1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা

জয়ন্ত ঘোষাল : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

অনেক দিন পর আবার তিস্তা প্রসঙ্গ। তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আমাকে যদি কোনো প্রশ্ন করেন, তাহলে কী উত্তর দেব!

তিস্তা চুক্তি করতে ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ। এ ব্যাপারে ভারত সরকার সর্বোচ্চ স্তরে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তিস্তা চুক্তি হবে। তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় গিয়ে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিয়েছেন।

আজ এত বছর পর সেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে কেন আলোচনায় বসছি? স্বভাবতই আপনারা জানতে চাইবেন, তাহলে কি আবার কোনো আশার আলো দেখা দিচ্ছে? এক কথায় এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া আমার পক্ষে খুব কঠিন। তবে তিস্তা চুক্তি যে বাস্তবায়িত হবে না বা অসম্ভব—এ কথা আমি আজও বলতে রাজি নই। তিস্তা চুক্তি অবাস্তব ব্যাপার, এটা যেমন বলছি না, তেমন তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়িত করতে গেলে এখনো আমাদের অনেক কূটনৈতিক স্তর পেরোতে হবে। ভারত ও বাংলাদেশ—এই দুই দেশই যেহেতু সেটা করতে ইচ্ছুক, সে কারণে আমার মনে হয়, তিস্তা চুক্তি একদম হবে না—এ কথা এখনো বলা যায় না। কেননা এটা সম্ভব।

সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন আবার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের কাছে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছেন। শ্রিংলা এ ব্যাপারে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেননি। সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছেন বলেই তিনি জানিয়েছেন।

তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করার দাবি বাংলাদেশ সরকার উত্থাপন করেছে। এমন একটা সময় বাংলাদেশ সরকার আবার এ ব্যাপারে চাপ বাড়াতে শুরু করেছে, সে সময়ের আন্তর্জাতিক পটভূমিটা একঝলকে আমরা দেখে নিই।

‘প্রথমে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র’—এই কথাটা যে ভারত বারবার বলে, সেটা কিন্তু বাংলাদেশকে দিয়ে শুরু হয়। কারণ ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, যেখানে বেশ কিছু কারণে বাংলাদেশের মধ্যে ভারত সম্পর্কে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। আর ভারতবিরোধী যে অসন্তোষ, সেই রাজনৈতিক তাসটা সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করার সুযোগ পেয়ে যায় খালেদা জিয়ার বিএনপি ও জামায়াত গোষ্ঠী। এই বিএনপি ও জামায়াতের বিচ্ছেদ, সেটা অদূর ভবিষ্যতে কেন, সুদূর ভবিষ্যতেও হওয়া সম্ভব নয়। আর এই মুহূর্তে জামায়াতের সঙ্গেও ভারতের বোঝাপড়া হওয়া অসম্ভব।

এই রকম একটা পরিস্থিতিতে মিউনিখে হয়ে গেল খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বৈঠক। সেই বৈঠকে বাংলাদেশ সরাসরি প্রশ্ন তুলল। ভারত, আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে বাংলাদেশ প্রশ্ন তুলেছিল যে চীন যেখানে টাকার থলি নিয়ে বাংলাদেশের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকছে, সেখানে বাংলাদেশ কী করবে? আসলে তারা সব রণকৌশল বুঝতে পারছে।

মিউনিখের বৈঠক হচ্ছে, সেই বৈঠক বাংলাদেশকে কোন পথে চলার কথা বলছে? আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে স্বাধীনতা সড়ক নির্মাণের যে বোঝাপড়া বা প্রতিশ্রুতি, সেটা ভারতের অবিলম্বে পালন করা প্রয়োজন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর, স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের পর সবচেয়ে প্রথম যে সদর দপ্তর হয়েছিল বাংলাদেশের, সেটা হচ্ছে কলকাতায়, আট নম্বর থিয়েটার রোড। অনেক দিন ধরেই ভারত সরকারের সেই বাড়িটা বাংলাদেশকে দেওয়ার কথা। সেই বিষয়টাও এখনো পর্যন্ত ঝুলে রয়েছে। সে ব্যাপারেও খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। অনেক দিন পর এই প্রশ্নগুলোও মাসুদ বিন মোমেন সরাসরি উত্থাপন করেছেন।

