1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা : সরকার কী হারালো আর বিএনপি কী পেলো

মাসুদা ভাট্টি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

যদিও বিষয়টি পুরনো হয়ে গেছে, তবু এ নিয়ে দেশের রাজনীতি এখনও সরগরম, বিশেষ করে বিরোধী রাজনীতি। প্রত্যেক বিরোধী রাজনীতিবিদই প্রতিদিন বলার চেষ্টা করছেন যে এখানেই শেষ নয়, আরও আছে। আর সরকার প্রথম কিছু দিন এ বিষয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিলেও এখন বিষয়টি নিয়ে একদমই আলোচনা করছে না। পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশের এলিট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা র‌্যাব-এর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সে বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করতে চাইছি। আলোচনার শুরুতে আমাদের এ বিষয়টি মনে রাখা জরুরি যে সরকারের বয়স ১৪ বছর এবং আরেকটি নির্বাচন প্রায় আসন্ন। এমতাবস্থায় দেশে সরকারবিরোধী রাজনীতিকে চাঙা রাখা সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। আর সে কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আরও অনেক দিন আলোচনা চলবে।

১/১১-এর সরকার ক্ষমতায় আসার কিছু দিন আগের ঘটনার কথা যদি আমরা স্মরণে আনি তাহলে দেখতে পাই যে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা, বিশেষ করে পশ্চিমা ও শক্তিশালী দেশের রাষ্ট্রদূতরা সে সময় ‘টুয়েসডে ক্লাব’, ‘কফি মর্নিং’ ইত্যাদি ক্লাব করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে আলোচনা এবং সে সময়কার বিএনপি সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করছেন। একই সঙ্গে তারা তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করছেন। কথা বলছেন ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে বিএনপি কর্তৃক নিযুক্ত ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলছেন। প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন।

পরবর্তীকালে প্রকাশিত বইপত্র ও লেখালেখি বিশেষ করে উইকিলিকস-এ প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতদ্বয় এবং জাতিসংঘের তৎকালীন আবাসিক প্রতিনিধি কীভাবে কারসাজি করে বাংলাদেশে একটি অগণতান্ত্রিক সেনাসমর্থিত সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তখনও হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশ থেকে আর সেনা সদস্য না-ও নেওয়া হতে পারে, যদি তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের মদতপুষ্ট ইয়াজউদ্দিন আহমেদ সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করে। ১/১১-এর সময়টি এ কারণে স্মরণ করা আরও জরুরি যে বাংলাদেশকে ঠিক একই জায়গায় ঠেলে নেওয়ার চেষ্টা এখন সব দিক থেকে শুরু হয়েছে। কিছু পুরনো এবং কিছু নতুন রাজনৈতিক খেলোয়াড় মাঠে নেমে দেশের রাজনীতিকে ঠিক ১/১১-এর জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন এবং দীর্ঘ ১৪ বছর দেশ চালানোর পর আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং হুমকি আসছে, যেকোনও সময় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের বিশেষ করে ‘র‌্যাব’-এর সঙ্গে যুক্ত সেনা সদস্যদের নিষিদ্ধ করার জন্য। বোঝাই যাচ্ছে এর পেছনে রাজনীতি রয়েছে, রয়েছে আন্তর্জাতিক চাপ এবং নিঃসন্দেহে বাংলাদেশকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য। এগুলো যেরকমই হোক না কেন, সে প্রসঙ্গ নিয়ে অন্য কোনও সময় আলোচনা করা যাবে কিন্তু এখন শুধু বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ, সরকার হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী রাজনীতির নেতৃত্বে থাকা বিএনপি’র কে কী পেলো সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা যাক।

১/১১-এর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশে বিস্তর ফারাক। তখনকার বাংলাদেশ দাঁড়িয়েছিল একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের কিনারায় এবং দুর্নীতিতে একের পর এক চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেও কুখ্যাতি অর্জন করেছিল। বাংলাদেশে একটি ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী শক্তি ক্ষমতা দখল করায় প্রায় সফল হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের মতো আরেকটি মৌলবাদী রাষ্ট্র প্রায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিল বলা যায়। সেই জায়গা থেকে সরে এসে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর পর বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এক অন্যমাত্রায় দাঁড়িয়ে আছে এবং এ দেশে নিজস্ব ও বিদেশি বিনিয়োগে যেসব মেগা প্রকল্প চলছে তা দক্ষিণ এশিয়ায় অনন্য, যেগুলো প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। ২০২২ সালেই এসব মেগা প্রকল্পের বেশিরভাগই উদ্বোধন করা হবে বলে আমরা জানি।

