সরকারবিরোধী টানা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যেই একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করছেন বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা। এতে বিভিন্ন মহলে চলছে সমালোচনা। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দল। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু দেশের স্বাধীনতা ও সংবিধান নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এর ফলে ব্রিবত বিএনপি বেঁফাস মন্তব্য নিয়ে সিনিয়র নেতাদের সতর্ক করেছে। অযথা গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্যের বিষয়ে সংযত থাকারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার ভাষায় বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ‘বাই চান্স’ বা ‘ভাগ্যক্রমে’ হয়েছে। তাই দেশের সংবিধানও অপরিকল্পিত। গত শুক্রবার ডিআরইউতে এক অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি সেই সংবিধান নতুন করে প্রণয়ন করবে। যারা সংবিধান তৈরি করেছেন, তাদের সংবিধান তৈরি করার কোনো অধিকার ছিল না। একই অনুষ্ঠানে ভাইস আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, এই সংবিধান ছুঁড়ে ফেলা উচিত। বিতর্কিত এমন বক্তব্যে সমালোচনা চলছে সবমহলে।
সিনিয়র নাগরিকরা বলছেন, এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং বিএনপিকে অফিসিয়ালি বক্তব্যের মাধ্যমে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
দুদিন আগে দেশের ১১টি পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, গয়েশ্বর রায় আমাদের স্বাধীনতাকে ‘বাই চান্স’ বলে যে মিথ্যাচার এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। একই অনুষ্ঠানে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু বাহাত্তরের সংবিধান পরিবর্তন করার যে আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছেন তা এ দেশের মানুষ কখনোই গ্রহণ করবে না। বিএনপির এই দুই নেতার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
বিবৃতিতে বলা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এর সঙ্গে কোনোভাবেই ‘বাই চান্স’ শব্দ ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।
এমন ঘটনায় বিব্রত বিএনপি। তারা এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা না বললেও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিনিয়র নেতাদের সতর্ক করেছে দলের হাই কমান্ড। বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক সময়ের আলোকে বলেন, হাই কমান্ড সিনিয়র লিডারদের কথাবার্তায় সংযত হতে বলেছে। সবাই সচেতন হলে আরও সুবিধা করবে দল। অযথা কথাবার্তা বলে অসুবিধায় ফেলানো যাবে না। কথাবার্তায় বড় ধরনের ভুল যাতে না করে ফেলি।
তবে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দাবি করেন, স্বাধীনতাকে ‘বাই চান্স’ তিনি বলেননি। তাকে নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহীমূলক কথা হচ্ছে। সময়ের আলোকে গয়েশ্বর বলেন, আমি এমন কথা বলব কেন? এই কথার আগে ও পড়ে অনেক কথা আছে। স্বাধীনতার পর ভারতসহ বিভিন্ন দেশে সংবিধান পরিবর্তন হয়েছে। জনগণের প্রয়োজনে আমাদের করলে দোষ কি?
তিনি বলেন, সব আন্দোলনে আমি ছিলাম। একসময় ইতিহাস লিখব সমালোচকদের উদ্দেশ্যে। এ বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য জানতে চাইলে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাড়া দেননি।
বছর কয়েক আগেও প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেফাঁস করেন। মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বুদ্ধিজীবীরা নির্বোধের মতো মারা গেছেন বলে তিনি দাবি করেন। তখন ইতিহাসবিদরা এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। গত ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশের আগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানসহ বেশ কয়েকজন নেতা বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়। ১১ ডিসেম্বর ঢাকায় আসবেন তারেক রহমান। এসব বক্তব্যের পর সরকারি দল থেকে নানা সমালোচনা আসে। এতে খোদ বিএনপির সিনিয়র নেতারাও বিরক্ত হন।
প্রায় দুই বছর আগে দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস অনলাইন অনুষ্ঠানে মুখ ফসকে ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনায় নিজের দলের নেতাদের দোষারোপ করে বক্তব্য দেন। তখন তিনি বলেন, ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বাগ্বিতণ্ডা হয় মারাত্মক রকমের। ইলিয়াস খুব গালাগাল করেছিলেন তাকে। সেই যে পেছন থেকে দংশন করা সাপগুলো আমার দলে এখনও রয়ে গেছে। যদি এদের দল থেকে বিতাড়িত না করেন তাহলে কোনো পরিস্থিতিতেই দল সামনে এগোতে পারবে না। সেই ঘটনায় আব্বাসের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল হাই কমান্ড থেকে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর এক সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং আওয়ামী লীগের পরকীয়া প্রেম চলছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এ বক্তব্যের জেরে চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় জামায়াত।