সবার আগে বাংলাদেশ যে প্রশ্নটা উত্থাপন করেছে, সেটা হচ্ছে, তিস্তা চুক্তি করতে হবে। তিস্তা চুক্তি অসম্ভব নয়—এই কথা আমি এই জন্য বলছি, সম্পর্ক কিন্তু সব সময় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সামাজিক সম্পর্কের মতোই তো একটা দেশের সঙ্গে আর একটা দেশের সুসম্পর্ক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে যেমন বেশ কিছু ধূলিঝড় সম্প্রতি আমি দেখেছি। সেগুলো নিয়ে এর আগে লিখেছিও। আবার এটাও ঘটনা, তৃতীয়বার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক নিয়ে টেনশন তৈরি হয়েছিল। এখন রাজনৈতিক নৈকট্য অনেক বেড়েছে। এমনকি বিজেপি ও আরএসএস রাজনৈতিকভাবে যখন বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে তখন মমতা সরকার কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের বিরোধিতা না করে ঘটনার বিরোধিতা করেছে। মমতা তখন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষার দাবি তুলেছেন।

সুতরাং অনেক সময় রাজনীতির কারণে পরিস্থিতি বদলে যায়। এটা ভালো কথা যে আরএসএস নেতা রামমাধব ও আরএসএসের মুখপাত্র সিমলায় গিয়ে বাংলাদেশের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে সেই সংখ্যালঘু আক্রমণে হাসিনা সরকারের ভূমিকা নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝি নিরসনের একটা ‘ট্র্যাক টু’ রণকৌশলে পরিবর্তনের চেষ্টা করেছেন। পরস্পর পরস্পরকে বোঝার চেষ্টা করছেন। এগুলো সবই ইতিবাচক।

এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে এটা সর্বশেষ বার্তা, তিনি যে তিস্তা চুক্তি রূপায়িত করতে চান না এবং ভারত সরকারের যে প্রতিশ্রুতি বা দায়বদ্ধতা তার বিরোধিতা করছেন, এমন নয়। এখানে পশ্চিমবঙ্গে যে উত্তরবঙ্গ নামের একটা বিস্তীর্ণ এলাকা, তাতে তিস্তার পানি বাংলাদেশে গেলে পশ্চিমবঙ্গে যে পানি সংকট হবে তার জন্য বিকল্প জলাধার প্রকল্প গড়ার কথা ছিল। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সেখানে কেন্দ্রের কিছু দায়বদ্ধতা ছিল। সেই দায়বদ্ধতা ভারত সরকার পালন করেনি—এমনটাই অভিযোগ মমতা সরকারের।

এবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে যদি ভারত সরকারের সেই বোঝাপড়াটা হয় পশ্চিমবঙ্গে বিকল্প জলাধার প্রকল্প গড়ার বিষয়ে, তাহলে কোনোভাবেই তিস্তার পানি বাংলাদেশে চলে গেলে পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত হবে না। এ বিষয়ে টেকনিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিক থেকে একটা অ্যাশিউর‌্যান্স তৈরি হতে পারে, সেগুলো এখন দেখার বিষয়।

নদীবিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে সামনে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা কমিটি গঠন করেছিলেন। তিনি একটা প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন। সেই প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত হয়নি। সেই প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করা হয়েছিল। যখন মমতাকে সঙ্গে নিয়ে নরেন্দ্র মোদি ঢাকা গিয়েছিলেন, তার পরই সেই প্রতিবেদন তৈরি হয়। সেটা নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব ছিলেন সঞ্জয় মিত্র। এর পরও গঙ্গা ও পদ্মায় অনেক জল বয়ে গেছে। এখনো সেই প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের কোনো আলাপ-আলোচনা আর এগোয়নি। নানা রাজনৈতিক বিতর্ক ও সংঘাতে তিস্তার অগ্রাধিকার লুপ্ত হয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ২০২৪ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী আছেন। তিনি যদি ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে জেতেন, তাহলে আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু ২০২৪-এর আগেই মোদি ও মমতা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন, এমনটা আমার একান্ত আশা।

আমি মনে করি, আগামী দিনে মস্তবড় একটা সংকটের জায়গা হচ্ছে পানি। অনেকে তো বলছেন, চীন যে হিমালয়ের ওপর আক্রমণ শানাচ্ছে, তার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ, আগামী দিনে জলের সংকট আসছে। সেই খবরটা চীন জানে বলেই এই দীর্ঘমেয়াদি রণকৌশলের অঙ্গ হচ্ছে হিমালয় দখল করা। কেননা হিমালয় হলো পানির মস্তবড় উৎস। সুতরাং মূল লড়াইটা কিন্তু পানি নিয়ে হতে চলেছে। চারদিকে পানির সংকট তৈরি হচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, আগামী দিনে তেলের চেয়েও জলের দাম বেড়ে যাবে। জ্যোতি বসু যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন আমরা যদি গঙ্গা চুক্তি করতে পারি, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় তিস্তা চুক্তি কেন অসম্ভব?

লেখক : জয়ন্ত ঘোষাল – নয়াদিল্লিতে কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি। 


সর্বশেষ - রাজনীতি