শেষ পর্যন্ত হেরেই গেলেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে তাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচনের আপিল বোর্ড। শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এফডিসিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান, চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান।
গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল শিল্পী সমিতির নির্বাচন। সেখানে সাধারণ সম্পাদক পদে জয়লাভ করেন জায়েদ খান। এটা ছিল তার টানা তৃতীয়বারের জয়। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নায়িকা নিপূণ অভিযোগ তোলেন, নির্বাচনে দুর্নীতি করেছেন জায়েদ। টাকা দিয়ে ভোটও নাকি কিনেছেন।
এসব অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছিলেন নিপুণ। লিখিত অভিযোগ জানান নির্বাচনের আপিল বোর্ডের কাছেও। এরপরই বোর্ডকে বিষয়টির সুরাহা করার দায়িত্ব দেয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
এজন্য শনিবার বিকালে বৈঠক ডাকে আপিল বোর্ড। এতে নিপূণ অংশ নিলেও জায়েদ ছিলেন অনুপস্থিত। তার অনুপস্থিতিতেই সোহানুর রহমান সোহান ঘোষণা করেন, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জায়েদ খান থাকছেন না। নির্বাচনে অনিয়ম করার অভিযোগে তার প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। তার পরিবর্তে অপর প্রার্থী নিপুণ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।
এ বিষয়ে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান বলেন, “দু’জন ভোটার লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জায়েদ খান ও সদস্য পদপ্রার্থী চুন্নু তাদেরকে ভোট দেয়ার জন্য নগদ অর্থ দিয়েছিলেন। এছাড়া আরও কয়েকজন ভোটার তাদের দু’জনের অর্থ প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এবং কিছু ভিডিও ফুটেজে প্রতীয়মান হয়েছে যে, এই অর্থ প্রদানের অভিযোগটি সত্য।’’
সোহান আরও বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিলে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, ‘এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই প্রার্থীর প্রার্থীতা নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে পারবেন। অভিযোগ পেয়েও বিষয়টি আমলে না নিয়ে নির্বাচন কমিশন প্রধান পীরজাদা শহীদুল হারুণ দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এবং তার পক্ষপাতদুষ্টতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এ বিষয়ে প্রার্থীরা আপিল বোর্ডে অভিযোগ করেন। আমরা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা চাইলে তারা আমাদেরকে চিঠি দেয়। চিঠি মোতাবেক আপিল বোর্ড বিষয়টির তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেয়ে অভিযুক্ত প্রার্থী জায়েদ খান ও চুন্নুর প্রার্থীতা বাতিল ঘোষণা করছে।’
চিত্রনায়িকা নিপুণকে জয়ী ঘোষণা করে সোহান বলেন, ‘জায়েদ খানের প্রার্থীতা বাতিল হওয়ায় অপর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ১৬৩ ভোটপ্রাপ্ত নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করছে। অন্যদিকে কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী চুন্নুর প্রার্থীতা বাতিল হওয়ায় এই পদে ১৭৯ ভোট প্রাপ্ত নাদির খানকে সদস্য পদে নির্বাচিত ঘোষণা করছে।’
জয়ী হয়ে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না নিপুণ। তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন নায়িকা। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “সত্যের জয় হয়েছে। আমার কাছে অনেক প্রমাণ ছিল। আমি অনেকভাবে গিয়েছি পীরজাদার (নির্বাচন কমিশনার) কাছে। তিনি আমাকে সহযোগিতা করেননি। সত্যের জয় হয়েছে। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আর কিছু বলার নেই।”
শিল্পী সমিতির এই নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪২৮ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৩৬৫ জন। তাদের প্রদত্ত ভোটেই নতুন নেতৃত্ব এসেছে সংগঠনটিতে। নির্বাচনে ১৯১ ভোট পেয়ে সভাপতি পদে বিজয়ী হয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মিশা সওদাগর পেয়েছেন ১৪৮ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী জায়েদ খান পেয়েছেন ১৭৬ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী নায়িকা নিপুণ পান ১৬৩ ভোট।
উল্লেখ্য, এর আগে দুই মেয়াদে চার বছর ধরে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন জায়েদ খান। তখন তার সঙ্গে সভাপতি ছিলেন মিশা সওদাগর। সর্বশেষ নির্বাচনে সভাপতি পদে বিজয়ী হয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।