প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’, ক্যালসিয়াম ও লৌহ সমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি ব্রোকলি। অনেকেই সবুজ ফুলকপিও বলে থাকেন। তবে সাদা রংয়ের ফুলকপির চেয়ে সুস্বাদু ও বেশি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এই সবজির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছেন মেহেরপুরের কয়েকজন কৃষক। পরীক্ষামূলক চাষেই লাভবান তারা। দেশের মানুষের কাছে কিছুটা অপরিচিত ও অপ্রচলিত সবজি হলেও এটি আবাদে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশি মুনাফা পাবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
মেহেরপুরের গাংনীর গাড়াডোব গ্রামের কৃষক জাকারুল ইসলাম জানান, তিনি ফুলকপি আর বাঁধাকপির আবাদ করতেন। এ আবাদ এলাকার সকলেই এক সঙ্গে করায় অনেক সময় লোকসান হতো। পরে স্থানীয় পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি (পিকেএসএফ)’র উদ্যোগে তিনি নতুন সবজি হিসেবে ব্রোকলি আবাদ শুরু করেন। চার বছর আগে তিনি প্রথমে এক বিঘা জমিতে ব্রোকলি চাষ করে লাভ-লোকসানের পার্থক্য করেন। প্রথমে ব্রোকলির বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ বিনামূল্যে প্রদান করে পিএসকেএস নামক ওই সংস্থাটি। তার এক বিঘা জমিতে খরচ বাদ দিয়ে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়। সেই থেকে এখন তিনি ব্রোকলির আবাদ করছেন।
তিনি আরও বলেন, পিকেএসএফ অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থা পিএসকেএস তাদের কৃষি অফিসারের মাধ্যমে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছে ব্রকলি আবাদের। সেই সঙ্গে বীজও সরবরাহ করেন। এ বছর আমি আড়াই বিঘা জমিতে ব্রোকলি চাষ করেছি। এখন বিক্রি মৌসুম চলছে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি অর্ধলক্ষ টাকা লাভ থাকবে বলেও আশা করছি।
সবজি চাষি আবুল কাশেম জানান, একই জমিতে বারবার একই ফসলের চাষ করা যাবে না বলে কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই নতুন সবজি হিসেবে ব্রোকলির বীজ সংগ্রহ করে দশ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ করে গত বছর লাভ পেয়েছি। এ বছর এক বিঘা জমিতে ব্রোকলি চাষ করেছি। বিক্রি শুরু হয়েছে। বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো আশা করছি।
হিন্দা গ্রামের কৃষক শাজাহান আলী জানান, কয়েকজনের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ব্রোকলি আবাদ করেছেন। তবে সাদা রংয়ের ফুলকপির চেয়ে এর রোগ বালাই ও খরচ কম। বাজারেও চাহিদা রয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, প্রতি শতক জায়গায় ২৫-৩০ দিন বয়সের ২০০টি চারা রোপন করে মাত্র ৫০-৬০ দিন পরই ৪০ মণ ব্রোকলি উৎপাদন করা সম্ভব। ব্রোকলি সাধারণত দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতে ভাল হয়। মধ্য ভাদ্র-মধ্য পৌষ এর মধ্যে বীজ বপন ও চারা রোপন করতে হয়। ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপন করতে হয়।
লাশীপাড়া সংস্থার কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা রাব্বি বলেন, রাসায়নিক সারের পরিবর্তে গোবর সার বা কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে ভালো ফলন হয় এবং রোগবালাই কম হয়।
পুষ্টিবিদ জান্নাতুন ফেরদৌস জানান, ব্রোকলি একটি ক্রসিফেরী গোত্রের অন্তর্ভুক্ত শীতকালীন সবজি। এতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট, আঁশ আছে। এতে হৃদরোগ, বহুমূত্র এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ব্রকলি ভিটামিন এ এবং সি সরবরাহ করে কোষের ক্ষতি রোধ করে।
নতুন সবজি ফসলসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করে জেলার কৃষকরা যাতে সাবলম্বী হতে পারে সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে পিএসকেএস। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, মেহেরপুর জেলায় প্রথম ব্রোকলি বীজ নিয়ে আমাদের সদস্যদের মাধ্যমে চাষ শুরু করেছি। যারা ব্রোকলি চাষ করেছেন তারা সকলেই লাভবান হচ্ছেন।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, ব্রোকলি লাভজনক সবজি হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং সবার কাছে সমাদৃত হচ্ছে। কারণ কপি গোত্রের অন্যান্য সবজির চেয়ে ব্রোকলি অপেক্ষাকৃত বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ ও ক্যান্সার প্রতিরোধক। মেহেরপুরের কয়েকজন চাষি ব্রোকলি আবাদ করেছেন। তবে এর তেমন কোনো পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত করা হয়নি। কারণ মেহেরপুরের কিছু কৃষক পরীক্ষামূলক হিসেবে চাষ করছেন। তবে যারা ব্রোকলি চাষ করেছেন তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি সকলেই ভালো ফলন পেয়েছেন এবং লাভবান হচ্ছেন। আমরাও ব্রোকলির চাষ বৃদ্ধির পরামর্শ দিচ্ছি।