কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর সদরের বড়খাঁরচর আদর্শ নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি ইয়াকুব আলীর (৩৫) বিরুদ্ধে নুরানি তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে (১১) বলাৎকারের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। হেফাজতের বিতর্কিত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ডের পর গত ৩ এপ্রিল রাতে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা কুলিয়ারচর উপজেলা সদরে যে তাণ্ডব চালান তার নেতৃত্ব দেন এই মুফতি ইয়াকুব আলী।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ ও ৩১ মার্চ পর পর দুই রাত এই শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটি ভয়ে তা প্রকাশ করেনি। কারণ ঘটনা প্রকাশ না করতে মুফতি ইয়াকুব কোরআন শরিফ ছুঁইয়ে তাকে শপথ করান। এক পর্যায়ে শিশুটি তা প্রকাশ করে দেওয়ার পর এ নিয়ে দুই দিন ধরে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিশুটির পরিবার বলাৎকারের ঘটনায় মুফতি ইয়াকুব আলীর বিরুদ্ধে কুলিয়ারচর থানায় গত বুধবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় মুফতি ইয়াকুব আলী একমাত্র আসামি। তবে পুলিশ তাঁকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এলাকাবাসী জানায়, মুফতি ইয়াকুব উপজেলা হেফাজতে ইসলামের প্রভাবশালী নেতা। তিনি এলাকায় বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত। মাদরাসায়ও তিনি বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন। অবশ্য মামলা দায়েরের পর তিনি গাঢাকা দিয়েছেন। মুফতি ইয়াকুব আলীর বাড়ি পাশের উছমানপুর গ্রামে।
কুলিয়ারচর থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শহীদুর রহমান জানান, নির্যাতিত শিশুটিকে গত ৮ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নূর মোহাম্মদ রফিক জানান, শিশুটি তাঁর কাছে বলাৎকারের ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছে। পরীক্ষায় শিশুটির বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বড়খাঁরচর আদর্শ নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার মাস্টার ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আপনারা যা শুনেছেন আমিও তাই শুনেছি।’ মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়াৎ ফেরদৌসী কালের কণ্ঠকে বলেন, এটি একটি জঘন্য ও ন্যক্কারজনক অপকর্ম। অভিযুক্ত মুফতিকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।