বৃষ্টি বা বন্যার পানির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে দেশের সব হাওরসহ নিচু অঞ্চলগুলোয় সাধারণ সড়কের পরিবর্তে উড়ালসড়ক নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (১৮ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বৈঠকের বরাত দিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, হাওর পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়েছে। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, মৎস্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী কথা বলেছেন। বছরে প্রায় পাঁচ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয় ওইসব এলাকায়। কিন্তু ১-৬ এপ্রিলের মধ্যেই ১ হাজার ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই উপর থেকে পানি চলে এসেছে। এর ফলে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। তবে নতুন করে ভারি বৃষ্টি না হলে হাওর ভালো অবস্থায় থাকবে।
উড়াল সড়কের নির্দেশনা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়েছে যে, হাওর এলাকায় কোনো রকমের সাধারণ রাস্তাঘাট এখন থেকে আর করা যাবে না। এখন থেকে হাওরে কোনো সড়ক হলে সেটি এলিভেটেড (উড়াল) হতে হবে। যেন বৃষ্টি বা বন্যার পানি চলাচলে বাধা না আসে। পারটিকুলারলি এটা দেখতে বলা হয়েছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আরো বলেন, সম্প্রতি একনেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প পাস হয়েছে, সুনামগঞ্জের সেই প্রকল্পেও এলিভেটেড হচ্ছে। শুধু হাওর না, নিচু এলাকায় কোনো সড়ক হলে সেগুলো অবশ্যই এলিভেটেড সড়ক করতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সিলেটের পানিটা মূলত নামে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা হয়ে। এখানে যে রাস্তাটা করা হয়েছে মিঠামইন থেকে অষ্টগ্রাম, সেটাতে কোনো ইফেক্ট হলো কিনা, এটাও দেখতে বলা হয়েছে। আমরা নিজেরাও রোডস অ্যান্ড হাইওয়েকে বলেছি, এটা রিভিউ করে প্রতি আধা কিলোমিটার পরপর ১৫০ থেকে ২০০ মিটার ব্রিজ করে দেয়া যায় কিনা, তা দেখতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে যেসব রাস্তা হয়ে গেছে সেখানেও দেখতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের হাওরাঞ্চলে আর্লি ভ্যারাইটি সোয়িং করা যায় কি না, এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে। যেন ১০-১২ এপ্রিলের দিকেই ধান কেটে ফেলা যায়।
বৈঠকের বরাত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, হাওর বা নিচু এলাকায় যেসব বাঁধ দেয়া হয়েছে, সেগুলো ফ্রুটফুল কিনা বা কোয়ালিটি ঠিক আছে কিনা, তা যেন খতিয়ে দেখা হয়। এ বর্ষায় তো আর কিছু করা যাবে না। আগামী বর্ষার আগে যেন এটা রিভিউ করে সংস্কার করা হয়। দেশের যেসব নদী-নালা ও হাওরে অতিরিক্ত পলি পড়েছে, সেগুলোকে পুনর্খনন করতে আগামী বর্ষার আগেই প্রকল্প গ্রহণ করে কাজ শুরুর বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।