৃতি মিশে আছে, সকলের জন্য নিশ্চিত করা রয়েছে আবাসন ও সুস্বাস্থ্য, টাকা বা দৃশ্যমান মুদ্রা যেন অবিশ্বাস্য, কারণ সকলে লেনদেন করছে ইলেক্ট্রনিকভাবে, যেকোনো সমস্যায় নম্বর ডায়াল করা মাত্র মুহূর্তে পাওয়া যাবে নাগরিক সেবা, প্রতিটি জেলা একেকটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জনপদ, বুলেট ট্রেন ছুটে যাচ্ছে, শতভাগ শিক্ষিতের দেশে বেকার নেই কেউ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ফলে জ্বালানীর উৎস হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎ, সমুদ্রতটে জেগে ওঠা বাংলাদেশের অপর অংশে বসবাসে অনুপ্রাণিত করতে সরকার প্রণোদনা, ভাতা ও বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে, কোন আয়তনের জমিতে কোন শস্য কি পরিমাণে উৎপাদিত হবে তা আগেই নিরূপণ করে দিচ্ছে ই-এগ্রো ডিভাইস, জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার একটি বাংলা। সারা বিশ্ব থেকে ছুটে আসছে পর্যটক। দেশের সৌন্দর্য যেন শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা অপরূপ দৃশ্যের শিল্পকর্ম!”
মাত্র দুই যুগ আগে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল যেমন অবিশ্বাস্য ছিল, তেমনিভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে উল্লেখিত ক্ষুদ্র বর্ণনাটি হয়তো এখন অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, দূরদর্শিতা, দেশপ্রেম এবং নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল নেতৃত্বের ফলশ্রুতিতে রূপকল্প ২০৪১ আমাদের নিয়ে যাবে উন্নয়নের সেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায়।
শেখ হাসিনা আজ বিশ্বে বহুমাত্রিক দ্যূতিতে উদ্ভাসিত অনুকরণীয় এক নেতৃত্ব । পারিবারিক ট্র্যাজেডির কারণে বিশ্বের সেরা যে পরিবারগুলোকে রাজনীতিতে “One Without Equal” বলা হয় তার শীর্ষে অবস্থানকারী নেতৃত্বের নাম শেখ হাসিনা তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। পরিবারের প্রায় সকলকে হারিয়ে তিনি বাংলার জনগণকে আপন করে নিয়েছেন। যারা স্বাধীনতার বিরোধী ছিল, যারা জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল, তাদের এবং তাদের উত্তরসূরীদের সাথে তিনি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে তাকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচারে বিচারকের বিব্রতবোধ। অশ্রু, অভিমান, রাগ, বিরাগ গোপন করে তিনি শুধু এগিয়ে গেছেন আপন লক্ষ্যে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে নৈতিকভাবে অপরাধী হয়ে থাকার কলঙ্ক থেকে মুক্তি দিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক সকল ষড়যন্ত্র ও চাপ উপেক্ষা করে অসাধারণ সহনশীলতার সাথে জাতির পিতার হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। সাদা রঙের উপর কালো প্রিন্টের মোটা শাড়ি পরে ঘোমটা-ঢাকা যে শেখ হাসিনাকে ৮১ সালে “অবলা নারী” বলে কটাক্ষ করা হয়েছিল, সেই তিনি বিশ্বকে হতবাক করে গঙ্গা পানি চুক্তি, শান্তি চুক্তি, সমুদ্র বিজয়, ছিটমহল বিনিময়, নারীর ক্ষমতায়নের মতো জটিল ইস্যুগুলোর সমাধান করে তাঁর নেতৃত্ব আজ সব উচ্চতা ছাড়িয়ে বিশ্বনন্দিত।
কিছুকাল আগেও দরিদ্র বাংলাদেশের বাজেট ছিল সম্পূর্ণভাবে বিদেশী অনুদান ও সাহায্যের উপর নির্ভরশীল এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে সীমিত। শেখ হাসিনা দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ২০০৮-এর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে “রূপকল্প ২০২১” ঘোষণা করেন এবং এই লক্ষ্য যখন কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে এগিয়ে তখন ঘোষণা করেন “রূপকল্প ২০৪১”। তাঁর এই দূরদর্শিতায় অনুপ্রাণিত হয়েছে ভারত (ডিজিটাল ইন্ডিয়া) ও সৌদি আরব (ভিশন ২০৩০) এবং এটি আজ বিশ্বের কাছে মডেল।
সারা বিশ্বে যখন অর্থনৈতিক মহামন্দা চলছে সেই সময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন শেখ হাসিনা যা ছিল চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। কিন্তু তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, একাগ্রতা, সততা, সর্বোপরি দেশপ্রেমের প্রতিফলন ঘটেছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের মাঝে। বৈদেশিক অনুদান নির্ভর বাংলাদেশ আজ স্বনির্ভরতার পথে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতির চাকা । গত ৮ বছরে ৫ কোটির বেশী মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে । অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি । বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকারও বেশী যা জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৪তম এবং ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩২তম । বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার । মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬০২ মার্কিন ডলার । বৈদেশিক বিনিয়োগ ২২৩ কোটি ডলার । রপ্তানী আয় ৩৫ বিলিয়ন ডলার । রেমিটেন্স আয় ১৪.