হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রভূমি হাটহাজারী মাদ্রাসা অর্থ সংগ্রহে নানা ‘প্রতিবন্ধকতার’ কথা তুলে ধরে ‘বিশাল ব্যয় নির্বাহে’ দেশবাসীর আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছে। আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদ, শিক্ষা পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বুধবার এক ভিডিও বার্তায় এই ‘বিশেষ আবেদন’ জানানো হয়।
ওই ঘটনার পর গত এক সপ্তাহে হেফাজতের কমপক্ষে ১০ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে বিভিন্ন সংহিসতার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পেছনের ঘটনা
এর মধ্যেই শতাব্দী প্রাচীন হাটহাজারী মাদ্রাসার ‘অর্থ সঙ্কটের’ কথা সামনে আনলেন মাদ্রাসা পরিচালনায় সম্পৃক্তরা। অনেকেই বলছেন এটি তাদের নতুন নাটক।
বুধবার সন্ধ্যায় মাদ্রসার ফেইসবুক পেইজ থেকে তাদের ওই ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরীও সেখানে ছিলেন।
পরে এ বিষয়ে পরিচালনা পরিষদের প্রধান মুফতি আব্দুচ্ছালাম চাটগামী স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিও গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
দেওবন্দের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত বাংলাদেশের অন্যতম বড় এবং পুরনো কওমি মাদ্রাসা আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, বর্তমানে এখানে ৮ হাজার শিক্ষার্থী এবং ১০০ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। শিক্ষার্থীদের ৪ হাজার ৭০০ জনের বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মূলত মাদ্রাসা পরিচালনায় জুনায়েদ বাবুনগরীর আর্থিক দুর্নীতি, হেফাজত নেতাদের মামলার ব্যয়ভার বহন ও উপরি কামাইয়ের জন্যই এই ‘ঈদ সালামী’ নাটক সাজিয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহ আহমদ শফীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত একটি পক্ষ দাবী করেন।
একই বিবৃতিতে হাটহাজারী মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ‘কিছু আদর্শচ্যুত ও স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতকারীর’ দেশের ভিতরে এবং দেশের বাইরে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার ‘খবর পাওয়া যাচ্ছে’ বলে দাবি করা হয়।
‘সর্বস্তরের তৌহিদি জনতার’ কাছে আহ্বান জানানো হয়, “যখনই আপনারা শুনবেন আপনাদের প্রিয় এই উম্মুল মাদারিস দুষ্কৃতকারীদের কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে, তখনই আপনারা স্ব স্ব অবস্থান থেকে উম্মুল মাদারিসের সহযোগিতায় তাৎক্ষণিকভাবে এগিয়ে আসবেন।”
কথিত সেই ‘দুষ্কৃতকারীদের’ উদ্দেশে বিবৃতিতে বলা হয়, “ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন। অন্যথায় আল্লাহর ইচ্ছায় ঘৃণিত ও লাঞ্ছিত হয়ে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।”
তবে কারা কী নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে- সে বিষয়ে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।
সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের মধ্যে হাটহাজারী মাদ্রাসা নিয়ে ‘ষড়যন্ত্রের’ এই অভিযোগ এল।
১৯৮৬ সাল থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের (মুহতামিম) দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফী। নেতৃত্বের বিরোধে গত বছরের ১৭ জুন মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের পদ হারান জুনাইদ বাবুনগরী।
১৮ সেপ্টেম্বর মারা যান শফী। নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের জেরে মৃত্যুর একদিন আগে মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে যেতে হয় শফীকে। তার ছেলে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানিকে বহিষ্কার করা হয়।
শফীর মৃত্যুর একদিন পরই মাদ্রাসা পরিচালনায় তিন সদস্যের কমিটি করা হয়; প্রধান শায়খুল হাদিসের পদে ফেরেন বাবুনগরী। এরপর হেফাজতের একপক্ষের বিরোধিতার মধ্যেই বাবুনগরী সংগঠনের আমির হন।
শফীর মৃত্যুর ঘটনায় তার শ্যালকের করা মামলায় পিবিআই গত ১২ এপ্রিল যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে বাবুনগরীসহ ৪৩ জনের ‘দায়’ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
পিবিআই এর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেছেন, আসামিরা ‘বেপরোয়া আচরণের মাধ্যমে’ আহমদ শফীর মৃত্যু ত্বরান্বিত করেছেন।
অন্যদিকে জুনাইদ বাবুনগরী ওই তদন্ত প্রতিবেদনকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, আহমদ শফীর ‘স্বাভাবিক’ মৃত্যু হয়েছে।