এমতাবস্থায় যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে র‌্যাব-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এলো তখন অনেকেই ভীত বোধ করেছিলেন, ধরেই নিয়েছিলেন যে সরকার এবার পালাবার পথ পাবে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বিরোধী রাজনীতিবিদ ও তথাকথিত নিরপেক্ষ বিশ্লেষকদের একটি ভীতিকর প্রচারণা, যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই আতঙ্ক ছড়িয়েছিল যে সরকারের আয়ু আর বেশি দিন নেই। সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী এবং নেতানেত্রীদের কারও কারও বিষয়টি নিয়ে এলোমেলো ব্যাখ্যা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া বিভ্রান্তিকে আরও ভিত্তি দিয়েছিল। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি’র নিয়োগ করা লবিস্ট ফার্মগুলোর তালিকা হাজির করা হলো তখন থেকেই বাতাস ঘুরতে শুরু করলো।

লক্ষ করলে দেখবেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যেকোনও সংবাদ বা নিবন্ধের নিচেই মন্তব্যকারীরা এর আগ পর্যন্ত ‘সরকারের দিন শেষ’ জাতীয় উল্লাস প্রকাশ করেছে, কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই মন্তব্যকারীদের অনেকেই বাংলাদেশের ওপর বিদেশি চাপ, চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশকে আমেরিকার দিকে ফেরানোর চেষ্টা এবং এখন একটি বিরাট সংখ্যক মন্তব্যকারী সরাসরি দেশের ক্ষতি করার জন্য বিএনপি তথা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দোষারোপ করা শুরু করেছেন। আমাদের এ কথা কোনোভাবেই ভুলে গেলে চলবে না যে দেশের মানুষ কখনোই বাংলাদেশের ওপর বিদেশি রাষ্ট্রের ‘চাপ’ তথা নিয়ন্ত্রণ মেনে নেয় না, সেটা ১/১১-এর সরকারের ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে তেমনি ১/১১-এর আমলে যে বা যারাই বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশে অ-রাজনৈতিক সরকারকে ক্ষমতায় আনতে সহযোগিতা করেছেন সেসব ‘সুশীলদের’-কে আর ‘পাত্তা’ দেয়নি, অনেক সময় প্রকাশ্যেই অপমান করেছে। বর্তমানে তো বটেই ভবিষ্যতেও দেশের এসব বিখ্যাতজন যে আর আগের মতো সম্মানিত হবেন না সেটা কিন্তু স্পষ্ট হয়ে গেছে। এবং এটা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক।

বিগত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে বিদেশি শক্তি দিয়ে যতবার হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে ততবার সেটি ব্যর্থ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে শুরু করে পদ্মা সেতু, কোথাও কিন্তু এই বিদেশি ‘চাপ’ ধোপে টেকেনি। দুই দু’টি নির্বাচন এ দেশে হয়েছে, যা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেসব নিয়ে বিদেশিদের কথা তোলার সুযোগ দেওয়া হয়নি কিংবা তারা তোলেননি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও এখানে কম হয়েছে বলে মনে করার কোনও কারণ নেই, কিন্তু সেসব নিয়ে গত ১৪ বছর কোনও জোরালো প্রশ্ন ওঠেনি। উপরন্তু হেফাজতের ঢাকা দখলের সেই ভয়ংকর দিনকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল তা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পর বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে বিদেশি সংস্থা ও দেশসমূহের মুখরক্ষা করাটাই ছিল মূল সমস্যা। বিদেশি লবিস্ট কোম্পানির পেছনে মিলিয়ন ডলার খরচ করেও এসব নিয়ে বড় কোনও অর্জন আসেনি।

১৭ কোটি মানুষের বাজারটি নিয়ে বাণিজ্যনির্ভর শক্তিগুলো ব্যস্ত থেকেছে কী করে এই বাজারে প্রবেশ করা যায় এবং কীভাবে এই সক্ষম বাজারটিতে নিজেদের উপস্থিতিকে আরও লাভজনক করা যায় তা নিয়ে। এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও লক্ষ করা গেছে পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের মাঝে, কে কতটা কার্যকরভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নিজের দেশকে যুক্ত করতে পারছেন তা নিয়ে, অন্য কথায় তাদের দেশের কাঁচামাল সরবরাহ করতে পারলেন সেটা নিয়ে। বাংলাদেশ একই সঙ্গে সব পক্ষকে খুশি রাখার চেষ্টা করেছে। চীন-ভারত-রাশিয়াকে কাছে রেখেছে, ইউরোপ-আমেরিকাকেও দূরে রেখেছে বলে প্রমাণ নেই, বরং সবাইকে কমবেশি ‘বাণিজ্য’ দিয়েছে। একটি উঠতি অর্থনীতির দেশ তার সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করবে আর সেখানে দুর্নীতি হবে না সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, দুর্নীতির আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত ধীরে হলেও নিচের দিকে নেমেছে, অর্থাৎ দুর্নীতি কমেছে বলে টিআইবি’র মতো প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যারা একসময় পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন ‘ট্রফি’ দিয়েছিল।