৯ বিলিয়ন । বর্তমানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ৭.২৪ । ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট প্রদান করা হয়েছে । নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরী করে দেখিয়ে দেয়া, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, কর্ণফূলী টানেল, ১০০টি অর্থনৈতিক জোন, উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল (Mass Rapid Transit Line) প্রকল্প, মোট ৪৬.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নতি করণ, ভারত ও মায়ানমার এর কাছ থেকে ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৮ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা অর্জন, ১৬২ টি ছিটমহলের মধ্যে ১১১ টি ই বাংলাদেশের ভূখন্ডের সাথে সম্পৃক্ত করা, পায়রা বন্দর নির্মাণসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের দ্বিগুন হারে বেতন বৃদ্ধি, সরকারের সাথে স্বাধীনতার স্বপক্ষীয় ধর্মীয় দলগুলোর সম্পর্ক উন্নয়ন, বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি, মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের উপাসনালয় নির্মাণ/মেরামত ও সংস্কার করণ । মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা বৃদ্ধিসহ সুবিধাভোগীর সংখ্যা সম্প্রসারণ, ভিজিএফ, কাবিখা, কাবিটা, ১০ টাকা কেজি দরে ৫৫ লক্ষ পরিবারের মাঝে চাল বিতরণসহ বিভিন্ন ধরণের ক্ষুদ্র ঋণ, একটি বাড়ি একটি খামার, কমিউনিটি ক্লিনিক ইত্যাদি, বছরের শুরুতেই ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে বই বিতরণ, শিক্ষা উপবৃত্তি, স্নাতক পর্যন্ত বিনা বেতনে অধ্যায়ন, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজকে সরকারী করণ, দারিদ্র পিড়িত এলাকায় প্রায় ১ কোটি শিক্ষার্থীকে মিড-ডে-মিল প্রদান করাসহ দারিদ্র বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় গৃহীত প্রকল্পের সুবিধা তৃণমূলে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে । ই-গভর্নেন্স, স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অটিজমে আজ বিশ্বে নেতৃত্বের আসনে বাংলাদেশ।
যে জঙ্গিবাদ সারা বিশ্বকে হুমকির মুখে রেখেছে তা মোকাবেলায় সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন শেখ হাসিনা। দু’শর বেশি জঙ্গি ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মুল করা হয়েছে । জঙ্গিবাদ দমনে বিশেষ বাহিনীকে সদা তৎপর রাখাসহ উগ্রবাদীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনতে ও সচেতনতা তৈরিতে যে ভূমিকা রেখেছেন তা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হয়েছে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা সাফল্যের সাক্ষ্য দিচ্ছে। ভারত, চীন, সৌদি আরব, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্স ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে বিশেষত দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে লক্ষণীয় মাত্রায়, যার ফলে বিনিয়োগ ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কিভাবে, কোন উপায়ে এবং বিশ্বের কূটনৈতিক মেরুকরণের সমীকরণে কোন কৌশলে পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হবে তা একটি সরকারের যোগ্যতা ও সাফল্যের অন্যতম মাপকাঠি। গঙ্গা পানি চুক্তি, সমুদ্র বিজয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সফল কূটনীতির ফলাফল। আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে নিঃসন্দেহে তা সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে সাফল্যের বার্তা বহন করছে এবং এর স্বীকৃতি স্বরূপ শেখ হাসিনাকে কখনো মূল্যায়ন করা হচ্ছে বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে, কখনো বুদ্ধিজীবী হিসেবে। ইকোনোমিস্ট, গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং বিশ্বের খ্যাতনামা জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের অগ্রগতিকে বিস্ময়কর উল্লেখ করে ২০৪১ সাল নাগাদ পশ্চিমের উন্নত দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী ফজরের নামাজের সাথে দিন শুরু করেন। দলীয় ও দাপ্তরিক কাজ এবং দলীয় ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে সাক্ষাত শেষ করতে রাত ১১টা পেরিয়ে যায় তাঁর। তারপর আবার বসেন ফাইল নিয়ে, কখনো লেখালেখি করছেন। সম্প্রতি একজন প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘুমান কখন! শেখ হাসিনা রচিত একটি গ্রন্থের নাম “ওরা টোকাই কেন?”; তিনি তার রচনা ভাবনাতেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করেছেন।
