কসম মুখের কাজ। শুধু মনের কাজ নয়। তাই কেউ কোনো কিছুর ইচ্ছা করে মুখে উচ্চারণ করার আগ পর্যন্ত কসম সংঘটিত হবে না। শপথ করা জায়েজ। তবে কথায় কথায় শপথ করা মাকরুহ। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।’
(সুরা : কালাম, আয়াত : ১০)
কসমের পাঁচ সুরত
(১) ওয়াজিব : নিরপরাধ ব্যক্তির প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে শপথ করা ওয়াজিব।
(২) মুস্তাহাব : দুই মুসলমানকে মিলানো বা কোনো মুসলমানকে ক্ষতি থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে শপথ করা মুস্তাহাব।
(৩) মুবাহ বা জায়েজ : কোনো বৈধ জিনিস করা বা ছাড়ার ব্যাপারে শপথ করা জায়েজ। নিজের বৈধ অধিকার হাসিলের জন্য শপথ করাও জায়েজ।
(৪) মাকরুহ : কোনো মাকরুহ কাজ করা বা কোনো মুস্তাহাব কাজ না করার শপথ করা মাকরুহ।
(৫) হারাম : মিথ্যা কথার কসম বা গুনাহে লিপ্ত হওয়া বা কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার শপথ করা হারাম। (আল মুগনি : ৯/৩৮৭-৮৯)
কসম তিন প্রকার
(১) গামুস : অতীত বা বর্তমানকালের কোনো বিষয় সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা কসম খাওয়া। এ ধরনের কসম করা কবিরা গুনাহ। এজাতীয় কসমের কোনো কাফফারা নেই। এর পাপ থেকে নিষ্কৃতির একমাত্র উপায় আল্লাহর কাছে তাওবা ও ইস্তিগফার করা।
(২) মুনআকিদাহ : ভবিষ্যতে কোনো কাজ করা বা না করার ব্যাপারে কসম খওয়া। যদি কসম ভঙ্গ করে তাহলে কাফফারা দিতে হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্থহীন কসমের জন্য তোমাদের দায়ী করবেন না। কিন্তু যেসব কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে করো, সেসবের জন্য তিনি তোমাদেরকে দায়ী করবেন …।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮৯)
(৩) লাগব : লাগব বলা হয়, কসমকারী অতীত বা বর্তমানকালের কোনো একটি বিষয়ে নিজের ধারণা অনুযায়ী সত্য মনে করে কসম করে অথচ বিষয়টি বাস্তবে তার ধারণামাফিক নয়, বরং তার বিপরীত। এই ধরনের কসমের ক্ষেত্রে আশা করা যায় যে আল্লাহ তাআলা পাকড়াও করবেন না। (বাদায়েউস সানায়ে : ৩/১৭)
কসম শুদ্ধ হওয়ার শর্ত
কসম বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো, ‘আল্লাহ’ নাম নিয়ে বা তাঁর গুণবাচক নাম নিয়ে কসম করা। আল্লাহর ইজ্জতের কসম, আল্লাহর মর্যাদার কসম—এজাতীয় শব্দ দ্বারা কসম করা যেতে পারে। কিন্তু আল্লাহর ইলমের কসম, আল্লাহর রাগের কসম, আল্লাহর রহমতের কসম—এজাতীয় কসম শুদ্ধ নয়।
যদি কেউ কোরআনের কসম খায়, তাহলে সেটা কসম বলে বিবেচিত হবে। যদি এইভাবে বলে যে কোরআনের কসম, কালামুল্লাহ কসম অথবা কোরআনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলল, এই কোরআনে যে আল্লাহর কালাম আছে তার কসম, তাহলে কসম হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৫/৪৮৮)
গাইরুল্লাহর নামে কসম
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা জায়েজ নয়। যদি কেউ এজাতীয় কসম করে তাহলে তা কসম হিসেবে গণ্যও হবে না। যেমন—বলল, কাবার কসম, নবীজির কসম, অমুক অলির কসম, মা-বাবার কসম, সন্তানের কসম, জীবন-মৃত্যুর কসম ইত্যাদি। রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ কসম করলে সে যেন আল্লাহর নামে কসম করে। অন্যথায় সে চুপ থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৫৩৪)
অন্যত্র ইরশাদ করেন, যে গাইরুল্লাহর নামে কসম করল সে কুফর ও শিরক করল। (তিরমিজি, হাদিস : ১৫৩৫)
‘আমার জন্য এটা হারাম’ বললে কসম হয়
হালাল জিনিসকে নিজের ওপর হারাম করে কেউ যদি বলে ‘আমার জন্য এটা হারাম’ তাহলে তা কসম বলে গণ্য হবে। (দুররুল মুখতার : ৩/৭৪৩)
গুনাহের কাজের শপথ করলে
গুনাহে লিপ্ত হওয়ার শপথ করলে তা ভেঙে কাফফারা দিতে হবে, তাওবা ইস্তিগফারও করতে হবে। যেমন—কেউ ব্যভিচার করা বা খুন করা বা শরাব পান করার শপথ করল। তাহলে তার শপথ ভেঙে কাফফারা দিতে হবে এবং তাওবা ইস্তিগফার করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৩/১৭)
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যদি আমি কোনো বিষয়ে শপথ করি। অতঃপর আরেকটি বিষয় তার চেয়ে উত্তম পাই তাহলে উত্তম কাজটি করে শপথ ভেঙে ফেলি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৭১৮)
কসমের কাফফারা
কসম পূর্ণ করতে না পারলে কাফফারা ওয়াজিব হবে। কসম ভঙ্গের আগে কাফফারা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে না। বরং কসম ভঙ্গ করার পরই কাফফারা আদায় করতে হবে। কাফফারার দুই পদ্ধতি : (এক) ১০ মিসকিনকে দুই বেলা পেট ভরিয়ে খানা খাওয়ানো।
(দুই) ১০ মিসকিনকে ১০ সেট পোশাক প্রদান করা। এ দুটির যেকোনোটি বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। এর কোনোটিতেই সক্ষম না হলে ধারাবাহিক তিনটি রোজা রেখেও কাফফারা আদায় করতে পারে। (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮৯, দুররুল মুখতার : ৩/৭২৫)
লেখক : মুফতি মুহাম্মাদ ইসমাঈল, মুহাদ্দিস, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।