আবারও বলছি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক কিংবা মানবাধিকার সূচকে খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করার কোনও কারণ নেই। কিন্তু তাই বলে হঠাৎ করে বাংলাদেশের একটি বাহিনী নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে, পরিস্থিতি হঠাৎ করে সেই জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে সেটাও মনে করার কোনও কারণ নেই। অর্থাৎ গত ১৪ বছরে যদি এই নিষেধাজ্ঞা না এসে থাকে তাহলে আজকেও এই নিষেধাজ্ঞা আসার কোনও কারণ নেই, যদি না এর পেছনে কোনও রাজনীতি থেকে থাকে। র‌্যাব একদিনে এই অবস্থায় আসেনি, বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে হওয়া ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’-এ ‘নিরাপদ হেফাজতে’ অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা এবং এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া থেকে শুরু করে পরবর্তীতে র‌্যাব গঠন করে তাদের সরাসরি ‘ক্রসফায়ারে’ দীক্ষিত করে তোলার পরও এই বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশ প্রশিক্ষণ দিয়েছে, তাদের রসদ সরবরাহ করেছে। তাদের হাতে ক্রমাগত ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ ঘটনা ঘটলেও এতদিন সেটা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার ছিল কেবল, দেশের ভেতরও প্রতিবাদ হয়েছে, এ নিবন্ধের লেখকও একাধিক লেখায় এই বাহিনীর সমালোচনা করেছে কিন্তু কোনও নিষেধাজ্ঞা আসেনি, এখন আসছে। সরকার বিষয়টি আমলে নিয়েছে বলেই মনে হয় এবং নিশ্চিতভাবেই বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপও নেবে বলে বিশ্বাস করি। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকারবিরোধী রাজনীতির যে বড় ক্ষতিটি হলো সেটা নিয়ে কয়েক লাইন লিখেই আজকের আলোচনার ইতি টানতে চাই।

আমাদের আবারও স্মরণ করা জরুরি যে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বিএনপি’র নেতৃত্বে এ দেশের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি কেবলই বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিচার দিয়েছে, বিচার চেয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া স্বনামে বিদেশি পত্রিকায় কলাম লিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছেন এ দেশের গার্মেন্ট শিল্পে জিএসপি সুবিধা বাতিল করার জন্য। তিনি এ কথা একবারও ভাবেননি যে জিএসপি সুবিধা বাতিল হলে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হবে দেশের বিশাল সংখ্যক নারী শ্রমিকের।

২০০৮ সাল থেকে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়ার সরাসরি প্রভাব পড়েছে এটাই যে পরবর্তীতে তারা আর বিদেশি দূতাবাসের কাউকে একত্রিত করতে পারতেন না, অনেক দূতাবাসই তাদের একজন রাজনৈতিক ‘অ্যাটাসে’-কেও তাদের আয়োজনে পাঠাতো না বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায়। সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপি’র লবিস্ট নিয়োগের যে তথ্য হাজির করা হয়েছে, বোঝাই যায় যে এর জের আরও দূর পর্যন্ত যাবে এবং সরকার যতদিন আছে এ নিয়ে কথার খৈ ফোটাবে। আগেই বলেছি মানুষ এটি ভালোভাবে নেয়নি বা নিচ্ছে না। দেশের মানুষকে সঙ্গে না রেখে বিদেশিদের দিয়ে সরকারের ক্ষতি করতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করে ফেলাটাকে মানুষ ‘সিরিয়াসলি’ নেবে এবং নিচ্ছেও। এর অর্থ হচ্ছে এই যে নিষেধাজ্ঞা যা ইতোমধ্যে এসেছে এবং যা আসবে বলে ভয় দেখানো হচ্ছে, তা আসুক বা না আসুক, এর জন্য সরকারের ক্ষতি কতটুক হয়েছে সেটা নির্ণয়ের সময় এখনও আসেনি, কিন্তু এর জন্য প্রথম ও প্রধান ক্ষতির শিকার বাংলাদেশ এবং দ্বিতীয় প্রধান ক্ষতির শিকার হবে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি। কারণ, তারা পরোক্ষভাবে বিদেশিদের ক্ষমতাকে দেশের মানুষের ক্ষমতার চেয়ে বড় করে দেখেছেন– বিষয়টি দেশের মানুষ স্পষ্টভাবেই বুঝতে পেরেছে। মানুষকে বোকা ভাবা যে রাজনৈতিক দলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর তা ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেও বিএনপি বুঝতে পারেনি– এটা নিঃসন্দেহে অন্য রাজনৈতিক দলের জন্যও একটি শিক্ষা বটে, বিশেষ করে সদ্য জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল এবং তাদের বিদেশনির্ভর নেতাদের জন্য।

লেখক : মাসুদা ভাট্টি -এডিটর ইনচার্জ, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি। masuda.bhatti@gmail.com


সর্বশেষ - রাজনীতি