মানবিকতার গুণে ঋদ্ধ শেখ হাসিনা মা-কন্যা-বোন-স্বজন, জনতার আপনজন, দলীয় প্রধান, সরকার প্রধান, সফল নীতি নির্ধারক আবার কখনো লেখক, প্রাবন্ধিক ও বুদ্ধিজীবী। তিনি তাঁর বহুমুখী প্রতিভার প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বীকৃত সাফল্য অর্জন করেছেন।
মানবিক গুণাবলী চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর মতো আলোকিত করেছে এই অসাধারণ মানবীকে। তাই অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হওয়া এতিম আসমা, রুনা ও রত্নাদের গণভবনে বিয়ে সম্পন্নের দায়িত্ব নেন, কবি হেলাল হাফিজ, নির্মলেন্দু গুণ বা মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদের চিকিৎসার ভার নেন, বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামনি কিংবা ককটেলে আহত অনীকের মতো অগণিত মানুষের কথা জানা মাত্র চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেন। অন্যায়ে ছাড় দেন না দলের নেতাদেরকেও। শিশু শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের চিঠির জবাব দেয়া, শত ব্যস্ততার মাঝে অসুস্থ কাউকে দেখতে হাসপাতালে উপস্থিত হওয়া কিংবা সকালে টিভিতে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে ফোন করা – এ যেন স্বপ্নের মতো! জনগণের সমস্যার কথা জানা মাত্র ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন, কখনো নিরাপত্তা উপেক্ষা করে জনতার কাছে চলে যাচ্ছেন, বিদেশ সফরকালে অন্যান্য যাত্রীদের হতবাক করে তাদের সাথে মিশে যাচ্ছেন, পরম মমতা নিয়ে খাবার তুলে দিচ্ছেন এতিম কোনো শিশুর মুখে, পা ভেজাচ্ছেন সমুদ্রের নোনা জলে! এ তো আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়!
১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্নের লক্ষ্যে একটি হারানো স্বপ্নকে পুনরুদ্ধার করতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার আবির্ভাব ছিল পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পিতার মতো শেখ হাসিনাও মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রামের পথ বেছে নেন। স্বাধীনতার ৪৬ বছরের ৩০ বছর বাংলাদেশ যাত্রা করেছে উল্টোপথে। তলাবিহীন ঝুঁড়ি থেকে শেখ হাসিনার হাত ধরে দরিদ্র বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে।
মালয়েশিয়ার উন্নয়নের রূপকার বলা হয় মাহাথির মোহাম্মদকে যিনি প্রতিপক্ষের তেমন কোনো বাঁধা ছাড়া দীর্ঘসময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ৭৫-এ পরিবার হারিয়েছেন, ২০০৪ এর ২১ আগস্ট ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও সহযোদ্ধাদের রক্ত দেখেছেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে ১৭ বার হামলা করা হয়েছে তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে। আলোকবর্তিকা হয়ে স্বৈরাচারী শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট জাতিকে মিথ্যার প্রাচীরে গড়ে তোলা বিভীষিকাময় অন্ধকার থেকে তিনি মুক্ত করেছেন। সব হারিয়ে প্রতি পদক্ষেপে ষড়যন্ত্র, বিরোধিতা ও ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে শেখ হাসিনা স্বল্প সময়ে বাংলাদেশকে বিশ্বে যে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তার দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই! দেশের মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে নিবেদিত শেখ হাসিনা স্বাপ্নিক বঙ্গবন্ধুর মতোই মিশে আছেন দেশ ও জনতার সাথে।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখিয়ে দেয়া, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন আর সামাজিক নিরপত্তা বেস্টনীর আওতায় গৃহীত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকল্পের মাধ্যমে তৃণমূল মানুষগুলোর জন্য ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে উন্নয়নের ঊর্ধ্বমুখী পথে শেখ হাসিনা যে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, প্রতিদানে আমরা কি দিচ্ছি! আমাদের আস্থা, ভালোবাসা ও সমর্থন কি তাঁর প্রাপ্য নয়? দেশ ও জনগণের স্বার্থে নিজেকে বিলীন করে দেয়া শেখ হাসিনার প্রতি যদি আমরা আস্থা না রাখি তাহলে বাংলাদেশ আবার যাত্রা করবে উল্টোপথে। জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো কিনা তা নির্ধারণ করতে হবে আমাদেরকেই এবং সেই নির্ধারণী নাম শুধুই জননেত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন আর বেশী দূরে নয় যখন শেখ হাসিনার নীতি ও দর্শন বিশ্ব গবেষণার বিষয়বস্তু হবে, তিনি হবেন শিশু কিশোরদের অনুপ্রেরণার উৎস; “আমি শেখ হাসিনা হবো” ধ্বনিতে আলোড়িত হবে প্রজন্মের হৃদয়। আমি আর আমার সন্তান আমরা গর্ব করে বলবো, আমরা শেখ হাসিনাকে দেখেছি!